“বাংলাদেশকে নিয়ে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার মূল্যায়ন ও প্রাসঙ্গিক আলোচনা”

প্রকাশিত: ৮:৪৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৩, ২০২০ 670 views
শেয়ার করুন

গত ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ সংখ্যায় জুলহাস আলম বিভিন্ন তথ্য উপাত্তের আলোকে বাংলাদেশকে এশিয়ার মধ্যে চীনের পরই স্থান করে নিয়েছে এ মর্মে নিবন্ধন প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্টে কোন কিছু প্রকাশিত হওয়ার পূর্বে, যথাযথ কর্তৃপক্ষ ভাল করে যাচাই বাছাই করেই প্রকাশিত হয়। সেজন্য তাদের মূল্যায়নকে সর্বাগ্রে গুরুত্ব আরোপ করা হয়ে থাকে।

এ ক্ষেত্রে কোন একক সরকারের কৃতিত্ব বলে দাবী করার কোন যুক্তিসংগত কারণ নেই। এসবের দাবীদার সাধারণ জনগণ। সাধারণ জনগণ তাদের নিজস্ব শ্রম, মেধা, অর্থ, চিত্ত-বিত্তকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখার জন্য মেধা বিনিয়োগ করে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকায় বাংলাদেশকে এশিয়ার ২য় পরাশক্তিধর রাষ্ট্র হিসেবে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন। যেমন: কৃষি, গার্মেন্টস, শিল্প, রেমিটেন্স যুদ্ধা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ স্বেচ্ছায় নিজস্ব অর্থকড়ি খরচ করে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এসব শ্রেনী ও পেশার মানুষের কদর সরকার কর্তৃক যথাযথ মূল্যায়ণ হয় না। এসব শ্রেণী পেশার মানুষ কখনও দুর্নীতি করে না। করবেও না। সম্প্রতি কোভিড-১৯ এর সময় বিভিন্ন দেশে অর্থনৈতিক মন্দাভাব ও খাদ্য অভাব, পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এসব সাধারণ জনগণের স্বেচ্ছা শ্রমের মাধ্যমে অর্থনীতির চাকাকে ধরে রাখতে সক্ষম হচ্ছে। কোভিড-১৯ এখনও তেমন কোন ক্ষতি করতে পারেনি। কৃষক তার কৃষি কাজের মাধ্যমে খাদ্যের চাহিদা পুরণ করতে সক্ষম হচ্ছে। গার্মেন্টেস শিল্প তার নিজস্ব শ্রমিকদের পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে সম্ভব হচ্ছে। রেমিটেন্স যুদ্ধারা তাদের শ্রমকে বিদেশে বিনিয়োগ করে তাদের কষ্টার্জিত অর্থ দেশে প্রেরন করে অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করিতেছে। বাংলাদেশের জিডিপির সিংহভাগই এসব খাত থেকে এসে থাকে এবং সরকার এসব খাতকেই পুজি করে রাজনৈতিক সফলতা বলে দাবী করে বাহবা নিতে চায়। কিন্তু বাস্তবে সরকারের এখানে তেমন কোন ভূমিকা নেই বললেই চলে। যেখানে জি.ডি.পি বা ‘‘গ্রস ডমেস্টিক প্রোডাক্ট‘‘ বর্তমানে প্রায় ৭.২০ এবং মাতাপিছু আয় ১৮৮৮ ডখার। সেখানে প্রতিবেশী দেশ ভারতের জি.ডি.পি ৬.৮০ এবং মাতাপিছু আয় ১৮৮৭ ডলার।

আমাদের স্বশস্ত্র বাহিনী বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চৌকস স্বশস্ত্র বাহিনী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। যেমনটি করেছিল মাত্র ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের কাছে থেকে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনে। তখন স্বশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে মতভেদ থাকা স্বত্ত্বে কতিপয় সেনা সদস্য ও সাধারণ জনগণ অল্প সময়ে প্রশিক্ষন নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের রনাঙ্গঁনে ঝাপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করে বিশ্বের মানচিত্রে লাল সবুজের পতাকা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।

বর্তমানে সশস্ত্র বাহিনী আর পাকিস্তান আমলের স্বশস্ত্র বাহিনী এক নহে। বর্তমানে স্বশস্ত্র বাহিনী অত্যন্ত পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে যে কোন কঠিন পরিস্থিতিতে সাধারণ জনগণকে সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে। এর কারণ ও আছে। বাংলাদেশ স্বশস্ত্র বাহিনীর সকল সদস্য হোমজন বা ভাষা, সংস্কৃতি, কৃষ্টি পারষ্পরিক বোঝাপড়া, জাতিয়তাবোধ, ধর্ম ইত্যাদি ক্ষেত্রে একই স্বত্তা বিরাজমান। সুতরাং বাংলাদেশ স্বশস্ত্র বাহিনী তাদের সকলের মধ্যে অতিসহজে বোঝাপড়া করে যে কোন সিদ্ধান্ত নিতে দেরী হয় না।
পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারত, চীন বা অন্য কোন রাষ্ট্রের স্বশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে তা কিন্তু পরিলক্ষিত হয় না। তাদের একেক প্রদেশের ভাষা, ধর্ম, কৃষ্টি ভিন্ন ভিন্ন।
বাংলাদেশের দক্ষিনে গভীর সমুদ্র বন্দর আছে। যেখানে আমদানী রপ্তানি করতে বা মালামাল খালাস করতে খরচ কম হয়। প্রকৃতি আমাদের অনুকুলে থাকায় সিজনাল শাক-শব্জি, ফলজ-বনজ, সুস্বাদু মাছ, গরু ছাগল ইত্যাদি উৎপাদনে খরচ তেমন একটা হয় না। অর্থাৎ কবি গুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর যথাযথই বলেছেন “ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি” আর জাতীয় কবি নজরুল ইসলাম বলেছেন “ চল চল উর্ধগগণে বাজে মাদল, নি¤েœ উতলা ধরনী তল, চলরে চলরে চল……..”

তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে, কেন বাংলাদেশকে অনুন্নত রাষ্ট্র পরিচয় দিতে হচ্ছে ? এর যথার্থ কারণ ও আছে। রাজনীতিবিদরা প্রায়ই গর্ব করে বলে থাকেন, বিশ্বে যা কিছু অর্জিত হয়েছে, তার অধিকাংশ কৃতিত্বের দাবীদার রাজনীতিবিদরা। এমনকি বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা ও বলে থাকেন। এটা কিন্তু সত্য। সাধারণ জনগণকে পরিচালনার জন্য সৎ, যোগ্য, দক্ষ, জবাবদিহি অপারেটর বা সরকারের উপস্থিতি দরকার। ভাল অপারেটর না হলে যে কোন মিশিন ভাল ভাবে চলতে পারেনা ঠিক ভাল সরকার হতে হলে ভাল জবাবদিহি সরকার ব্যবস্থা না হলে, সাধারণ জনগণের অর্জিত উন্নয়নকে তার অভিষ্ট লক্ষে পৌছাতে ব্যর্থ হবে।

তখনই সৎ, জবাবদিহিমূলক রাজনীতিবিদরা যথাযথ নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। যেখানে বর্তমান রাজনীতিবিদরা ভঙ্গুঁরে রাজনীতিবিদদের লালন পালনের কারণে একদিকে সাধারণ জনগণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, অন্যদিকে রাজনীতির প্রতি সাধারণ জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হচ্ছে। যার কারণে চোর চোট্টাদের দৌরাত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে। উত্তান হচ্ছে পাপলু, শাহেদ, সাবরিনা, হাজী সেলিম, বেগম পাপলু সহ হাজার হাজার পাপলু। বাংলাদেশের রাজনীতিতে হাইব্রিড নেতারা রাজনৈতিক অঙ্গঁনকে জবর দখল করে আছেন। অন্যদিকে প্রকৃত রাজনীতিবিদরা বাক প্রতিবন্ধি হয়ে পাগলের মত যত্রতত্র হাউমাউ করিতেছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার ব্যবস্থায় আইন সভার অনেক সদস্যকে নিজের পরিচয় দিতে শুনা যায়।

আমি আপনাদের এম.পি বা সংসদ সদস্য। তখন সাধারণ জনগণ একে অপরের দিকে তাকিয়ে বলতে শুনা যায় কি লজ্জা ! আপনাকে তো আমরা ভোট দেইনি বা আপনাকে তো আর রাজনীতির মাঠে জনগণের অধিকার নিয়ে কোন কথা বলতে শুনিনি। এমন পরিস্থিতিতে এম.পি সাহেব বিব্রত বোধ করেন। কি লজ্জা ! জগনণ যদি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করত, তাহলে একদিকে সে নিজেকে সম্মানীত বোধ করত, অন্যদিকে সোনার ছেলে আইনসভার সদস্য হয়েছে, ভাল আইন তৈরিতে সহযোগীতা করছে, সংসদে আমাদের প্রতিনিধিত্ব করছে সেজন্য তাকে ধন্যবাদ দিত সাধারণ জনতা। কিন্তু বর্তমান শাসন ব্যবস্থায় পেশাদার রাজনীতিবিদরা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। কতিপয় কলা কৌশলীরা কলা কৌশলের মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গঁনকে জবর দখল করে আছেন। জনগণ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। সেজন্য অসৎ রাজনীতিবিদরা মাঠ ও বন্দুকের জোরে দখল করে আছেন শাসন ব্যবস্থাকে। মানুষ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার কারণে অন্তর থেকে ঘৃণা প্রকাশ করছে।

সৎ, যোগ্য রাজনীতিবিদরা রাজনীতির প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, মেধার রাজনীতি বিলুপ্ত হচ্ছে। দিন দিন অসৎ রাজনীতিবিদদের উত্থান হচ্ছে। পাপলু গংরা রাজনীতির মাঠ দখল করে আছে। সেজন্যই জাতীর জনক বঙ্গঁবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যথার্থই বলেছেন “ সবাই পায় সোনার খনি, আমি পেয়েছি চোরের খনি ”। এসব কথা রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন। আর ও বলেছিলেন, গেল গেল সাত কোটি কম্বল গেল, আমার কম্বলটি গেল কোথায় ইত্যাদি। যা বর্তমান কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। মাঠ প্রশাসনে যে দপ্তরেই হাত দিবেন, সেখানেই পাবেন প্রদীপ, মিজান, শাহেদ, সাবরিনা, বাবুল আক্তার, আকবর, মোয়াজ্জেম, হাজী সেলিম, ইরফান সেলিম, স¤্রাট, এনু, রুপম, পাপিয়া, পাপলু গংরা আধিপত্য বিস্তার করে দেশকে দুর্নীতিতে নিমজ্জিত করে রেখেছে। অন্যদিকে সৎ, যোগ্য মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা রাজনীতিবিদরা নিরব দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে। কথা বললেই ও এস.ডি. রাজনীতিবিদরা পাবেন সংস্কার বাদীর উপাধী। এরপরও তো সৎ মানুষদের এগিয়ে আসা সময়ের দাবী। তখনই সাধারণ জনগণকে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা যে স্বপ্ন দেখিয়েছে সে স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে হলে সৎ যোগ্য, চরিত্রবান রাজনীতিবিদরাই নেতৃেত্ব দিয়ে তাদের স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করে সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে আসা সময়ের দাবী ।

লেখক: এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন, সভাপতি , সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার ও কলামিষ্ট।