বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতার নেতৃত্বের প্রতি শ্রদ্ধা 

এম এ জামান এম এ জামান

বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১:২০ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২৪ 72 views
শেয়ার করুন

নিজেস্ব প্রতিবেদক::

বাংলা ভাষার আন্তর্জাতিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক নেতৃত্ব ও বায়ান্ন’র অমর ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছে বাংলাদেশ হাই কমিশন, লন্ডন। মহান ‘শহিদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ২০২৪’ অনুষ্ঠানে এ শ্রদ্ধা নিবেদন করে তারা। বুধবার সন্ধ্যায় ইংল্যান্ডের লন্ডনের রয়্যাল বারা অব কেন্জিংটনে এক কনফারেন্স সেন্টারে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।

“Multilingual Education, The Piller of Learning” শীর্ষক বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- উইকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কো, কমনওয়েলথ, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন ও ব্রিটিশ কাউন্সিলের প্রতিনিধিবর্গ এবং যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত আর্জেন্টিনা, বাহামা, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিস্তিন, গ্রীস, গুয়েতেমালা, কেনিয়া, কোরিয়া প্রজাতন্ত্র, মালয়েশিয়া, মঙ্গোলিয়া, মরক্কো, মিশর, রোমানিয়া, সাইপ্রাস, সার্বিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ইউক্রেনসহ বিভিন্ন দেশের হাইকমিশনার, রাষ্ট্রদূত ও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিগণ।

এরপর ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইউক্রেন, সার্বিয়া, মালয়েশিয়া, মরোক্কো, সাইপ্রাস ও শ্রীলঙ্কা দূতাবাসের প্রতিনিধিত্বকারী শিল্পীরা মহান ভাষা শহিদদের উৎসর্গ করে নিজ নিজ ভাষায় মনোজ্ঞ সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্য পরিবেশন করেন। অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিলো ব্রিটিশ-বাংলাদেশি শিশু-কিশোর শিল্পীদের সমবেত কন্ঠে জাতিসংঘের ৬টি ভাষায় “আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি” পরিবেশনা করা হয়

লন্ডনে বসবাসকারী ৭১’র বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং ব্রিটিশ-বাংলাদেশি কমিউনিটিসহ বিভিন্ন দেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষাভাষীর প্রায় পাঁচশ নারী, পুরুষ ও শিশু-কিশোর বাংলা ভাষা শহিদদের প্রতি পরম শ্রদ্ধায় এই বিশেষ আলোচনা ও বৈচিত্রপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানে যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাইদা মুনা তাসনীম তাঁর স্বাগত বক্তব্যে ১৯৫২-এর সকল ভাষা শহিদ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ পর্যন্ত ঐতিহাসিক ভাষা আন্দোলনের প্রতিটি পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও জাতিসংঘে প্রথম বাংলায় বক্তব্য রেখে বাংলা ভাষাকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উন্নীত করার কথা পরম শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন। তিনি মহান একুশে ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা পাওয়া, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির উদ্যোগসহ বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

হাইকমিশনার যুক্তরাজ্যে প্রচলিত ৩০০টি মাতৃভাষার মধ্যে গ্রেটার লন্ডনে বাংলা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ কথ্য ভাষা উল্লেখ করে একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটিকে ‘লন্ডন মাল্টিলিংগুয়াল ডে’ হিসেবে ঘোষণা করার জন্য লন্ডন মেয়রের প্রতি আহ্বান জানান।

আলোচনা অনুষ্ঠানে উইকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ, আন্তর্জাতিক মেরিটাইম অর্গানাইজেশন-এর কাউন্সিল চেয়ার ভিক্টর জিমেনেজ, যুক্তরাজ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত ইউন ইওচিয়ল, বাহামার হাইকমিশনার প’ল এ গোমেজ, ভারতের ডেপুটি হাইকমিশনার সুজিত ঘোষ, ব্রিটিশ কাউন্সিলের দক্ষিণ এশিয়া রিজিওন্যাল ম্যানেজার মিজ সাম হারভি এবং ব্রিটিশ বাংলাদেশি কমিউনিটির বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক বক্তব্য রাখেন।

উইকে ন্যাশনাল কমিশন ফর ইউনেস্কোর প্রধান নির্বাহী জেমস ব্রিজ বলেন, বাংলাদেশের উদ্যোগেই ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কোতে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরপর ২০০০ সাল থেকে সারা বিশ্বে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ভাষা শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর হাইকমিশনার অতিথি ও মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে প্রতীকী শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ উপলক্ষে হাইকমিশনার অতিথিদের নিয়ে একটি বিশেষ স্মারক প্রকাশনার মোড়ক উন্মোচন করেন।

সকালে হাইকমিশনার মিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের নিয়ে দূতাবাসে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করেন। এরপর দিবসটি উপলক্ষ্যে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদত্ত বাণী পাঠ এবং ভাষা শহিদদের এবং বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের শহিদ সদস্যদের রূহের মাগফেরাত এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও সাফল্য কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

এর আগে মহান একুশের প্রথম প্রহরে হাইকমিশনার ও টাওয়ার হ্যামলেটস-এর মেয়র লুৎফুর রহমান একসাথে এবং পরে মিশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পূর্ব লন্ডনের শহিদ আলতাব আলি পার্কে কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বায়ান্নোর ভাষা শহিদদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।