স্বাধীনতা ও মুক্তির সূত্র ছিলো ৬ দফা

প্রকাশিত: ৬:৩৮ অপরাহ্ণ, জুন ৭, ২০২০ 722 views
শেয়ার করুন

আমরা জানি সূত্র ধরে অংক না করলে সারা জীবনে ও অংক হয় না মার্ক ও পাওয়া যায় না ফলাফল (রিজাল্ট) ও আসে না . তাই সূত্রটি হচ্ছে আসল কথা সূত্র ধরে অংক করলে সহজেই অংক ও হয় ফলাফল ও আসে কৃতিত্ব আসে এটি সর্ব মহলে স্বীকৃত ও চিরন্তন সত্য কথা তাই আমাকে যদি কেহ প্রশ্ন করেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মক্তির সূত্র কি ছিলো ? সহজ উত্তর হবে আমার এক কথায় ” ৬ দফা ” ।

ঐতিহাসিক ছয়-দফা দিবস আজ, ১৯৬৬ সালের ৭ জুন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত বাঙালি জাতির মুক্তির সূত্র বা সনদ এই ৬-দফা দাবির পক্ষে দেশব্যাপী তীব্র গণআন্দোলনের সূচনা হয়।

এই দিনে আওয়ামী লীগের ডাকা হরতালে টঙ্গি, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে পুলিশ ও ইপিআর’র গুলিতে সিলেটের বিয়ানী বাজারের মনু মিয়া, শফিক ও শামসুল হক সহ ১১ জন বাঙালি শহীদ হন। এরপর থেকেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আপোষহীন সংগ্রামের ধারায় ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের দিকে এগিয়ে যায় পরাধীন বাঙালি জাতি। পরবর্তী সময়ে ঐতিহাসিক ৬-দফাভিত্তিক নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনই ধাপে ধাপে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে পরিণত হয়।

পাকিস্তানি শাসন-শোষণ বঞ্চনা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আইয়ুব খান সরকারের বিরুদ্ধে নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সভাপতি নবাবজাদা নসরুল্লাহ খানের নেতৃত্বে লাহোরে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে ডাকা বিরোধী দলীয় এক জাতীয় সম্মেলন আহ্বান করা হয় ১৯৬৬ সালের ৫ ই ফেব্রুয়ারী । শেখ মুজিবুর রহমান এদিন অনুষ্ঠিত সম্মেলনের সাবজেক্ট কমিটিতে ৬-দফা উত্থাপন করেন এবং পরের দিন সম্মেলনের আলোচ্য সূচিতে যাতে এটি স্থান পায় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন। কিন্তু এই সম্মেলনে শেখ মুজিবুর রহমানের এ দাবীর প্রতি আয়োজকপক্ষ গুরুত্ব প্রদান করে নি, তারা এ দাবি প্রত্যাখ্যান করে, প্রতিবাদে শেখ মুজিব সম্মেলনে যোগ না দিয়ে লাহোরে অবস্থানকালেই ৬-দফা উত্থাপন করেন। এ নিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন খবরের কাগজে বাঙালীর নেতা শেখ মুজিবুর রহমান কে বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা বলে চিহ্নিত করা হয় ।
পরে ঢাকায় ফিরে শেখ মুজিবুর রহমান ১৩ মার্চ ৬-দফা এবং এ ব্যাপারে দলের অন্যান্য বিস্তারিত কর্মসূচি আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদে পাস করিয়ে নেন ।
৬-দফার মূল বক্তব্য ছিল- প্রতিরক্ষা ও পররাষ্ট্র বিষয় ছাড়া সকল ক্ষমতা প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকবে। পূর্ববাংলা ও পশ্চিম পাকিস্তানে দু’টি পৃথক ও সহজ বিনিময়যোগ্য মুদ্রা থাকবে। সরকারের কর ও শুল্ক ধার্য ও আদায় করার দায়িত্ব প্রাদেশিক সরকারের হাতে থাকাসহ দুই অঞ্চলের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রার আলাদা হিসাব থাকবে এবং পূর্ববাংলার প্রতিরক্ষা ঝুঁকি কমানোর জন্য এখানে আধা-সামরিক বাহিনী গঠন ও নৌবাহিনীর সদর দপ্তর স্থাপন।বঙ্গবন্ধু ঘোষিত ৬-দফা দাবীর মুখে পাকিস্তানের তৎকালীন সামরিক শাসক আইয়ুব খান বিচলিত হয়ে পড়েন । তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ৬-দফা নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে অস্ত্রের ভাষায় উত্তর দেয়া হবে ।

এদিকে ৬-দফা কর্মসূচী জনগণের মাঝে পৌঁছে দেয়ার জন্য শেখ মুজিবুর রহমান সহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ সমগ্র পূর্ববাংলা সফর করেন এবং ৬-দফাকে বাঙালির বাঁচার দাবী হিসেবে অভিহিত করেন । শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে তাজউদ্দীন আহমদ, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, মিজানুর রহমান চৌধুরী, জহুর আহমদ চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম চৌধুরী গণসংযোগে অংশ নেন। যশোর, ময়মনসিংহ ও সিলেটসহ অন্যান্য কয়েকটি স্থানে ৬ দফার পক্ষে প্রচারকালে শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হন ।
এদিকে স্বাধীনতার পক্ষে প্রগতিশীল ছাত্রসংগঠন গুলো একত্র হয়ে ছাত্রসংগ্রাম পরিষদ গঠন করে ছাত্রসমাজের পক্ষে ১১ দফা দাবী উত্থাপন করে তীব্র আন্দোলন সংগ্রাম হরতাল অবরোধের মাধ্যমে সারা পূর্ব বাংলা দাবা নলের মতো জ্বলতে থাকে বাংলার কৃষক , শ্রমিক , ছাত্র ও জনতা একাকার হয়ে রাস্তায় নেমে পড়ে কেঁপে উঠে স্বৈরশাহীর মসনদ ।

১৯৬৯ সালে এই আন্দোলন গণঅভ্যূথানে রূপ নিলে বাধ্য হয়ে সামরিক জান্তা ১৯৬৯ সালের ২২ শে ফেব্রুয়ারী শেখ মুজিবুর রহমান কে কারাগার থেকে মুক্তি দেয় । ২৩ শে ফেব্রয়ারী সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে শেখ মুজিবুর রহমান কে এক জনসমুদ্রে সম্বর্ধনা প্রদান করা হয় আর এই দিন সভাপতির বক্তব্যে ডাকসুর ভিপি ও সর্বদলীয় ছাত্রসংগ্রাম পরিষদের নেতা তোফায়েল আহমদ শেখ মুজিবুর রহমান কে ” বঙ্গবন্ধু” উপাধীতে ভূষিত করেন ।

এ দাবীর স্বপক্ষে বাঙালি জাতির সর্বাত্মক রায় ঘোষিত হয় ১৯৭০ সালের ঐতিহাসিক সাধারণ নির্বাচনের মধ্যদিয়ে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বাঙালিরা বিজয়ী করে। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর দলকে জনগণ বিজয়ী করলেও স্বৈরাচারী পাক শাসকরা বিজয়ী দলকে সরকার গঠন করতে না দিলে আবারো বঙ্গবন্ধু জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার পক্ষে আন্দোলন শুরু করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের ।

__________________________________________
#আব্দুর রহিম শামীম : সাংবাদিক ,কলামিস্ট ও রাজনীতিবীদ