লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের স্পীকার হলেন জকিগঞ্জের সন্তান
লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান
সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি
ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের নতুন স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সিলেটের জকিগঞ্জের সন্তান। এ প্রাপ্তিতে অভিনন্দন জানিয়েছেন জকিগঞ্জ এসোসিয়েসন ইউকের মেয়র শেরওয়ান চৌধুরী ও আবুল হোসেন।
টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পীকার ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ আগামী ২০২৪-২৫ মিউনিসিপ্যাল ইয়ারের জন্য স্পীকার নিযুক্ত হয়েছেন । ১৫ মে বুধবার সন্ধ্যায় হোয়াটচ্যাপেলস্থ টাউন হল চেম্বারে অনুষ্ঠিত বার্ষিক সাধারণ সভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলারদের ভোটে তিনি স্পীকার নিযুক্ত হন । তিনি সদ্যসাবেক স্পীকার জাহেদ বখত চৌধুরীর স্থলাভিসিক্ত হলেন।
স্পীকার নিযুক্ত হওয়ার পর একান্ত অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ব্যারিস্টার খালেদ তাঁকে নির্বাচিত করার জন্য সকল কাউন্সিলারের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন । তিনি বলেন, টাওয়ার হ্যামলেটসের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী বারার স্পীকার নির্বাচিত হতে পেরে আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করছি । একইসাথে আমি এই সম্মানের জন্য বিনয়াবনত । আমি আমার সকল মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে কাউন্সিলের সিভিক দায়িত্ব যথাযথ সম্মানের সাথে পালনে সচেষ্ট থাকবো । বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের বৃটিশ-বাংলাদেশী ছেলে মেয়েদেরকে বৃটেনের মূলধারা রাজনীতি তথা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হতে উৎসাহিত করতে কাজ করবো।
যেভাবে দায়িত্ব গ্রহণ :
বুধবার সন্ধ্যা ৭ টায় কাউন্সিল চেম্বারে বার্ষিক সাধারণসভা শুরু হয়। প্রথমপর্বে সভাপতিত্ব করেন সদ্যসাবেক স্পীকার কাউন্সিলার জাহেদ বখত চৌধুরী । বিভিন্ন বিষয়ে এসপায়ার পার্টি, লেবার পার্টি, কনজার্ভেটিভ ও গ্রীন পার্টির কাউন্সিলারদের আলোচনা ও বিতর্ক শেষে শুরু হয় নতুন স্পীকার নির্বাচন প্রক্রিয়া । ডেপুটি মেয়র কাউন্সিলার মায়ুম মিয়া তালুকদার নতুন স্পীকার হিসেবে কাউন্সিলার সায়েফ উদ্দিন খালেদের নাম প্রস্তাব করেন । এই প্রস্তাবে সম্মতি প্রকাশ করেন কাউন্সিলার কবির আহমদ । বিরোধীদল লেবার গ্রুপ থেকে কোনো প্রার্থী না থাকায় স্পীকার হ্যা না ভোটে চলে যান । নির্বাহী মেয়র লুৎফুর রহমানের নেতৃত্বাধীন এসপায়ার পার্টির ২৪ কাউন্সিলার, নির্বাহী মেয়র, কনজার্ভেটিভ পার্টি ও গ্রীন পার্টির দুই কাউন্সিলারের ভোটসহ মোট ২৭টি ভোট পড়ে ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ এর পক্ষে। এসময় লেবার পার্টি কোনো বিরোধীতা না করে এবস্টেইন থাকে । হ্যা জয়যুক্ত হওয়ায় সদ্যসাবেক স্পীকার নতুন স্পীকার হিসেবে ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদের নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষনা করেন।
এরপর নবনির্বাচিত স্পীকারকে মঞ্চে আহবান করেন সদ্যসাবেক স্পীকার । তিনি কাউন্সিলার গ্যালারী থেকে মঞ্চে যান । নতুন স্পীকার হিসেবে রেজিস্ট্রি খাতায় সাক্ষর করেন। সাক্ষী হিসেবে স্বাক্ষর করেন প্রস্তাবকারী মায়ুম মিয়া তালুকদার ও প্রস্তাবে সম্মতিদাতা কাউন্সিলার কবির আহমদ এবং কাউন্সিলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। রাত পৌনে ৮টার দিকে স্পীকার জাহেদ চৌধুরী প্রথম পর্বের সমাপ্তি টেনে সাধারণ সভায় বিরতি ঘোষণা করেন।
এরপর তিনি স্পীকারের আসন থেকে নেমে কাউন্সিলারের গ্যালারী এসে বসেন । নবনির্বাচিত স্পীকারকে নিয়ে যাওয়া হয় একটি বিশেষ রুমে। ৫ মিনিট পরে তাঁকে চেইন অব অফিস ও বিশেষ গাউন পরিয়ে নিয়ে আসা হয় চেম্বার্স হলের ভেতরে । হলে প্রবেশের সাথে সাথে একটি বেল বেজে ওঠে এবং সাথে সাথে সম্মান প্রদর্শন করতে চেম্বারে উপবিষ্ট মেয়র কাউন্সিলারসহ অভ্যাগত অতিথিবৃন্দ দাঁড়িয়ে যান । স্পীকার তাঁর আসনে দাঁড়িয়ে সকলকে ‘থ্যাংক ইউ’ বললে সকলে আবারও আসন গ্রহণ করেন । এরপর তাঁর সভাপতিত্বে দ্বিতীয় পর্বের কাজ শুরু হয়। ৯টি এজেন্ডায় কাউন্সিলারগণ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
প্রথম এজেণ্ডায় ভোটাভুটির মাধ্যমে ডেপুটি স্পীকার নির্বাচন করা হয় । নতুন ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হয়েছেন কাউন্সিলার সুলুক আহমদ। এরপর এজেন্ডাভুক্ত অন্যান্য বিষয় আলোচনা শেষে সভার সমাপ্তি ঘোষনা করা হয়। পরে নতুন স্পীকারে আমন্ত্রণে সকলে নৈশভোজে অংশগ্রহণ করেন।
সংক্ষিপ্ত পরিচিতি: ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদ বৃটেনের বাংলাদেশী কমিউনিটিতে অত্যন্ত সুপরিচিত ও সুখ্যাত আইনজীবী । তিনি টাওয়ার হ্যামলেটসের ফিল্ডগেইট স্ট্রিটে অবস্থিত সুনামখ্যাত আইনী প্রতিষ্ঠান ‘কেপিপি ব্যারিস্টার চেম্বার্স” এর প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও। আইনপেশার পাশাপাশি তিনি একজন দক্ষ সংগঠক ও রাজনীতিক । ২০২২ সালের মে মাসে টাওয়ার হ্যামলেটসের ব্রমলী নর্থ ওয়ার্ড থেকে প্রথমবারের মতো কাউন্সিলার নির্বাচিত হোন। এরপর ২০২৩ সালে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিলের ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হয়ে গত এক বছর সফলতার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি স্পীকার নির্বাচিত হলেন।
ব্যারিস্টার সায়েফ উদ্দিন খালেদের দেশের বাড়ি সিলেটের জকিগঞ্জ উপজেলায় । বারোঠাকুরী ইউনিয়নের আমলশীদ গ্রামের বাসিন্দা অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক রফিকুল ইসলাম মাস্টার ও রাবিয়া খানম তাপাদারের সুযোগ্য সন্তান।
ছাত্রজীবনে খুব মেধাবী ছিলেন সায়েফ উদ্দিন খালেদ। তিনি সিলেট সরকারি পাইলট হাই স্কুল থেকে এসএসসি ও সিলেট এমসি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে কৃতীত্বের সাথে অনার্স মাস্টার্স সম্পন্ন করে উচ্চ শিক্ষার্থে ২০০৩ সালে যুক্তরাজ্যে আসেন । ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে এল.এল.বি, ইউনিভার্সিটি অব হাডার্সফিল্ড থেকে এল.এল.এম, ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টমিনস্টার থেকে এল.পি.সি সম্পন্ন করে তিনি সলিসিটর হিসেবে কোয়ালিফাইড হোন ।
২০১১ সালে প্রখ্যাত লিংকন ইন থেকে বার-এট -ল (ব্যারিস্টার) ডিগ্রী অর্জন করেন। বর্তমানে তিনি একজন পাবলিক একসেস ব্যারিস্টার । স্ত্রী সৈয়দা সাইফা খালিক, ছেলে হাসান খালেদ মোস্তফা ও মেয়ে জুমানা খালেদ মোস্তফাকে নিয়ে তাঁর সংসার।