শান্তিগঞ্জের ছয়হাড়ায় এলজিইডির রাস্তার কাজে অনিয়ম

প্রকাশিত: ১১:৪৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৫ 409 views
শেয়ার করুন

দীর্ঘদিন পর নির্মাণ হচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের ছয়হাড়া গ্রামের ভিতরের রাস্তা। ১.৩ কিলোমিটার গ্রামীণ মেঠো পথের উপর দিয়ে দেওয়া হচ্ছে আরসিসি ঢালাই। রাস্তাটির প্রস্ত ১০.৫ ফুট। সম্পূর্ণ কাজের মোট বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ ২০ হাজার ৫৭১ টাকা।

এতো বড় বাজেটে রাস্তাটি নির্মাণ হলে গ্রামবাসীর মনে আনন্দ থাকার কথা থাকলেও সেই আনন্দটুকু মিলিয়ে যাচ্ছে কাজে একাধিক অনিয়মের অভিযোগের মাঝে। স্থানীয়রা বলছেন, রাস্তায় কাজের চুক্তিমত বালু ও পাথর ব্যবহার করা না হওয়ায় কাজের মান নিয়ে থেকে যাচ্ছে নানান রকমের প্রশ্ন। সকলের দাবি, গ্রামের প্রধান এই সড়কের কাজে যেনো কোনো অবস্থাতেই অনিয়মের কালো ছায়া ভর করতে না পারে। যদিও গ্রামবাসীর এই অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন এলজিইডির একাধিক কর্মকর্তা। তারা বলছেন, ওয়ার্ক ওয়ার্ডার অনুযায়ী যে বালু পাথর ব্যবহার করার কথা সেটাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় নির্মাণাধীন সড়কে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তায় কাজের ধুম চলছে। ওয়ার্ক এ্যাসিস্ট্যান্ট মো. ইদ্রিস মিয়ার নের্তৃত্বে ঢালাইয়ের কাজ করে যাচ্ছেন শ্রমিকরা। পাশেই দাঁড়িয়ে রাস্তার কাজ পরখ করছেন ছয়হারা গ্রামের অন্তত ১০ জন যুবক-বৃদ্ধ। তারা জানান, রাস্তায় নির্মাণ কাজে অনিয়মের কথা। বলেন, রাস্তায় প্রথম দিকে কাজ শুরু হওয়ার সময়ও ঠিকাধারী প্রতিষ্ঠান, উপজেলা ইঞ্জিনিয়ারগণ রাস্তার কাজে ত্রæটি করে আসছেন। আমরা এর আগেও অভিযোগ করেছি। এই পর্যায়ে রাস্তার কাজ শুরু করলে আমরা বালু ও পাথরের মান নিয়ে তাদের প্রশ্ন করি।

গত শুক্রবার থেকে কথা বলছি। বালু ও পাথরের মান ভালো না থাকায় রোববার রাস্তার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে। রাস্তায় রাখা বালুগুলো নির্মাণ উপযোগী নয় জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এই বালু পরিবর্তনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছিলো গতকাল। বলা হয়েছিলো অভিযুক্ত বালু সরানো হবে। কিন্তু আজ (সোমরাব) সকাল থেকে বালু না সরিয়ে এই বালু দিয়ে আবারও কাজ শুরু হয়েছে। আমরা বাঁধা দিয়েছি। কিন্তু আমাদের কথা তারা কানে তুলছেন না। বলছেন, যে বালু দিয়ে কাজ হচ্ছে সেগুলো ভালো বালু। আমাদের জানতে ইচ্ছে করে- যে বালু গতকাল রিজেক্ট ছিলো আজ তা কিভাবে ভালো হয়ে গেলো। এ বিষয়ে কথা বললে সাধারণ মানুষকে না বুঝিয়ে একজন উপ-সহকারি প্রকৌশলী এলাকার মানুষের সাথে বাজে আচরণ করেন। আমাদের দাবি, গ্রাম আমাদের, রাস্তাও আমাদের। তাই যেভাবেই হোক- আমাদের গ্রামের রাস্তার কাজের মান যেনো ভালো হয়।

ছয়হারা গ্রামের বাসিন্দা রাসেল মিয়া, জালাল মিয়া, শিমুল মিয়া, সায়েম আহমদ, লিমন মিয়া ও মো. ইমু মিয়া বলেন, আমরা দেখেছি কাগজে লিখা ২.৫ এমএম বালু ব্যবহার করার কথা কিন্তু ব্যবহার করা হচ্ছে তার চেয়ে কম। পাথরও মাপমত ব্যবহার করা হচ্ছে না। আমরা এর আগেও একদিন কাজ বন্ধ রেখেছিলাম। আমাদের দাবি একটাই, গ্রামের প্রধান এই সড়ক পথে যেনো কোনো অনিয়ম দুর্নীতি না থাকে। সুন্দর করে যদি কাজ করা হয় তাহলে ছয়হারা গ্রামের মানুষজন তাদেরকে সহযোগিতা করবেন।

গ্রামের বাসিন্দা ছালিক আহমদ বলেন, এলাকাবাসী হিসেবে আমরা চাই, এলজিইডি যে মেজারমেন্ট করেছে, যে ইট, বালু, পাথর, রড ও সিমেন্টসহ নির্মাণাধীন সামগ্রী কাগজেপত্রে উল্লেখ আছে সেইসব মালামাল দিয়ে টেকসই, মজবুত এবং স্বচ্ছতার সাথে কাজটা হোক।

গ্রামের যুবকদের এই বক্তব্যের সাথে দ্বিমত পোষণ করেছেন এলজিইডির কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, কাগজপত্র অনুযায়ীই এখানে কাজ করানো হচ্ছে। কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। ওয়ার্ক ওয়ার্ডার অনুযায়ী যে বালু পাথর ব্যবহার করার কথা সেটাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির উপসহকারি প্রকৌশলী নাঈম হোসেন বলেন, এখানে আমরা অফিস আদেশ অনুযায়ী কাজ করতে গিয়েছি। কারো সাথে রাগ করে কথা বলা বা খারাপ আচরণ করার তো প্রশ্নই আসে না। যারা এ অভিযোগ তুলেছেন তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আর কাজে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী সাজেদুল আলম বলেন, এই রাস্তার কাজ নিয়ে আমরা অবগত আছি। গতকাল (রোববার) আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি এবং কিছু বালু এই কাজের জন্য রিজেক্ট বা বাতিল করেছি। বালুগুলো অন্যান্য কাজে করা হবে। এজন্য এগুলোকে সাইটে রেখে দিয়েছি। পাশে আরো বালু আছে তার ‘স্যাম্পল’ নিয়ে এসে পরীক্ষা করে দেখেছি এগুলো উপযোগী। তাই এগুলো দিয়ে কাজ হচ্ছে। পাথর যেটা ভালো সেটাই ব্যবহার করা হচ্ছে।

সুনামগঞ্জ জেলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমি বিষয়টি নিয়ে অবগত আছি। আগেও কেউ একজন এ বিষয়ে অভিযোগ করেছিলো। আমি উপজেলা এলজিইডি কর্মকর্তার সাথে কথা বলেছি।