সৎ জীবন গঠনে মৃত্যুর স্মরণের প্রভাব

প্রকাশিত: ১২:৪৯ অপরাহ্ণ, মে ৩০, ২০২০ 508 views
শেয়ার করুন

মৃত্যুর স্মরণ সৎকাজের প্রতি ধাবিত করে ও নাফরমানি থেকে দূরে রাখে। মৃত্যু একটি কঠিন বাস্তবতা। এ দুনিয়ায় মানুষ বলগাহীনভাবে চিন্তাশক্তিকে ব্যবহার করার কারণে হাজার হাজার বিষয়ে একে অন্যের সঙ্গে মতবিরোধে লিপ্ত, এমনকি আল্লাহতায়ালার সত্তার বিষয়ে, তার গুণাবলির বিষয়েও মতবিরোধে লিপ্ত। আম্বিয়ায়ে কিরামের বিষয়ে মতবিরোধ আবহমানকাল থেকে হয়ে আসছে। অতএব, দুনিয়ার নশ্বরতা, অবিনশ্বরতার বিষয়ে মতবিরোধ স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু একটি বিষয়ে আস্তিক বলেন, নাস্তিক বলেন, হিন্দু বলেন, বৌদ্ধ বলেন, খ্রিস্টান বলেন, মুসলিম বলেন সবাই একমত- সেটি হলো মৃত্যু। সারা বিশ্বের শক্তি, ডাক্তার, বিজ্ঞানী এক হয়েও মৃত্যুকে ঠেকাতে পারবে না, পারেওনি। আল্লাহতায়ালা বর্ণনা করেন : ‘হে নবী! বলে দিন, যেই মৃত্যু থেকে তোমরা পালানোর চেষ্টা করছ সেই মৃত্যু তোমাদের সাক্ষাৎ দেবেই।’ আল্লাহতায়ালা আরও বর্ণনা করেন : ‘প্রত্যেক জীবকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলাপ্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে তারা সফলকাম হবে। পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোনো সম্পদ নয়।’ কোনো ব্যক্তি যখন সীমালঙ্ঘন করে, ঘুষের মাধ্যমে, সুদের মাধ্যমে অন্যকে জুলুম করে ভোগবিলাসে মত্ত, এ অবস্থায় সে একবার যদি মৃত্যুর কথা স্মরণ করে এবং মনে মনে ভাবে আমার এ ভোগবিলাসের ইমারত মৃত্যু ক্ষণিকের মধ্যে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে ফেলবে তখন আমার কী অবস্থা হবে; সঙ্গে সঙ্গে সে নাফরমানি করা থেকে নিজেকে গুটিয়ে ফেলবে এবং পরকালের প্রস্তুতির জন্য সৎকাজের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত : রসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কবর জিয়ারত করতে তোমাদের নিষেধ করেছিলাম। এখন তোমরা কবর জিয়ারত কর! কেননা কবর জিয়ারত পার্থিব জগতের প্রতি অনাসক্তি সৃষ্টি করে এবং আখিরাতের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। অর্থাৎ করব জিয়ারত করতে গেলে মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতি আপনাকে নিজের মৃত্যুর কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, সে মৃত্যুর স্মরণই দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি ও আখিরাতের প্রস্তুতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এ মৃত্যুকে যারা বাস্তবে বিশ্বাস করে তারা ভোগবিলাসের জন্য অপকর্মে লিপ্ত হবে না, কষ্টের মাধ্যমে জীবনযাপন করে হলেও পরকালের সঞ্চয়ের জন্য আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টির লক্ষ্যে সৎকাজ করে যাবে। সাময়িকের জন্য পার্থিব কষ্টকে তেমন গুরুত্ব দেবে না। বরং কষ্টের পর শান্তির নীড় তার জন্য অপেক্ষা করছে এ আশায় সে মনে মনে তৃপ্তিবোধ করবে। তার দৃষ্টান্ত হলো ওই ব্যক্তির মতো যাকে বলা হলো, দুই বছর তোমাকে কারাদণ্ড দেওয়া হলো, দুই বছর পর তোমার মুক্তি হবে। তবে জেলখানায় তোমাকে এ দুই বছর অর্ধাহারে থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮ ঘণ্টা তোমাকে কায়িক পরিশ্রম করতে হবে। এ ব্যক্তি এত কঠিন শাস্তির পরও মনে মনে তৃপ্তিবোধ করবে যেহেতু একটি সময়ের পরে তার মুক্তির অঙ্গীকার রয়েছে। অন্যদিকে মৃত্যুকে তোয়াক্কা না করে যারা সীমালঙ্ঘন করার মাধ্যমে, জোর জুলুমের মাধ্যমে, অনধিকার চর্চা করে পার্থিব জীবনে ভোগবিলাসে লিপ্ত তাদের দৃষ্টান্ত হলো সেই কয়েদির মতো যাকে বলা হলো তুমি এই নির্ধারিত সময়ে তোমার মনে যা চায় তা ভোগ কর, যেভাবে চাও সেভাবে ভোগ কর তোমার জন্য কোনো বাধানিষেধ নেই। তবে নির্ধারিত সময়ের পরে তোমার জন্য ফাঁসির কাষ্ঠ অপেক্ষা করছে অর্থাৎ তোমাকে ফাঁসিতে ঝোলানো হবে। একজন বিবেকবান ব্যক্তি তাকে যতই স্বাধীনতা বা সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক না কেন ফাঁসির আদেশ মাথায় নিয়ে ভোগবিলাসে মত্ত হতে পারে না। তদ্রƒপ মৃত্যুর পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পাগল ছাড়া কেউ দুনিয়ায় এভাবে জোর-জুলুম, অন্যায়-অবিচার করে ভোগবিলাসে মত্ত হতে পারে না। কিছু সময় আল্লাহতায়ালা মৃত্যু থেকে গাফিল, ভোগবিলাসে মত্ত, নাফরমানিতে জুড়ি নেই এমন ব্যক্তিদের বহু নিয়ামত দিয়ে থাকেন। এটা দেখে কেউ যেন প্রতারিত না হয় তার জন্য রসুলুল্লাহ (সা.) বলে গেছেন, পাপাচারে লিপ্ত থাকা সত্ত্বেও কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহতায়ালা অঢেল পার্থিব উপকরণ সরবরাহ করেছেন, তখন মনে কর যে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে তার জন্য অবকাশ। এর সমর্থনে রসুলুল্লাহ (সা.) নিম্নের আয়াত পাঠ করলেন- ‘অতঃপর তারা যখন তাদের দেওয়া উপদেশ ভুলে গেল তখন আমি তাদের জন্য সব ধরনের (সচ্ছলতার) দরজা খুলে দিলাম। ফলে তারা যখন আমার দেওয়া (সুযোগ-সুবিধা) নিয়ে অহংকার শুরু করে দিল তখন আমি অকস্মাৎ তাদের পাকড়াও করলাম। তখন তারা নিরাশ হয়ে গেল।’ অতএব যারা বৈধ-অবৈধ, বাছ-বিচার না করে নাফরমানি করে যাচ্ছে মৃত্যুর পরে তাদের জন্য একটি জাহান্নামের গর্ত যা ফাঁসির কাষ্ঠ থেকে আরও ভয়ঙ্কর তা অপেক্ষা করছে। অতএব, তাদের চিন্তা করা উচিত ঝোলানো ফাঁসিকাষ্ঠের সামনে আমার এত ভোগবিলাস কিসের? অহংকার কিসের? আমরা যদি পাগল না হই, সুস্থ বিবেক যদি আমাদের থাকে তাহলে এক্ষুনি আমাদের তওবা করে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া উচিত।

আল্লাহতায়ালা বর্ণনা করেন : ‘হে ইমানদাররা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় কর। মুসলিম না হয়ে মৃত্যুবরণ করবে না।’ যেহেতু মৃত্যু কখন আসবে তা আমাদের জানা নেই সেহেতু আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত হয়ে সব সময় তাঁর গোলামির মধ্যে থাকতে হবে। এতে যখনই মৃত্যু আসুক মুসলিম হিসেবে মৃত্যু হওয়ার আশা করা যায়। আল্লাহ আমাদের সঠিকভাবে মৃত্যুর প্রস্তুতি নেওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।