করোনা ও আমাদের বর্তমান অবস্থা

সঞ্জয় ঘোষ সঞ্জয় ঘোষ

বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ৭:৪৬ অপরাহ্ণ, জুন ২৭, ২০২০ 391 views
শেয়ার করুন

পৃথিবীতে করোনার আবির্ভাব ২০১৯ এর ডিসেম্বরে। এখন পর্যন্ত এর বয়স ৭ মাসেরও কম। কিন্তু এই ৭ মাসের মধ্যেই আমাদেরকে কঠিন বাস্তবতা শিখিয়ে দিয়েছে। পৃথিবীতে সবচেয়ে আপনকেও মুহুর্তের মধ্যে পর করে দিয়েছে। অনেক সন্তান তার পিতামাতাকে ফেলে গেছে রাস্তায় অথবা কোন জঙ্গলে। সামাজিক ভাবে এখন সবাই একঘরে থাকার মতই আছি। অতীতে সমাজের কোন পরিবার অসামাজিক কোন কাজ করলে থাকে একঘরে করা হত কিন্তু প্রকৃতি আজ আমাদের সবাইকে একঘরে করে রেখেছে। কারো সাথে দেখা হলে দূর থেকে কুশল বিনিময় হচ্ছে, কারো সাথে হাত মেলানো যাচ্ছেনা। একজন আরেকজনকে সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখছে।

 

আমার এলাকায় একজন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হবার পর থেকে ঘরেই আছেন। শারীরিক ও মানষিক দিক দিয়ে সুস্থই আছেন কিন্তু এলাকার কিছু অতি উৎসাহী লোক একেক সময় একেক ধরনের গুজব চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ তো পারলে সেই আক্রান্ত ব্যাক্তিকে কবর পর্যন্ত পৌছানর কাজটাই করে দিচ্ছেন। সেই সাথে আছে অনেকের নামে আক্রান্ত হবার গুজব। গতকালও শুনেছি এলাকার বেশ কয়েকজনের নাম। যারা শারীরিক দিক দিয়ে পুরপুরি সুস্থ এমন কি কোন প্রকার নমুনাও দেন নাই করোনা টেষ্টের জন্য অথছ এরা নাকী করোনা আক্রান্ত!! মনে মনে প্রশ্ন যাগে এই গুজব ছড়িয়ে এরা কি ফায়দা নিতে চায়!!! দু-একজন আমার পরিচিত হিসেবে বুঝতে পারলাম এরা আসলে কোন প্রকার ফায়দা নেওয়ার জন্য নয় শুধুমাত্র নিজেদের মুখের জুড়েই এসব গুজব চালাচ্ছেন। আতংকিত মানুষদেরকে যেভাবে যা বললে আরো আতংকিত হবে বা যা বললে বিশ্বাস করবে তাই বলে যাচ্ছে। গত ৩/৪ দিনে বেশ কয়েকজনকে হাতেনাতে ধরেছি যারা গুজব ছড়াচ্ছেন। গুজব ছড়ানোর প্রমাণ দিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করেছি যে যা শুনেন তা সব সত্যি নয়। আবার অনেক সময় যা দেখেন তাও সত্যি নয়, কারন মাঝে মাঝে চোখের দেখাও ভূল হয়।

বিভিন্ন সময় এলাকার অনেকের কাছে ফোন দিয়ে জানতে চেষ্টা করছি যা শুনা যাচ্ছে তা সত্য কিনা!! অথছ অনেক সচেতন মানুষও এসব গুজব বিশ্বাস করে। সত্য মিথ্যা জানার কোন প্রয়োজনই মনে করেনা।

করোনার এই মহাসংটের সময় গুজব ছড়ানো থেকে বিরত থাকার আহবান জানাই। আমাদের মনে রাখতে হবে করোনা আক্রান্ত মানেই মৃত্যু নয়। এখন পর্যন্ত সুস্থতা পঞ্চান্ন হাজারের ঘরে। আমরা নেগেটিভ খবর দেখে দেখ আতংকিত হয়ে গেছি। পজিটিভ খবর প্রকাশ করলে মানষিক দিক দিয়ে আমরা অনেকেই সুস্থ থাকবো, সেজন্য প্রয়োজন পজিটিভ খবরগুলো প্রকাশ করা। আক্রান্তের সংখ্যা দেখে আতংকিত না হয়ে সুস্থতার হার দেখে সাহসী এবং সচেতন থাকাটাই আমাদের মূল লক্ষ হওয়া উচিৎ।

পরিশেষে বলবো আক্রান্ত কোন ব্যাক্তিকে অবহেলা না করে সাহস যোগান দেখবেন অতিদ্রুত সে ব্যাক্তি সুস্থ হয়ে উঠছে। মনে রাখবেন মানষিক টর্চারের চেয়ে মারাত্মক ভাইরাস আর কিছুই নেই। মানষিক ভাবে একজন আক্রান্ত ব্যাক্তিকে টর্চার না করে সহানুভূতির মাধ্যমে তাকে সুস্থ হতে সহায়তা করুন। তার পরিবারের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করুন। এরা আমাদেরই কারো ভাই, বোন অথবা মা বাবা।

_________________________

লেখক: কান্ট্রি এডিটর, বায়ান্ন টিভি