“জো বাইডেন, কমালা হ্যারিস এর বিজয় গণতান্ত্রিকামী সভ্য সমাজের বিজয় এবং বাংলাদেশের নির্লজ্জ ভংগুর নির্বাচন কমিশনের বাচালতা”
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন
লেখক ও আইনজীবী
“গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার পূর্বশর্ত হল জনগণের অধিকার প্রয়োগের নিশ্চয়তা”। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যে কোন স্বৈরাচারী শাসককে সরল পথে ক্ষমতা থেকে বিতাড়িত করার অন্যতম মাধ্যম। সে ক্ষেত্রে শক্তিশালী সুশিক্ষায় শিক্ষিত, ব্যক্তিত্ব ও মেরুদন্ড সম্পূর্ণ এক ঝাক প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের প্রয়োজন। তাদেরকে সংবিধানের ভাষায় বলা হয় “নির্বাচন কমিশন”। খেলোয়াড়দের ভাষায় বলা হয় ‘রেফারী’। কমিশন বা রেফারীর কাছে বাঁশি থাকবে। কোন অন্যায় বা ত্রুটি হলে রেফারী বা কমিশন বাঁশি বাজিয়ে বা সিদ্ধান্ত দিয়ে তার বিচারিক বা সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন করবে।
যখনই কমিশন তার যথাযথ দায়িত্ব পালনে দৃঢ়তার পরিচয় দিতে সক্ষম হবে, তখনই খেলোয়াড়, দর্শক এবং সাধারণ জনগণের কাছ থেকে বাহবা কুড়াবে স্বাভাবিকভাবেই। গণমাধ্যম কর্মিরা তাদের প্রশংসায় বলিষ্ট ভূমিকা পালন করবে। এটাই স্বাভাবিক। যেমনটি ২০২০ সনের ৩রা নভেম্বর জনগণের রায়কে ভিন্নখাতে নেওয়ার সকল অপচেষ্টা রুখে দিয়েছে, সে দেশের সংবাদকর্মীরা। কমিশন বা রেফারী দীর্ঘদিন ধৈর্য ধরে, কমিশনের পক্ষ থেকে একটি মাত্র কথা বলা হয়েছে, “নির্বাচন সঠিক ও স্বচ্ছ ভাবে সম্পূর্ণ হয়েছে”। কমিশনের এ বক্তব্য শুনে গোটা যুক্তরাষ্ট্র আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছে। কেননা কমিশনের উপর সাধারণ জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আছে বলেই কমিশনের সকল কার্যক্রমেই প্রশংসা করে থাকে। গণতন্ত্রের বিজয় হয়েছে। সংবাদ কর্মীরা আইকনের বা পথ প্রদর্শকের ভূমিকায় থেকে দল মতের উর্ধ্বে উঠে দর্পনের ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হয়েছে। তারা কিন্তু মুখে গণতন্ত্র, বুকে স্বৈরতন্ত্র এ দ্বৈত-চরিত্রে বিশ্বাসী নহে। এ চরিত্র লাল পালনকারীদের প্রকৃত মুসলমানগণ মুনাফিক আখ্যা দিয়ে থাকে। মুনাফিকের চরিত্র দেশ এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর। যেমনটি কিছু কিছু ক্ষমতাধর বাংলাদেশী বিশেষ ব্যক্তিদের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। যা দেশ, জাতি এবং সমাজের জন্য লজ্জার, ঘৃণার। যেমনটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সদ্য সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে “রিপাবলিকান নীতি নির্ধারকরা” তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে আমরা দ্বৈত চরিত্রে বিশ্বাসী নহে।
“নির্বাচন কমিশন” প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে, আমরা সৎ। কাহারও চঁৎঢ়ড়ংব ঝবৎাব এর জন্য আমরা নহে। যেমনটি ডোনাল্ড ট্রাম্প করতে চেয়েছিলেন। তা কিন্তু পারেন নি। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার প্রতীক। তাদের ঐতিহ্য রক্ষা করার কারণে বিশ্বে তাদের অবস্থান আরও একধাপ এগিয়ে গেল। জনগণ জানে তাদের প্রতিনিধি কখন কে হওয়া উচিত। প্রার্থীদের অতীত অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সততা, দলীয় আদর্শে উদ্বুদ্ধ কি না ? ন্যায় নীতির প্রতি আস্থাশীল কি না এসব যাচাই বাছাই করে দলীয় নীতি নির্ধারকরা প্রার্থী নির্বাচন করে থাকেন। যেমনটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের “ডেমোক্রেটিক পার্টি’ ২০২০ এর নির্বাচনে প্রার্থী দিতে ভুল করেনি। জো-বাইডেন এবং তার রানিংমেট কমালা হ্যারিস এর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সৎ চরিত্র ইত্যাদি গুণের অধিকারী। সেজন্য জনগণ তাদেরকে বিভিন্ন সাংবিধানিক পদে নির্বাচিত করে আসছে প্রায় ৩০/৪০ বছর থেকে। যথাযথ মর্যাদার সাথে দায়িত্ব পালনের জন্য দল তাদেরকে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ নির্বাহী পদ প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে মনোনয়ন দিয়েছে। সাধারণ জনগণ স্বচ্ছ ভোটের মাধ্যমে দলীয় সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে বিপুল ভোটের ব্যবধানে নির্বাচিত করতে সক্ষম হয়েছে। আর এ সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে লাল সবুজের পতাকাবাহী বাংলাদেশী জনগণ যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিসকে ভোট দিয়েছে। তাদেরকে নির্বাচিত করতে পেরে কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে, বাংলাদেশী জনগণের মধ্যে মিষ্টি বিতরণ সহ আনন্দ শোভাযাত্রা তথা গণতন্ত্রে শোভাযাত্রার রক্তিম শ্মারথী হিসাবে জো বাইডেন ও কমালা হ্যারিসকে আগাম জানান দিয়েছে। সফল হয়েছে বাংলাদেশী মুক্তিকামী মানুষের চাওয়া পাওয়া।
অসূস্থ হলে ভাল ডাক্তার, আইনি সমস্যায় পড়লে ভাল ও দক্ষ আইনজীবি খুজি, কিন্তু ভাল আইন প্রনয়ন ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে এসব মেধাসম্পূর্ণ লোকদের প্রয়োজনবোধ করিনা। যেমনটি ১/১১ এর সময় বেগম জিয়া, শেখ হাসিনা, এরশাদ তাদের সকলের তো আইনজীবি ছিলেন সদ্য প্রয়াত ব্যরিষ্টার রফিকুল হক। জনাব হক জীবনে যা আর্থিক উপার্জন করেছেন, তার সবই বিলিয়ে দিয়েছেন আর্তমানবতার সেবায়।
রাজনীতিবিদদের মধ্যে কি কেহ এ মহৎ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত দেখাতে পারবেন ? না, কিছুতেই না। রাজনীতিবিদরা দশ টাকা দিলে মিডিয়াকে ৯০ টাকা দিয়ে ঢাক ঢোল বাজিয়ে প্রচার করেন। এখানেই ব্যারিষ্টার রফিকুল হক এবং বাংলাদেশী সংস্কৃতিতে গড়ে উঠা রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিস্তর ফারাক। ব্যারিষ্টার হক কে যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান করার ইচ্ছা সুশিল সমাজের পক্ষ থেকে দাবী উঠতে শুরু হল, তখনই ক্ষমতাসীন রাজনীতি বিদদের মাথা খারাপ হতে লাগল। ব্যারিষ্টার রফিকুল হককে কতিপয় দুর্বৃত্ত, রাজনীতিকরা সমালোচনা করতে শুরু করলেন। জনাব হক কিন্তু কখনও কোন পদের লালায়িত ছিলেন না। ছিলেন সত্য, ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠার মূর্ত প্রতীক। যেমনটি ১/১১ এর সময় বেগম জিয়া এবং শেখ হাসিনা তাদের উভয়ের পক্ষে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার শোভাযাত্রায় শরিক হয়েছিলেন। সে সময় তাদের পক্ষ থেকে কোন আর্থিক সম্মানী না নিয়ে তাঁদের পক্ষে বলিষ্ট ভূমিকা পালন করছেন আইন-আদালতে। এসব গুণ সম্পূর্ণ মানুষ বাংলাদেশে যথেষ্ট আছেন। কিন্তু এসব গুণী লোকদের কদর দলীয় ফোরামে নেই বললেই চলে। দলীয় ফোরামে মূল্যায়ন আছে, অসৎ পথে উপার্জিত কোটি কোটি টাকার মালিকদের। দলীয় নীতি নির্ধারকরা তাদের নিয়ামক শক্তি হচ্ছে, এসব অসৎ লোক। তাদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে সাধারণ জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়ে থাকে। এসব চরিত্রহীন লোকেরা নির্বাচিত হওয়ার পর তাদের আখের গোছানোর জন্য প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে সাংবিধানিক পদ অলংকৃত করে আইনসভার সদস্য হয়ে থাকে। এসব ধান্দাবাজ লোকদের কাছ থেকে ভাল আইন প্রয়োগ, সাধারণ জনগণ আশা করে না, করবেও না। আইনসভার সদস্য নিজে নিজেকে বিভিন্ন সভায় পরিচিত হতে দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রে। আমি আপনাদের এম.পি। জনগণ বলে আমরা তো আপনাকে ভোট দেইনি। তখন এম.পি সাহেব হাসিয়া বলে ওরে বোকা সাধারণ জনগণ…..। জনগণ ও উত্তর দিয়ে থাকে ১/১১ এলে তোদেরকে হয় দেশ ছেড়ে পালাতে হবে অথবা ল্যাংটা করে চোরের মত বা ডাকাত সর্দারের মতো রিমান্ডে নিয়ে কোথায় কি চুরি করেছিস ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করবে প্রশাসন। আর জনগণ দূর থেকে হাসবে, আর বলবে হচ্ছে ? যেমনটি নিকট অতীতে পাপলু, বেগম পাপলু, শ্যালিকা, হাজী সেলিম, ইরফান সেলিম, শাহেদ, জি.কে শামীম, এনু, রুপম, ওমর ফারুক গংদের দিয়ে আলামত শুরু হয়ে গেছে।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনেক সাধারণ নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচন কমিশন আছে, নির্বাচন কমিশনের অনেক সদস্য ব্যর্থ হয়েছেন সঠিক নির্বাচন দিতে। তাদের নিয়োগ নিয়ে অনেক বিতর্ক আছে, বিতর্কিত কার্যক্রমের জন্য তাদেরকে অনেক গালমন্দ শুনতে হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান কমিশনের ব্যর্থতার দায় স্বাধীনতার পর সকলে কমিশনের ব্যর্থতা= বর্তমান কমিশনের ব্যর্থতার সীমা অতিক্রম করে, ভংগুর, ধ্বজভংগ, প্রতিবন্ধী, বাঁচাল, হাস্যকর, ল্যাংড়া নির্বাচন কমিশনে পরিনত রয়েছে।
বর্তমান নির্বাচন কমিশনের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কোটায়, শুধু কতিপয় বেনিফিসিয়ারী বাদে। একটা উদাহরণ দিয়ে শেষ করতে চাই: ড: বায়েছের ভাষায়, নষ্ট গাড়ীর ড্রাইভার, মরা ঘোড়ার ছওয়ার এবং বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে লাভ কি ? এ কথার অর্থ দাঁড়ায়, নষ্ট গাড়িতে যত ভাল ড্রাইভার হউক না কেন, গাড়ী চলবে না, কারণ গাড়িটা নষ্ট, মরা ঘোড়ায় যত ভাল সওয়ার হউক না কেন, ঘোড়া তো দৌড়াবে না, কারণ ঘোড়াটি মরা। বন্ধ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাইস চ্যান্সেলর হয়ে লাভ কি ? কারণ সে বিশ্ববিদ্যালয়ে তো ছাত্র নেই। সুতরাং নখ, দন্তহীন, মুখের ভাষায় এবং কলমের খোচায় স্বাক্ষর সম্পূর্ণ স্বাধীন সার্বভৌম নির্বাচন কমিশন রেখে লাভ কি ? আমার বোধগম্য হচ্ছে না। বোধগম্য হচ্ছে শুধু সাধারণ জনগণের অর্থের অপচয় ছাড়া বৈ কি ? মাঠে খেলোয়াড় বা প্রার্থী বা দর্শক বা নির্দিষ্ট প্রতীক বা গোল বার থাকলে, খেলোয়াড় বা প্রতিদ্বন্ধী প্রার্থী গোল খেলে বা প্রার্থী প্রতিবন্ধিতা করে হারলে সে ক্ষেত্রে লজ্জার কিছু নাই। এ ক্ষেত্রে রেফারী বা নির্বাচন কমিশন তার সঠিক দায়িত্ব পালন করেছে মাত্র। এখানে তো তাদের দোষের কিছু নাই। বরং জনগণ প্রশংসায় পঞ্চমুখ হবে কমিশনের সঠিক দায়িত্ব পালনের জন্য। কিন্তু বর্তমানে বাঁচাল প্রধান নির্বাচন কমিশনার সাহেবের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন সম্পর্কে উদ্ভট মন্তব্যের জন্য বাংলাদেশ কি লজ্জাবোধ করছে না ? এ দায় কি কমিশন এড়াতে পারে ?
প্রবাদ আছে “ খেলোয়াড় সুলভ মনোবৃত্তিই মানব জীবনের চালিকাশক্তি। এখানে জয় পরাজয় তো থাকবেই, বিজয়ে গৌরব, পরাজয়ে কোন গ্লানি নেই ” “প্রতিদ্বন্ধিতা হবে, প্রতিহিংসা থাকবে না” এগুলো লালন পালন করার তো রেফারী বা নির্বাচন কমিশনের কাজ। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশণ এ ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ ব্যর্থ।
লেখক: এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন-সভাপতি, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার, সিলেট।


