পরিবার হোক সুন্দর জীবনের অনুপ্রেরণার উৎস।

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২০ 629 views
শেয়ার করুন

 

আমাদের দিনের শুরুটা ঘর থেকেই। শেষটাও তাই। সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে পাল্টে গেছে সবার জীবন- যাপনের প্রক্রিয়া। খাওয়া-দাওয়া, পোশাক-আশাক কিংবা সাজগোজে পরিবর্তন আসে প্রতিটি যুগে, দশকে, শতাব্দীতে। কিন্তু পারিবারিক বন্ধনের প্রভাব এখনও দারুণ কর্মব্যস্ততায় কিংবা নিবিড় অবসর মুহূর্তে প্রতিটি মানুষকে স্পর্শ করে। সুন্দর জীবনের অন্যতম শর্ত সুন্দর পারিবারিক সম্পর্ক ।

পরিবারের প্রতিটি সদস্যের সম্পর্ক যদি চমত্কার আন্তরিক হয় তাহলে জটিল, অমসৃণ জীবনের নানা সমস্যা-সংকট অনেকটা এড়িয়ে সুখী ও সুন্দর জীবন গড়তে পারেন । মানবতার ভবিষ্যত্ রচিত হয় পরিবারকে কেন্দ্র করে । মূলত পরিবার হলো সমাজের মৌলিক কোষ বা সেল । এ কারণেই একটি সুস্থ সুন্দর স্বচ্ছল পরিবার একটি সুন্দর সমৃদ্ধ সমাজ গঠন করে । অন্যদিকে দুর্বল ভারসাম্যহীন পরিবার সমাজে ঘুণ ধরায়। আসলে পরিবারই একজন মানুষকে ধাপে ধাপে তৈরি করে । একটা মানুষ সেভাবেই বেড়ে উঠবে পরিবার তাকে যেভাবে গড়ে তুলবে। প্রকৃতপক্ষে শিশুর সঠিক মানসিক বিকাশের জন্য পরিবারের সান্নিধ্য খুবই প্রয়োজন। স্নেহ, আদর, সোহাগ, যত্ন এবং প্রয়োজনে শাসন তো প্রথমে পরিবার থেকেই আসবে। মা-বাবা, ভাই-বোনের আদর-সোহাগ বড় বেশি প্রয়োজন তার। একসময়ে সামাজিক অটুট বন্ধনে যৌথ পরিবার ছিল নিউক্লিয়াসের মতো। সভ্যতার উন্নতির ছোঁয়ায় আজকাল পরিবারগুলো ক্রমেই ভেঙে যাচ্ছে। ভাঙন শুধু পরিবারে নয়, মূল্যবোধেও আঘাত হানছে। দ্রুত নগরায়ন হচ্ছে, শিল্পায়নও হচ্ছে। মানুষ বাড়ছে। কিন্তু হারিয়ে যাচ্ছে পরিবারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা মানুষের স্বাভাবিক মানবিক মূল্যবোধ।

আগে যৌথ পরিবারে এক চুলার ধারণা ছিল। একই উঠোনে সবার হাসি-কান্না, আনন্দ-বেদনা এক জোট হতো। পরিবারে একজন থাকতেন ছায়ার মতো। সুখে-দুঃখে, সাফল্যে ব্যর্থতায় আনন্দ-বেদনায় তিনিই সবাইকে আগলে রাখতেন। এখন একক পরিবারের আধিপত্যে যৌথ পরিবারের ধারণা ভেঙে যাচ্ছে। বড় বড় শহরগুলোতে জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অ্যাপার্টমেন্টের সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমনি বাড়ছে ফ্ল্যাটবাসীর সংখ্যা। যার ফলে একটি যৌথ পরিবার ভেঙে অনেকগুলো একক পরিবার সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবারের এই ধারণাটি বিকশিত হয় একটি সরল সমাজনীতির ভিত্তিতে। নরনারীর সম্পর্কে পারস্পরিক বোঝাপড়া আর শেয়ারিং ‘একক পরিবার’ ব্যবস্থার মূল ভিত্তি। এই কঠিন পৃথিবীর বুকে তখন থেকেই পরিবার হচ্ছে আপন অস্তিত্ব বিকাশের এক টুকরো মরুদ্যান। সমাজে পরিবারের গুরুত্ব অপরিসীম।

কেননা ব্যক্তির সমন্বয়েই সমাজ। ব্যক্তির যাবতীয় বিকাশ, মননগত উন্মেষ, ব্যক্তিত্ব গঠিত হয় পারিবারিক অবকাঠামোর ভেতরেই। আমাদের দেশের কনসেপ্ট নয় এটা, পাশ্চাত্য বিশ্বের প্রয়োজনে উদ্ভুত। যদিও আমাদের সামাজিক প্রেক্ষাপট পাশ্চাত্যের তুলনায় ভিন্ন। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনেক প্রভাব পড়লেও আমাদের সমাজে পারিবারিক বন্ধন তাদের তুলনায় অনেক সুদৃঢ়। এখনও সমাজের বেশিরভাগ মানুষ পারিবারিক মূল্যবোধ ও আদর্শ অনুসরণে জীবন-যাপন করতে চায়।

সামাজিক অবক্ষয় যাতে আমাদের পারিবারিক সুখ-শান্তিকে নষ্ট করতে না পারে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে সবাইকে। আমাদের কাছে ঘর একত, পবিত্র জায়গা। সব পাখি দিন শেষে যেমন তার নীড়ে ফিরে আসে আমরাও আমাদের কর্মব্যস্ততার শেষে ঘরে ফিরে আসি। তবে ঘরে অবশ্যই শান্তি থাকতে হবে। পরিবারের মধ্যে ভালোবাসায় ভরপুর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ও চমত্কার সুন্দর পরিবেশ থাকতে হবে। আগে নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে হবে, তারপর দেশকে ভালোবাসতে হবে। কারণ নিজের পরিবারকে ভালোবাসতে না পারলে নিজের দেশকে ভালোবাসা সম্ভব হবে না। সবাইকে মনে রাখতে হবে, ব্যক্তি তখনই শক্তিশালী হবে যখন তার পারিবারিক অবকাঠামো হবে শক্তিশালী ও মজবুত। তাই রাষ্ট্র ও সমাজসহ সবার দায়িত্ব পরিবারকে শক্তিশালী করে সুস্থ সামাজ সুন্দর একটি রাষ্ট্র উপহার দেওয়া।