পটিয়াকে ‘রেড জোন’ ঘোষণার পরে ও এখনো কোন ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি

দ্রুত ছড়াচ্ছে সংক্রমনের হার

কাউছার আলম কাউছার আলম

পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ৯:৪৫ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২০ 384 views
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণের ব্যাপকতা বিবেচনায় নিয়ে পটিয়া উপজেলাকে ‘রেড জোন’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। সহসা তা লকডাউন করে দেবে সরকার। রেড জোন ঘোষণার ক্ষেত্রে পটিয়ারর সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ছড়ানোর মাপকাঠিতে উপরের দিকে রয়েছে গোবিন্দরখীল, আল্লাই, মুন্সেফবাজার, পাইকপাড়া, পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকা, পাঁচুরিয়া, সুচক্রদন্ডী, খরনা, কুসুমপুরা, কোলাগাঁও, জিরি, চরকানাই, শোভনদন্ডি, কচুয়াই,পটিয়া পৌরসভার মতো এলাকা।

পটিয়াকে রেড জোন ঘোষণা করলেও লকডাউন শুরু হয়নি এখনো। ফলে ইচ্ছেমতো চলছে সাধারণ মানুষ। ব্যবসা-বাণিজ্য, চলা-ফেরায় কোন রকম প্রতিবন্ধকতা নেই। ফলে অনিয়ন্ত্রিত জীবন যাত্রার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পটিয়ায় কোরোনা ভাইরাসের সংক্রামণ ছড়াচ্ছে ব্যাপকহারে।
পটিয়া উপজেলা বেশি সংক্রমিত হওয়ার কারণ পটিয়ায় মানুষগুলো বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ব্যাংকের চাকরি করায়। যার কারণে পটিয়া ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের ঝুঁকিপূর্ণ জেলা উপজেলাগুলোতে পটিয়ার মানুষ রয়েছে। যার কারণে চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর মধ্যে পটিয়া উপজেলা বেশি সংক্রমিত এবং রেডজোন হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

পটিয়া রেড জোনের আওতায় আসার কারণ হচ্ছে একদিনে সর্বোচ্চ ৫২ জনের করোনা পজেটিভ আসে শুধুমাত্র পটিয়া উপজেলায়। যা অন্য উপজেলা তুলনায় অনেক বেশি। পটিয়াসহ ৯টি উপজেলাকে রেডজোন ঘোষণা করেছেন চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন। তন্মধ্যে পটিয়া উপজেলা সংক্রমণের দিক দিয়ে সর্বোচ্চ।

পটিয়ায় করোনা আক্রান্তে- প্রতিবন্ধী, শিশু, বৃদ্ধ-যুবক-কিশোর নারীসহ আরো অনেকেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। যা অন্যান্য উপজেলার চেয়ে অনেক বেশি।

পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ২ এপ্রিল হতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের বিস্তার ছড়িয়ে পড়ায় এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সপ্তাহের শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালে ১১০ নম্বর রুমের ফ্লু কর্নারে আসা রোগীদের রোগের ধরনের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের নির্দেশনায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন। ইতোমধ্য সেই দুইজন টেকনোলজিস্টের করোনা পজিটিভ হওয়ায় তারা আইসোলেশনে আছেন।

পটিয়া হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, নমুনা দেওয়ার জন্য রোগীদের নির্দিষ্ট সময় বলে দেই- যেন তারা আগে এসে ভিড় না জমান। কিন্তু ভোরে ভোরে রোগীরা হাসপাতালে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে নেগেটিভ ব্যক্তিরাও পজিটিভ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন।

কোন ধরনের নির্দিষ্ট বুথ না থাকায় হাসপাতালের বাইরের খোলা আকাশের নীচে নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে। একমাত্র মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দেবাশীষ বড়ুয়া সাজুর করোনার উপসর্গ দেখা দিলেই নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখাও হয়। পরে পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনোলজিস্টের সহায়তায় সাপ্তাহিক তিন দিন করে নমুনা সংগ্রহ চলছে।

উপজেলার ল্যাব টেকনোলজিস্ট করোনা আক্রান্ত হওয়ায় পার্শ্ববর্তী চন্দনাইশ উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ল্যাব টেকনোলজিস্টের সহায়তায় সাপ্তাহিক তিনদিন করে সন্দেহভাজনদের নমুনা সংগ্রহ করছেন। যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম। প্রতিদিন নমুনা সংগ্রহ করা না হলে পটিয়ায় সংক্রমনের তীব্রতা বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এ যদি অবস্থা হয় তাহলে কোনভাবেই সংক্রমণ কমিয়ে আনা সম্ভব হবে না।

করোনা উপসর্গে পটিয়ার এক গরিবের ডাক্তারখ্যাত চিত্তরঞ্জন নাথ (৬৬) নামে পল্লী সিকিৎসক মারা যান। গত (৪ জুন) চেম্বারে রোগী দেখার সময় শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা দেখা দিলে তাকে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। (৭ জুন) সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর তার করোনার নমুনা সংগ্রহ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। পরে তার নমুনায় পজেটিভ আসে। এদিকে, তাঁর সংস্পর্শে আসা পটিয়ায় সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

করোনা ভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার সন্দেহভাজন পটিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারহানা জাহান উপমাসহ ৮১ জনের রিপোর্ট দীর্ঘ এক সপ্তাহের বেশি সময় আটকে রয়েছে ঢাকায়। নমুনা সংগ্রহের এক সপ্তাহ পার হলেও রিপোর্ট না পাওয়ায় দুশ্চিন্তায় সংশ্লিষ্টরা।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, পটিয়ার বিভিন্ন এলাকা থেকে গত ৭ জুন ২৬ জন ও ৮ জুন ৫৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ৮১ জনের নমুনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পক্ষ থেকে চট্টগ্রামের বিআইিটিআইটি ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে জট লেগে যাওয়ায় বিআইটিআইটি কর্তৃপক্ষ ঢাকার ল্যাবে পাঠিয়ে দেয় নমুনাগুলো। এক সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও উক্ত রিপোর্টগুলো প্রকাশ করা হয়নি।

হুইপ আলহাজ্জ্ব সামশুল হক চৌধুরীর তত্ত্বাবধানে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ কমপ্লেক্সের করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিদের জন্য চালু করা হয়েছে ২০ শয্যা আইসোলেশন সেন্টার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের তৃতীয় তলায় পুরুষ ওয়ার্ডকে আইসোলেশন সেন্টার হিসেবে ব্যবহার করা হয়। করোনা আক্রান্ত আইসোলেশন ওয়ার্ডে এই পর্যন্ত ৭ জন পুলিশ সদস্যসহ মোট ১৩ জন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরি তৎপরতায় মানুষকে যেভাবে সমাগম থেকে দূরে রাখা হয়েছে, এখন তা ধরে রাখাটাও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। লকডাউন শীতল করার কারণে সাধারণ মানুষকে সমাগম থেকে দূরে রাখা প্রায় অসম্ভব হয়ে উঠেছে। উপজেলায় সেনাবাহিনীর কঠোর পদক্ষেপ না থাকলেও প্রতিদিন বিকেলে তাদের কমবেশি টহল দেখা যায়।

উল্লেখ্য, পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ পর্যন্ত মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২৩৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ১৩৫ জন। মারা গেছেন ৫ জন।