প্রসঙ্গঃডিজিটাল জেলাসি

প্রকাশিত: ৬:৫৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ২১, ২০২০ 652 views
শেয়ার করুন
আজ একটা ভিন্নধর্মী বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে একটু নিজের ভাবনা চিন্তাগুলো শেয়ার  করি। বিষয়টি হচ্ছে ডিজিটাল  জেলাসি। হ্যাঁ, অবাক হবার মত একটা বিষয় তবে আমরা নিজের অজান্তেই এই ক্ষতিকর অভ্যাসটির বেড়াজালে জড়িয়ে যাচ্ছি।  হয়তো বিষয়টি কিছু উদাহরণ দিয়ে উপস্থাপন করলে ব্যাপারটি বুঝতে সহজ হবে।
ধরুন, আপনার সোশ্যাল  মিডিয়া  তে হঠাৎ-ই চোখে পড়লো আপনার ফ্রেন্ড  লিস্টের  কোন বন্ধু তাঁর কোন কাজের স্বীকৃতি হিসেবে কোন অ্যাওয়ার্ড পেলো, আপনি একজন বন্ধু হিসেবে বিষয়টি দেখে ভাবলেন আমার বন্ধুটি যদি তাঁর কাজের মাধ্যমে এতো ভালো নাম, যশ, খ্যাতি পেয়ে যায় আমার পক্ষেও সম্ভব। হ্যাঁ অবশ্যই সম্ভব এবং এমন চিন্তাভাবনা কখনোই জেলাসি না। জেলাসি সেটাই যখন আপনি চিন্তা করতে শুরু করবেন, আরে সে পেলো-আমি কেন পেলাম না! এই যে একটা অনুশোচনা এবং অপ্রাপ্তির গ্লানি আপনি বয়ে বেড়াচ্ছেন নিজের মনে এটিই আপনার ডিজিটাল  জেলাসি। কেবল জেলাসি বললেই তো হয়, আবার ডিজিটাল  কেন লাগানো হলো নামের শুরুতে!
ডিজিটাল  জেলাসি এতোই ভয়ংকর একটি বিষয় যা আপনি বুঝতেও পারবেন না, অথচ ভিতরে ভিতরে আপনাকে পুরোপুরি তিলে তিলে নিঃশেষ করে দিবে। আপনার সাথে আপনার সেই বন্ধুটির সম্পর্কে তো প্রভাব পড়বেই পাশাপাশি আপনার নিজের প্রতি যে আত্মবিশ্বাস তাতেও ফাটল ধরবে। ধীরে ধীরে আপনার মধ্যে এক ধরনের বিদ্বেষবশত ক্ষোভ জন্ম নিবে যা সামাজিকভাবে আপনাকে ক্ষতির সম্মুখীন করতে যথেষ্ঠ।
আরো একটি উদাহরণ দেয়া যায়, আপনি একটি উদ্যোগ হাতে নিলেন এবং সেই উদ্যোগটির ব্যাপকতা এতোই বেড়ে গেল যে এই উদ্যোগ অনেক মানুষের জীবনে পরিবর্তন এনে দিতে পারে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপনার উদ্যোগটি রাতারাতি ভাইরাল হয়ে গেলো এবং প্রচুর এনগেজমেন্ট তৈরী হলো। কিন্তু এই উদ্যোগটিও কিছু কিছু মানুষের ক্ষেত্রে তৈরী করবে প্রতিহিংসামূলক মনোভাব এবং এটিও ডিজিটাল জেলাসি।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাশের বাসার ভাই-ভাবীর ছবি দেখে নিজেকে অযোগ্য ভাবা, কোন পরিচিত ব্যক্তির ব্যবসার প্রসার দেখে নিজেকে ছোট ভাবা, কারো বোর্ড পরীক্ষার রেজাল্ট ভালো দেখে নিজেকে খারাপ ভাবা এগুলোও ডিজিটাল  জেলাসি।
আমরা নিজের অজান্তেই ডিজিটাল  জেলাসি ইকো সিস্টেম  তৈরী করছি। যেখানে মানুষ ভালো কাজকে বা কোন অর্জনকে ইন্সপাইরেশান হিসেবে নিচ্ছে না, নিচ্ছে চ্যালেঞ্জ  হিসেবে। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ড  হয়ে যাচ্ছে নিজেরই প্রতিদ্বন্দ্বী।  আমরা কারো গঠনমূলক সমালোচনা  না করে সোশ্যাল  মিডিয়া  ব্যবহার করে করছি ট্রলিং, বুলি,সাইবার হ্যারাসমেন্ট এবং অনেক দুঃখজনক বডি শেমিং এর মত কাজগুলো। এসব ধ্বংসাত্মক কাজ দিনশেষে আমাদের কোথায় নিয়ে দাঁড় করাচ্ছে একবার ভেবে দেখেছেন!
হয়তো এতো গভীর ভাবে কখনো এসব নিয়ে ভাবাই হয়নি। ডিজিটাল  জেলাসি বিষয়টি এতোই জটিল যে স্বাভাবিকভাবে অনুমানই করা যায়না।
আমরা প্রত্যেকে নিজের মূল্যবান সময়ের একটি সিংহভাগই ব্যায় করি ডিজিটাল  প্লাটফর্ম  গুলোতে, তাই ডিজিটাল  জেলাসি থেকে দূরে থাকতে হলে বিষয়টি কি তার প্রাথমিক ধারণা থাকা আবশ্যক।
আমি নিজের যতটা অনুধাবন করা হয়েছে তার আলোকে এই বিষয়টি সম্পর্কে আপনাদের একটি ধারনা দেবার চেষ্টা করেছি। আশাকরি বিষয়টি গুরুত্ব দিবেন এবং এই ইকো সিস্টেম  ব্রেক  করবেন।
★সাজিদ বিন জাহিদ: জয়বাংলা ইয়থ এওয়ার্ড জয়ী রাঙ্গামাটি ভিত্তিক ব্লাড ডোনেশন গ্রুপ  “জীবন ” ও “জীবন স্কিল ড্রপস” এর প্রতিষ্ঠাতা এবং আইটি এক্সপার্ট