সায়ত্তশাসন নয় সিলেটের স্বাধীনতা চাই

প্রকাশিত: ৯:২৪ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২, ২০২১ 976 views
শেয়ার করুন

১৯৭১ সালের আগে যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা কামনা দেশ কিংবা রাষ্ট্রদ্রোহিতার সমান না হয় তবে বাংলাদেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পর সিলেটের সায়ত্তশাসন কিংবা স্বাধীনতা চাওয়াটা কেনো যৌক্তিক হবেনা?কেনো তা অপরাধের হবে?

ব্রিটিশ সামরাজ্য থেকে মুক্ত হওয়ার পর একই দিনের মাথায় ভারত থেকে পাকিস্তান ভাগ হতে পারে তবে আমরা সিলেটিরা কেনো সায়ত্তশাসন দাবী করতে যাব।আমরা স্বাধীনতা চাই।

অনেকদিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সিলেটের সায়ত্তশাসন নিয়ে কথা বলে আসছেন জনাব রেজা আহমা ফয়সাল চৌধুরী সুয়েব সাহেব।আমি তাহার সকল যুক্তির সাথে একমত।তবে আমার মনে হয় তাকে ঐ শাষন ভাষন না টেনে সোজা সোজি স্বাধীনতা নিয়ে কথা বলা উচিত।তার অনেক লেখায় কিংবা বক্তৃতায় দেখেছি অনেকেই অনেক ভাবে বাদ প্রতিবাদ করে থাকেন যাদের অনেকেরই কোনো স্ব অবস্থান কিংবা অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়না।তারা ইংল্যান্ডে এসে দু’চার গন্ডা পাউন্ড আয় করেছেন বলেই নিজেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা (নেকড়ে)হিসেবে পরিচয় দিয়ে বেড়ান।

আমি তাদের কাছে প্রশ্ন রাখি দালালি আর চামচামি করে কি জনতার নেতা কিংবা সঠিক নেতৃত্ব দেয়া যায়?

তারো অনেক আগে প্রথম সিলেট পৌরসভার মেয়র জনাব বাবরুল হোসেন বাবুল সাহেব তার শাসনামলে একবার বলেছিলেন জাগ সিলেট।

সিলেটি প্রবাসীদের আর্থিক যোগানে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের অস্ত্র কেনা হয়।মুক্তিযুদ্ধকালে সকল অর্থ ব্যয় বহুল বিষয়ে বিশেষ করে সিলেটি লন্ডন প্রবাসীরা অর্থ ব্যয় করেছিলেন।সেই অর্থ তহবিলের টাকা তখনকার আওয়ামী এবং বর্তমান বি এন পি নেতা ব্যারিষ্টার মওদূদ আহমদ ও ব্যারিষ্টার নাজমুল হুদা সহ আরো অনেকেই মিলে সেদিন সে তহবিলের টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন।পরে যদিওবা শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব বিষয়টি জেনেছিলেন।আমারটা তো খায়নি,খেয়েছে সিলেটিদের তাই ভেবে তিনি কোনো ব্যবস্থ না নিয়ে তাদের কে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন।

স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশের ব্যংক হিসেব সংগ্রহ ছিলো মাত্র ১১ পাউন্ড।তা থেকে ঐ হিসেব টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো অর্ধ মিলিয়ন পাউন্ডে।সেটা কি শেখ মুজিবুর রহমান করেছিলেন?
না কি উনার মদদপুষ্টরা করেছিলেন?

সেটি সম্ভব করেছিলেন সিলেট মাতার প্রবাসী সন্তানেরা।যাদের কারণে আজো ইংল্যান্ডে বুক ফুলিয়ে হাঁটতে পারি।যাদের কারণে আজো বাংলাদেশের নাম সমুজ্জল ইংল্যান্ড সহ গোটা বিশ্ব জুড়ে।

শেখ মুজিবুর রহমান সাহেব সেদিন পাকিস্থানে ছিলেন। জিয়াউর রহমান সাহেব ব্যস্থ ছিলেন পাকিস্তানের হয়ে চট্রগ্রাম বন্দর থেকে অস্ত্র খালাসে।
সেদিন সিলেটের সুর্য পুরুষ ওসমানী ছিলেন বাংলাদেশ রক্ষায় মরিয়া।একজন ওসমানী ছিলেন বিধায় আজকের শেখ মুজিব গল্পের জন্ম হয়েছিলো।
আজ আওয়ামী লীগ তাকে জীবন মরণে স্বরণ করে না।বি এন পি তো করার প্রশ্নই উঠেনা।
বড় কষ্ট হয় যখন দেখি সিলেটের দালালেরা সেই ওসমানীকে নিয়ে নানা কিছু বলেন।
বাংলাদেশ স্বাধীনের পথ সুগম করতে সিপিবি, জাসদ, ন্যপ সহ সকল বাম দল গুলোর অবদান ছিলো শেকড়ে। যদিওবা আজকের দিনে দলকানারা সেই ইতিহাস জানেন না কিংবা জানতে ও চায়না।আর চাইলেও তা আর সহজ নয়।নানা ভাবে বিতর্কিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের প্রথম বিমানটি কিনতে অর্থের যোগান দিয়েছিলেন লন্ডন প্রবাসী সিলেটিরা।
বিমান যাত্রায় সিলেট প্রবাসী যাত্রীদের কি বিশেষ কোনো সুবিধা আছে?খুব জানতে ইচ্ছে করে।
খুজ নিলে তালিকা বলে শেষ হবার নয়।

সেসব কথা খুঁচা দিয়ে স্বরণ করিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ দিয়ে খাট করব না কাউকে। বাংলাদেশ স্বাধীনের পথ হয়ে অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কতটা অবধান রেখেছেন এই উত্তর বঙ্গ আর দক্ষিণ বঙ্গের লোকেরা।যদি সিলেটিদের সঙ্গে তুলনা করি। তারা পায় পদ্মাসেতু আপনারা কি পেলেন সিলেটিরা।

শেখ মুজিবুর রহমানের আমল থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত প্রতিটি সরকার ই অবহেলা করে আসছে বৃহত্তর সিলেটকে। আজ যারা পদ্মাসেতু নির্মাণে আনন্দ উল্লাস আর লাফালাফি করছেন দেশ ও দেশের অর্থনীতি গঠনে তাদের কি ভূমিকা রয়েছে? আমি সেটিকে অসম।মান করিনা।অখুশি ও নয়।তবে প্রশ্নটা হলো সবাইকে তো সমান চোখে দেখা উচিত।
আর সিলেটের লোকেদের অবদান কি রয়েছে?
সে দুটি বিষয় একটু জানতে নিজের বিবেকের কাছে একটু প্রশ্ন করে দেখবেন।

আজ সেইসব হিসেব নেবার সময় হয়েছে।কেউ দেবেন কি সে হিসেব টুকু? কি দিয়েছেন সিলেটকে আর কি পেলেন তাদের গায়ের চামড়া পুড়ায়ে?

আজ হিসেব নেবার পালা এসেছে।জানতে হবে,জানাতে হবে প্রবাসে পড়ে গায়ের চামড়া পুড়ানো সকল সিলেটি প্রবাসীদের।

স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ত সিলেটে নেতা নেত্রীর কোনো অভাব ছিলোনা আর আজো নেই।
সামাদ আজাদ সাহেব হয়ে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী,নুরুল ইসলাম নাহিদ সাহেব হয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিত সাহেব হয়ে আব্দুল মুমিন সাহেব পর্যন্ত। এদের সকলেই নেতা ছিলেন কিন্তু তাদের নেতৃত্বের হাত তথটা শক্ত ছিলোনা কিংবা নেইও।

২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সিলেটের দ্বায়িত্ব আমি নিজে নেব।সকল উন্নয়ন নিজ হাতে করব।কি এমন করেছেন তিনি সিলেট বাসীর জন্য?
মরহুম শেখ ওয়াহিদুর রহমান সাহেব তার মৃত্যুর কিছুদিন আগে বলেছিলেন “জাল টানে ওয়াহিদে আর মাছ খায় নাহিদে”। তার সে উক্তিটি ধরে আজ বলতে ইচ্ছে করে জাল টানে সিলেটি আর মাছ খায় নন সিলেটি।
সেদিন দেশকে যা দিয়ে ছিলেন সাটা সম্ভব হয়েছিল প্রবাসীদের মাতৃশ্রাদ্ধ আর ভালোবাসার কারণে।
আজো সেটা করছেন প্রবাসীরা।

তাই একমাত্র তাদেরই আছে অধীকার সেই প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির হিসেব নেবার। ফয়সাল চৌধুরী সুয়েব সাহেব তাহার লিখা ও বক্তৃতায় সিলেটের সায়ত্তশাসনের কথা ই শুধু বলে যাচ্ছেন।আমি জনাব চৌধুরী সাহেবকে বলবো সায়ত্তশাসন নিয়ে পড়ে না থেকে স্বাধীনতা নিয়ে কথা তুলেন।সায়ত্তশাসন নিয়ে থাকতে চাইলে ঢাকা আমাদের অর্থাৎ সিলেটের সাথে কথা বলোক।

শামসুর সুমেল
সাংবাদিক
সাংস্কৃতি কর্মী।
মেইলঃshamsursumel@yahoo.com
০১/০১/২০২১