একজন বদর উদ্দিন কামরান”

প্রকাশিত: ৬:৪৭ অপরাহ্ণ, জুন ২৮, ২০২০ 646 views
শেয়ার করুন
  • নজরুল ইসলাম রুহেল

যার নেশা ছিল সুস্হ রাজনীতি ও মানবসেবা। দলমত নির্বিশেষে সবাইকে সমান চোখে দেখতেন। তিনি ছিলেন সংস্কৃতিমনা ও অত্যন্ত সাদা মনের মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন।

অনেকেই “তো” নেতা কিন্তু ক”জন মাটি ও মানুষের নেতা হতে পেরেছেন। তিনিই মাটি ও মানুষের নেতা ছিলেন যার মধ্যে ছিল কর্মীদের প্রতি অগাধ ভালবাসা। একজন অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ এবং দক্ষ জনপ্রতিনিধি ছিলেন। স্বাধীনতার চেতনাকে মনে প্রাণে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথে পা বাড়ানো এক অদম্য যোদ্ধার নাম কামরান।

স্বৈরাচারী শাসনামল, গণতন্ত্র তখন ভূলুণ্ঠিত, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামীলীগের নাম মুখে নেয়া ছিল নিষিদ্ধ। বিএনপির শাসনামল, দেশ দুর্নীতি ও বিশৃঙ্খলার বেড়াজালে বন্দী। প্রকাশ্যে সত্য ও ন্যায়ের কথা বলার সাহসী এক অগ্রসেনানী। ২০০৪, বিএনপি জামাতের জঙ্গী তান্ডবের বিরুদ্ধে এক মানবপ্রাচীর দেয়াল গড়ে তোলার নাম কামরান। প্রিয় নেত্রীর মুক্তির মিছিলের এক অগ্র সৈনিকের নাম বদর উদ্দিন কামরান।

জনগনের আস্থা ও ভালবাসার নিদর্শন স্বরূপ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়া এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বের নাম কামরান। তিনিই হয়েছিলেন সফল সিসিক মেয়র, যার ভালবাসার আশ্রয়স্হলে স্হান পেত সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। দেশ মাতৃকার জন্য অকাতরে কাজ করে যাওয়া তৃণমূল থেকে উঠে আসা এক বলিষ্ঠ নেতৃত্বের নাম কামরান। আরাম আয়েশ ত্যাগ করে শুধুমাত্র জনগণের কল্যাণের উদ্দেশ্যে সাদামাটা জীবন নিয়ে  কর্মীদের শ্রদ্ধা-আস্থা-বিশ্বাস ও ভালবাসার শেষ আশ্রয়স্থল ছিলেন তিনি।
দেশরত্নের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দিনরাত পরিশ্রম করা এক ত্যাগী নেতার নাম কামরান।

রাজনীতির তীর্থস্থান শাহজালালের পূর্ণ ভূমিতে তার জন্ম। তবে তীর্থের কাক নন, তিনি তীর্থগুরু। সিলেটের রাজনীতির তিনি পথিকৃৎ। তিনি হাজারো ছাত্রনেতা ও যুবনেতাদের রাজনীতির শিক্ষক। তিনি শুধু মাত্র একটি নাম নয়। একটি আবেগ ভালবাসার স্হান।

বদর উদ্দিন আহমেদ কামরান ১৯৫১ সালের ১ জানুয়ারি সিলেট নগরীর চরপাড় মহল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম বশির উদ্দিন আহমেদ ও মাতার নাম নুরুননেসা বেগম লাকলেন। তিনি দুর্গা কুমার পাঠশালায় প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। প্রাথমিক শিক্ষা লাভের পর তিনি ১৯৭১ সালে সিলেট সরকারী পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। এরপর তিনি উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে এখান থেকে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৯৭৬ সালে তিনি মদন মোহন কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭৩ সালে উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় তিনি সিলেটের ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হয়েছিলেন।

কর্মজীবন:

তিনি সিলেট পৌরসভার কনিষ্ঠ কমিশনার হিসাবে নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি সিলেট পৌরসভায় কমিশনার হিসাবে তিনবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৫ সালে তিনি সিলেট পৌরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ১৯৮৯ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত তিনি আওয়ামী লীগের সিলেট নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে তিনি হন ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন।

২০০৩ সালের মার্চ মাসে মুহাম্মদ আবদুল হককে পরাজিত করে তিনি সিলেট মহানগরের মেয়র হন। ২০ হাজারের বেশি ভোট পেয়ে কামরান বিজয়ী হন।

২০০৭ সালে তিনি সিলেট কিচেন মার্কেটের একটি মামলায় গ্রেপ্তার হন।মামলায় জামিন পেলেও কামরানকে জরুরি ক্ষমতা বিধিমালার দায়ের করা অন্য মামলায় আটক করা হয়।

২০০৮ সালে কারাবন্দি থাকা অবস্থায়, ২০০৮ সালের মেয়র নির্বাচনের প্রতিযোগিতা করার জন্য তিনি তার মনোনয়ন ফরম জমা দেন ও মেয়র হিসেবে দ্বিতীয় বার নির্বাচনে জয় লাভ করেন। ভোটাররা তাকে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা অন্যায়ভাবে আটক হিসাবে দেখেছিলেন। নির্বাচনে তিনি তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বীর চেয়ে ৮৩ হাজার বেশি ভোট পেয়েছিলেন। ২০০৮ সালের ১৭ আগস্ট তাকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরিত করা হয়। ২০০৮ সালের ৫ সেপ্টেম্বর তিনি কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।

কামরান ২০১৩ ও ২০১৮ সালের মেয়র নির্বাচনে আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে পরাজিত হন।

২০০২ সালের সম্মেলনে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর ২০০৫ এবং ২০১১ সালের সম্মেলনেও পুনরায় নির্বাচিত হয়ে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ দায়িত্ব পালন করেন।

একজন দক্ষ সংগঠক,
একজন সাহসী নেতৃত্ব-
একজন মানতার ফেরিওয়ালা-
নীতি-নৈতিকতা ও সততার প্রতিচ্ছবি,
বঙ্গবন্ধুর আদর্শের
বিশ্বস্ত সৈনিক- শেখ পরিবারের
প্রতি ভালোবাসায় আপ্লুত।
রাজপথের সাহসী প্রকৃত যোদ্ধা ও আপামর জনতার স্পন্দন।

অসহায়, দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষের পাশে আপনার ভালবাসা ও মায়া-মমতার হাত অনন্য ও অনবদ্য ইতিহাস হয়ে থাকবে জমিনে।
নেতাকর্মীদের আপনি যেভাবে ভালবেসে আঁকড়ে রাখতেন তাতে মহানুভব নেতার প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে!

তাইতো বলি কবির ভাষায়……

কীর্তি তোমায় রাখবে বাচিয়ে,
ওমর করে,
এ বিশ্ব জুরে।
মরেও তুমি হবে ওমর,
মানুষের অন্তরে।
ইতিহাসে হবে অম্লান।
জগদ্বিখ্যাত, জনতার নেতা,
তুমিই মেয়র কামরান।

_____________________

লেখক: সাধারণ সম্পাদক, বায়ান্ন টিভি দর্শক ফোরাম, কেন্দ্রীয় কমিটি।