জীবনের গল্প

জাহান রিমা জাহান রিমা

লেখিকা, আমেরিকা

প্রকাশিত: ১২:১৬ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০ 805 views
শেয়ার করুন

আই কা’ন্ট ব্রিথ। আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। জর্জ ফ্লয়ডের লাস্ট কথা ছিলো এটা। জর্জ ফ্লয়েড কে? জর্জ ফ্লয়েড আমেরিকার মিনোসোটা অঙ্গরাজ্যের সর্বশেষ কৃষ্ণাঙ্গ যাকে হত্যা করা হয় অপরাধ প্রমাণের আগে- পা দিয়ে চেপে। কে মেরেছে? মানুষ? আমেরিকান পুলিশ? নাকি আরেক শ্বেতাঙ্গ? এখানে শেষ প্রশ্নটাই জোরালো। কেননা এর আগে বিগত বছরেও এমন মৃত্যু ছিল চোখে পড়বার মতো। আমেরিকাতে পুলিশের গুলিতে মারা যায় যত মানুষ; পরিসংখ্যান বলে তার এক তৃতীয়াংশই কৃষ্ণাঙ্গ। বা ভিন্ন বর্ণের। কেন? ম্যাপিং পুলিশ ভায়োলেন্সে উঠে আসা এই তথ্য অসত্য নয় তার সর্বশেষ প্রমাণ- এই আফ্রিকান আমেরিকান জর্জ ফ্লয়েড।

Black lives matter- কৃষ্ণাঙ্গদের জীবনও মূল্যবান। লিটারেলী সব মানুষের জীবনই মূল্যবান এই আন্দোলন তাই আজও প্রাসঙ্গিক। পৃথিবীর মানুষের এই দুঃসময়েও প্রাসঙ্গিক। এই করোনাক্রান্তির দিনে প্রাসঙ্গিক তা ভিন্নভাবেও। কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত মৃত্যুর মধ্যেও সেই দুই তৃতীয়াংশেরই মিল। কৃষ্ণাঙ্গদেরই মৃত্যু বেশি।
কোথায় যেন সাদৃশ্য, তাই না?

মনে আছে; ট্রেইভন মার্টিন ফ্লোরিডার স্যানফোর্ডে বসবাস করা সতেরো বছরের সেই ছেলেটার কথা। জর্জ জিমারম্যানের গুলিতে সে প্রাণ হারায়। জর্জ জিমারম্যান কে? ভিলেজ সিকোরেটি গার্ড। নাকি সেই চেনা নাম- শ্বেতাঙ্গ? ট্রেইভন তার আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করবার জন্য গিয়েছিলো নিরাপত্তা বলয়ের আওতাধীন এক এলাকায়। আপাতত এই তার অপরাধ। অপরাধ কি কৃষ্ণাঙ্গ হওয়াও? কে জানে! সেদিন তাৎক্ষণিক সেই গার্ডের গুলিতে মৃত্যু হয় স্কুলছাত্র ট্রেইভানের।

সেই মৃত্যু থেকে Black lives matter নামের আন্দোলন শুরু। তারপর জিমারম্যান চলে যায় কাঠগড়ায়। তার শাস্তি কি হয়েছিলো জানেন? নির্দোষ!
জিমারম্যান নাকি সতেরো বছরের কিশোরকে হত্যা করেছিল নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবার জন্যই!!

এভাবেই গত এক দশকে তালিকাতে যুক্ত হবে; বিবিসির তথ্যসূত্রে: এরিক গার্নার। মাইকেল ব্রাউন। ওয়াল্টার স্কট। ফ্রেডি গ্রে। সান্ড্রা ব্ল্যান্ড। আতাতিয়ানা জেফারসন। ব্রেওনা টেলর। কিংবা গনমানুষকে আন্দোলিত না করা আরও অনেক মৃত্যু। মৃত্যু? হত্যা? কার? কৃষ্ণাঙ্গের।

তবে আলো তাই এখানে- জর্জ ফ্লয়েডকে হাঁটু দিয়ে চেপে হত্যা করা পুলিশ অফিসার ডেরেক শভিনের স্ত্রী কেলি শভিন এই ঘটনায় ডিভোর্স করেছেন ডেরেককে। ডিভোর্স করেছে দশ বছরের জীবনসঙ্গী- একজন খুনীকে!

আমরা যতোই আগাই; পৃথিবী যতই আগাক; শুধুমাত্র বর্ণের কারণে নিগৃহিত আমি-তুমি-এবং আপনি। আমরা সবাই-ই এর কম বেশি স্বীকার। প্রকাশ্যে স্বীকার করি কিংবা না করি।

এইযে; অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার ডেরেক শেভিনের স্ত্রী- আমেরিকা’স মিসেস মিনোসোটা! তিনি মিনোসোটা অঙ্গরাজ্যের সেরা সুন্দরী ২০১৮! সুন্দরী? নাকি সুন্দর! অবশ্যই সুন্দর।

অথচ আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন? এই মিসেস মিনোসোটা; এই কেলি শেভিনই শৈশবে বুলিড হয়েছিলো সে দেখতে ভিন্ন বলে। এমনকি একবার তার এক বন্ধু শুধুমাত্র তাকেই দাওয়াত করেনি সে দেখতে তাদের মতো নয় বলে। সে ভিন্ন বর্ণের বলে! ঘুরেফিরে গল্প- সেই বর্ণবাদের। সেই রেসিজমের।

তাই মিসেস আমেরিকা’স মিনোসোটাতে সে সুন্দরীর চেয়েও ততোধিক হচ্ছে- সুন্দর। সুন্দরী আর সুন্দরের পার্থক্য জানেন তো? সুন্দরী কে তা বলতে পারবেন আপনি বাহির থেকেও। বলতে পারবেন দশ মুহূর্ত সময় খরচ না করেও! কিন্তু সুন্দর? সুন্দরকে জানতে হলে আপনার প্রবেশ করতে হবে আরও গভীরে। তাঁর ভেতরে। যত গভীরে যাবেন ততো সুন্দরের ভেতর থেকে আবিষ্কার করবেন আলোর ফুলকি। ভেতরে বাহিরে সুন্দরের এক অপূর্ব দোলন।

মিসেস মিনোসোটা কেলি তাই সুন্দর। ভীষণ সুন্দর। কেননা সেই দেখাতে পেরেছে অন্যায়ের জন্য প্রতিবাদ করবার ওমন তাৎক্ষণিক সাহস। করতে পেরেছেন ওমন আপনকেও পর- কারণ ডেরেক খুনী!

এইযে; কেলি শেভিন বড় হয়েছে একটা রিফিউজি সেন্টারে। তার ছিলো এবিউজিভ সংসারের অন্য গল্পও। কথা আছে আরো- আরো। সে একজন রেডিওলজিস্টও। কথা থেকে যায় আরো; শরীরগত এক্সরেতে পারদর্শী কেউ মনস্তাত্বিক এক্সরেতে কতটা পারদর্শী!

এইতো এমন করে বর্ণবাদের কালো সময়েও আসে আলোর গল্প। যেমন কালে কালে এসেছিলো- মার্টিন, নেলসন, রোসা পার্কস, ম্যালকম এক্স, মোহাম্মদ আলী, মহাত্মা গান্ধী কিংবা কথা গানে সুরে নিপীড়িত, বর্ণবাদের স্বীকার মানুষের জন্য গর্জে উঠা সুর- বব মার্লে।