যেভাবে করোনা জয় করলেন চট্টগ্রামের এক পরিবারের ৫ সদস্য

প্রকাশিত: ৩:০৭ অপরাহ্ণ, মে ৫, ২০২০ 512 views
শেয়ার করুন

চট্টগ্রামে গত ৮ এপ্রিল করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন গারটেক্স গার্মেন্টসের জুনিয়র কমার্শিয়াল ম্যানেজার ওমর আলী (৫০)। তার সেবা করতে গিয়ে স্ত্রী ও ছেলেমেয়েসহ ৬ সদস্যের পরিবারের আরো চারজনও পরে করোনায় আক্রান্ত হন। সবাইকেই ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের একই ওয়ার্ডে। তবে হাসপাতালের নানা বিপত্তিকর পরিবেশসহ বিভিন্ন প্রতিকুলতা জয় করে এই পরিবারের করোনা আক্রান্ত ৫ সদস্যই সুস্থ হয়ে এখন বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু কিভাবে পুরো পরিবারটি প্রাণঘাতি করোনাকে জয় করলো সেই গল্পই জানা গেল ওমর আলীর কাছ থেকে।

সর্বশেষ সোমবার পর পর দুটি নমুনা পরীক্ষায় করোনা উপসর্গ না থাকায় মেয়ে সামান্থা আকতারও হাসপাতালের ছাড়পত্র পেয়েছেন।

ওমর আলী ছাড়াও করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরা পরিবারের সদস্যরা হলেন, ওমর আলীর স্ত্রী শামীমা আকতার (৪২), বড় ছেলে তোফায়েল আহমদ (২৪), মেজো ছেলে হুমায়ুন আহমেদ (২২) ও মেয়ে সামান্থা আকতার (১৮)।

পুরো পরিবার সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন ওমর আলী। গত ৮ এপ্রিল প্রথম হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ওমর আলীকে। তারপর পরিবারের বাকি সদদ্যেরও ঠাই হয় হাসপাতালে।

সুস্থ্য হওয়ার পর ওমর আলী বলেন, আমার পর যেদিন আমার পরিবারের বাকি সদস্যরা করোনা আক্রান্ত হলেন সেদিন আমার মনে হয়েছিল আমরা পুরো পরিবার নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছি। তারচেয়েও বড় দুর্ভাবনা ছিল পরিবারের একমাত্র সুস্থ সদস্য আমার সাড়ে তিন বছরের ছোট মেয়ে ইক্বরা কার জিম্মায় থাকবে? কারণ সে মা ছাড়া একমুহূর্তও কোনোদিন কোথাও থাকেনি। তা ছাড়া যার পরিবারের সবাই করোনা আক্রান্ত তাকে কেই-বা রাখবে?

সেই সময়ে ত্রাতার ভূমিকা নিয়ে আসেন শ্যালক সেলিম। ঝুঁকি জেনেও ইক্বরাকে নিজের জিম্মায় রাখলেন। এদিকে হাসপাতালে তখন পুরো পরিবারের সুস্থ হওয়ার লড়াই। প্রথমেই গত ২২ এপ্রিল সুস্থ হয়ে হাসপাতাল থেকে নগরীর ১২ নম্বর ওয়ার্ডের সরাইপাড়ার বাসায় ফিরলেন ওমর আলী। পরদিনই স্ত্রী ও মেয়ের করোনার নমুনা পরীক্ষায় নেগেটিভ হওয়ার সুখবর পান। কিন্তু ২৬ এপ্রিল আরেকটি নমুনা পরীক্ষায় স্ত্রী ও দুই ছেলের নেগেটিভ আসলেও এবার মেয়ের নমুনার ফলাফল আসে পজিটিভ।

দুশ্চিন্তার মধ্যেও অষ্টাদশী মেয়েকে হাসপাতালে রেখে বাসায় ফেরেন মা ও তাঁর দুই ছেলে। সেই থেকে প্রতিদিনই রূদ্ধশ্বাস প্রতীক্ষা মেয়ের সুস্থতার জন্য। অবশেষে মেয়েও সুস্থ্য হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

তবে এখনই ঘর ছেড়ে বের হবেন না ওমর আলীর পরিবারের সদস্যরা। চিকিৎসকরা নিয়ম মেনে ১৪ দিন হোম কোয়ারেন্টিন করতে বলেছেন পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। আগে ভুল করলেও এবার চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলবেন।

হাসপাতালে চিকিৎসার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেন, শুরুতে খুবই অগোছালো ছিল সবকিছু। সারাদিনে আধালিটারের এক বোতল পানি দিত। করোনা চিকিৎসায় গরম পানি খাওয়া এবং গরম পানি দিয়ে কুলকুচি করা খুবই কার্যকর পদ্ধতি। অথচ সেই গরম পানিই পেতাম না। রোগীদের নিজেদের পানি নিজেরা কিনে আনতে হতো অন্যদের মাধ্যমে। মাত্র দুটি টয়লেট ও একটি বেসিন ছিল প্রায় ৪০ জন করোনারোগীর জন্য। যেখানে সংক্রমণের ভয় ছিল। অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আন্তরিকতায় সুস্থ হয়ে উঠেছি