শান্তিগঞ্জে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনা: মা-মেয়ে, চালকসহ নিহত ৩, ঘাতক ট্রাকের চালক আটক
◾ নিহত সবাই ইসকন প্রভুর ভক্ত ◾ এক পরিবারের সবাই চলে গেলেন
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক

সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলায় ট্রাক-সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষে মা-মেয়েসহ ৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হচ্ছেন সুনামগঞ্জ পৌর শহরের উকিলপাড়ার বাসিন্দা, মৃত প্রণয় দাশের স্ত্রী আবাদিত কেশবা (৪০) ও তার মেয়ে সুনামগঞ্জের সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির ছাত্রী প্রথমা চৌধুরী। এই পরিবারের কোনো সদস্যই আর বেঁচে রইলেন না। দু’বছর আগে মারা গেছেন কেশবার স্বামী। এবার মা-মেয়ে। তারা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার নবীপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। অপর নিহত সিএনজি চালক সজল ঘোষ (৫০) শহরের নবীনগর এলাকার বাসিন্দা।
নিহত ৩ জনই ইসকন প্রভুর ভক্ত। এঘটনায় ঘাতক ট্রাকের চালককে আটক করে পুলিশে দিয়েছে স্থানীয় জনতা। আটককৃত চালকের নাম পারভেজ আহমদ (৩০)। সে দিরাই থানার ভাটিপাড়া ইউনিয়নের মৃত জালাল উদ্দিনের ছেলে। তার বর্তমান ঠিকানা সিলেটের বাদামবাগিছায়।
শুক্রবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের শত্রুমর্দন বাঘেরকোনা গ্রামের পুরান বাড়ির সামনে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কে এই দুর্ঘটনাটি ঘটে। ঘটনাস্থলে ২ জন নিহত হলেও পরে মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমা চৌধুরীকে শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হলে হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছেন। রোগী মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ইকবাল হাসান। তিনি বলেন, প্রথমে একজনকে হাসপাতালে নিয়েছেন কিছু লোক। কিন্তু ওই রোগী রাস্তাতেই মারা গিয়েছেন। পরে হাইওয়ে পুলিশ আরো দু’জনকে নিয়ে গিয়েছেন। তারাও মৃত ছিলেন। হাসপাতালে আনার পর কেউ মারা যাননি, আগেই তারা মারা গিয়েছিলেন।
নিহতদের ঘনিষ্টজন গোবিন্দ কুমার দাশ মরদেহগুলো সনাক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, সিএনজি চালক সজল ঘোষসহ নিহত সকলেই ইসকন প্রভুর ভক্ত। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে এসে তাদেরকে দেখেছি। এটা অত্যন্ত লোমহর্ষক ও ভয়ঙ্কর সড়ক দুর্ঘটনা। আমরা এসে ঘটনাস্থলে দু’জনের মরদেহ পেয়েছি। মেয়েটাকে (প্রথমা চৌধুরীকে) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর মারা গেছে। তাদেরকে আমরা চিনি। তারা সকলে আমাদের ইসকন প্রভুর ভক্ত।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকাল ৭টা ১০ মিনিটের সময় সুনামগঞ্জগামী একটি দ্রুত গতির ট্রাক সিলেটমুখী সিএনজিকে বাঘেরকোনা গ্রামের সামনে সরাসরি সজোরে ধাক্কা দিলে দুর্ঘটনাটি ঘটে৷ চালক নেশাগ্রস্ত ছিলো বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয় শাহীন মিয়া ও শাহ আলম জানিয়েছে, আমরা ঘুমে ছিলাম। বিকটশব্দ শুনতে পেয়ে দৌঁড়ে বের হয়েছি। গিয়ে দেখি ট্রাকটি পানিতে পড়ে যাচ্ছে। সিএনজি দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে। ভয়ঙ্কর মৃত্যু হয়েছে। একজনকে হাসপাতালে পাঠিয়েছি। পরে শুনেছি তিনিও নিহত হয়েছেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করেছে শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি টিম। টিম লিডার আলমগীর জানান, খবর পেয়ে আমরা দ্রুত ঘটনাস্থল এসেছি। দু’টি লাশ উদ্ধার করেছি।
জয়কলস হাইওয়ে পুলিশের ওসি সুমন কুমার চৌধুরী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, দুর্ঘটনায় দুজনের লাশ উদ্ধার করেছি। শান্তিগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরো একজন মারা গেছেন। দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও সিএনজি আমারা উদ্ধার করেছি।
শান্তিগঞ্জ থানার ওসি ঘটনার সত্যতা নিশ্চি আবদুল আহাদ জানিয়েছেন, ঘাতক ট্রাকের চালক ও দুর্ঘটনা কবলিত ট্রাক ও সিএনজিকে আমরা আটক করেছি। আইনি প্রক্রিয়া চলমান।