শান্তিগঞ্জের প্রাথমিক শিক্ষার মানোন্নয়নে অনন্য চিন্তা
ইয়াকুব শাহরিয়ার, ইয়াকুব শাহরিয়ার,
নিজস্ব প্রতিবেদক
শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কে দেখলে মনে হবে স্কুলে কোনো শিক্ষার্থীই আসেননি। পীনপতন নিরবতা। অথচ স্কুলের প্রতিটি কক্ষই খোলা। কাছে গিয়ে দেখতেই মনে হলো ক্লাসে শিক্ষক আছেন। আরো কাছে গেলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠলো। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা দিচ্ছেন। প্রধান শিক্ষক আশীষ কুমার চক্রবর্তীকে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, বেসিক নলেজ পরীক্ষা চলছে। শিক্ষার্থীরা গভীর মনোযোগী। এ স্কুলের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির মোট শিক্ষার্থীর প্রায় ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন। উভয় ক্লাসেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে অভিন্ন এক প্রশ্ন প্রত্রের মাধ্যমে। দৃশ্যটি একটি মাত্র স্কুলের হলেও সোমবার সকাল ১০ থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত এমন অবস্থা ছিলো উপজেলার ৯৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশনায় সমস্ত উপজেলার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই পরীক্ষার আয়োজন করে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয়।
এর উদ্দেশ্যও অত্যন্ত চমকপ্রদ! শিক্ষার্থীদের রিডিং ক্যাপাসিপি বৃদ্ধি, বাংলা-গণিত-ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা বৃদ্ধিসহ আরো একাধিক উদ্দেশ্যে নেওয়া হয়েছে এমন পরীক্ষার উদ্যোগ। উপজেলার শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও স্কুল নির্বাচনে এই পরীক্ষা পদ্ধতি কাজে লাগানো হবে। বিদ্যালয়, বিষয় ভিত্তিক শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী ও প্রধান শিক্ষক ক্যাটাগরিতে শতাধিক পুরষ্কার প্রদান করা হবে এই পরীক্ষার মাধ্যমে। এজন্য নির্ধারিত সিলেবাস দেওয়া হয় তিন মাস আগেই। অর্থাৎ সোমবারের এই পরীক্ষার জন্য তিন মাস আগে থেকেই প্রাথমিক শিক্ষা পরিবারে চলে আসছে কর্মযজ্ঞ।

শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা সূত্রে জানা যায়, গত তিন মাস আগে শিক্ষার্থীদের রিডিং ক্যাপাসিপি বৃদ্ধি, বাংলা-গণিত-ইংরেজি ও সাধারণ জ্ঞান সম্পর্কে সম্যক ধারণা বৃদ্ধিসহ নানান ক্যাপাসিটি বাড়াতে অনন্য এ উদ্যোগ নেন শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা। সোমবার সকালে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষায় চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিতে মোট ৫ হাজার ৭৮ জন শিক্ষার্থী অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও বৈরী আবহাওয়া উপক্ষো করে অংশ নেন ৪ হাজার ৪শ’ ৫৯ জন শিক্ষার্থী। যা মোট শিক্ষার্থীর ৮৫ শতাংশ। চতুর্থ শ্রেণিতে উপস্থিতির হার ৮৪ শতাংশ ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৮৬ শতাংশ।
সূত্র জানায়, পরীক্ষায় মেধা তালিকায় স্থান করে নেওয়া প্রতি ক্লাসের ৫০ জন করে শিক্ষার্থীকে পুরষ্কৃত করা হবে। প্রতি বিষয়ে ভালো ফলাফল অর্জন করা স্কুলের সংশ্লিষ্ট বিষয়ে ৫ জন শিক্ষককেও পুরষ্কৃত করা হবে। উপজেলাব্যাপী ভালো ফলাফল অর্জন করা ১০ বিদ্যালয়কে পুরষ্কৃত করা হবে। ৩ জন শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক নির্বাচন করা হবে এই পরীক্ষা থেকে। এভাবে সব ক্যাটাগরিতে শতাধিত পুরষ্কার প্রদান করা হবে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে দুই ধাপে। প্রথম ধাপে ৯০ নম্বরে লিখিত ও দ্বিতীয় ধাপে ১০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা (রিডিং টেস্ট) নেওয়া হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হবে চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহে। তখন পুরষ্কারও প্রদান করা হবে।
পাগলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক অজুদ মিয়া। তিনি বলেন, স্যাররা সুন্দর উদ্যোগ নিয়েছেন। পরীক্ষার আগে বাচ্চারা পড়াশোনা করবে। এমন উদ্যোগ নিলে বাচ্চাদেরই উপকার বেশি হবে। তারা পড়াশোনা করবে। বেসিক নলেজ বাড়বে। এজন্য ইউএনও স্যারকে ধন্যবাদ।
রথপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আশীষ কুমার চক্রবর্তী, সদরপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রুমা রাণী চক্রবর্তী বলেন, এমন উদ্যোগ শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো। এমন উদ্যোগের সাথে থাকতে পেরে আমরাও আনন্দিত।
ইউএনও স্যারের এই উদ্যোগ শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো অনেক কিছুই বয়ে আনবে। আমরা সবাই বিষয়টিকে আন্তরিকভাবে ‘অ্যাপ্রিসিয়েট’ করেছি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, আমাদের এই অঞ্চলে শিক্ষার্থীরা যারা পড়াশোনায় একটু ভালো তারা কিছুটা পারছেন। কিন্তু প্রায় শিক্ষার্থীরা পড়াশোনায় মনোযোগী না। মূলত তাদেরকে মনোযোগী করতে এই উদ্যোগ। আমরা তিন মাস আগে তাদের উপযোগী করে একটি সিলেবাস দিয়েছিলাম। মোট ৪ হাজার ৮শ’ ৫৯ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। কোনো কোনো স্কুল আছে যাদের উপস্থিতি শতভাগ। মোট প্রাপ্ত নম্বরের বিপরীতে শিক্ষার্থীদের মোট সংখ্যা দিয়ে ভাগ করে স্কুলের র্যাংক নির্ধারণ করা হবে। যাদেও অনুপস্থিতি যত বেশি তাদের সম্ভাবনা তত কমে আসবে।


