আবুধাবির হিন্দু মন্দিরে এক সন্ধ্যায়

ফরহাদ হুসাইন ফরহাদ হুসাইন

সংযু্ক্ত আরব আমিরাত

প্রকাশিত: ১:৫০ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৪ 204 views
শেয়ার করুন

 

প্রথম আবুধাবিতে এসে একটা দৃশ্যে চোখ আটকে গিয়েছিল। শহরের উপকন্ঠে একই সীমানা প্রাচীরের মধ্যে কেন্দ্রীয় খৃষ্টীয় চার্চ (st. george orthodox cathedral church ও সুবৃহৎ একটি মসজিদ যার নাম (Mary, Mother of Jesus Mosque) । বিষয়টি মনে আলোড়ন তুলেছিল এবং ধর্মীয় সহিষ্ণুতার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়েছিলাম। তেমনি গত ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে আরব আমিরাতে হিন্দু মন্দির উদ্বোধন হওয়ার পর তা নিজ চোখে দেখতে উদগ্রীব ছিলাম। গতকাল বন্ধু সুকুমার,মন্টু ও টিংকু দাদাকে নিয়ে দেখে এলাম বিএপিএস হিন্দু মন্দির,আবুধাবি।

উত্তর রাজস্থানের গোলাপী বেলেপাথর এবং ইতালির মার্বেল দিয়ে তৈরি মন্দিরটি ১০৮ ফুট উচ্চতায় ২৬২ ফুট দৈর্ঘ্য এবং ১৮০ ফুট প্রস্থে দাঁড়িয়ে আছে। এটিই প্রথম পাথরের মন্দির যা নির্মাণ প্রক্রিয়ার সময় সম্পূর্ণ ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে।

১৯৯৭ সালে স্বামী মহারাজ আবুধাবিতে একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেন। ২০১৫ সালে,সংযুক্ত আরব আমিরাতের বর্তমান প্রেসিডেন্ট শেখ মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান মন্দিরের জন্য ২৭ একর জমি উপহার প্রদান করেন। ২০১৯ সালে মন্দিরটি আইনি মর্যাদা লাভ করে এবং ডিসেম্বরে নির্মাণ কাজ শুরু হয়।মন্দিরের ভেতরে শ্বেত পাথরে খোদাইশুধু,রামায়ণ, শিবপুরাণ, ভাগবতম, মহাভারত এবং হিন্দু ব্যক্তিত্বদের জীবনের গল্পই অন্তর্ভুক্ত করেনি বরং আরব, মিশরীয়, মেসোপটেমিয়ান, সভ্যতার গল্পগুলিও অন্তর্ভুক্ত করেছে। মন্দির কমপ্লেক্সের মধ্যে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী হিন্দু মন্দির, একটি দর্শনার্থী হল,প্রার্থনা হল, প্রদর্শনী, শিক্ষার জায়গা, শিশুদের জন্য একটি খেলার এলাকা, জলের ফোয়ারা, একটি ফুড কোর্ট এবং একটি বই এবং উপহারের দোকান।

মন্দিরের মাঝামাঝি কোঠায় স্বামীনারায়ণ ও গুণতীতানন্দ স্বামীর মার্বেল মূর্তি দ্বিতীয় কর্ণারে রাধা-কৃষ্ণের মূর্তি, তৃতীয় কর্ণারে শ্রীরাম ও তার সহধর্মিণী সীতা, তার ভাই লক্ষ্মণ এবং ভক্ত হনুমানের মার্বেল মূর্তি রয়েছে। রামকে বিষ্ণুর অবতার হিসেবে পূজা করা হয়।হিন্দু ঐতিহ্যের প্রধান দেবতা শিবের মার্বেল মূর্তি, তার সহধর্মিণী পার্বতী, শক্তি ও শক্তির দেবী এবং দুই পুত্র, গণেশ ও কার্তিকের মূর্তি চতুর্থ কর্ণারে রয়েছে। পঞ্চম কর্ণারে শ্রীনিবাসের কালো গ্রানাইট মূর্তি ষষ্ঠ কর্ণারে জগন্নাথের মূর্তি এবং সপ্তম কর্ণার মোহিনী ও শিবের পুত্র দেবতা আয়াপ্পনকে উৎসর্গ করা হয়েছে। প্রতিটি মূর্তির চারপাশ ভারী স্বর্ণের কারুকাজ রয়েছে। উপরে গেরুয়া রঙ এবং ভেতর শ্বেত পাথরের মন্দিরের যখন আলো জ্বলে উঠে তখন অপরূপ সৌন্দর্যের ঝলকানিতে ভরে ওঠে পুরো প্রাঙ্গন। আবুধাবির থেকে শেখ জায়েদ রোড ধরে ৩৬৬ নং এক্সিট ধরে পৌঁছানো যায় মন্দিরে।