উত্তর গোলার্ধে চলছে মধ্যরাতের সূর্যমাখা পৃথিবীর দীর্ঘতম দিন

নাজমুন নাহার নাজমুন নাহার

বাংলাদেশি পতাকাকন্যা

প্রকাশিত: ৭:৫০ অপরাহ্ণ, জুন ২১, ২০২০ 416 views
শেয়ার করুন

উত্তর মেরুতে সূর্য পুরো ছয় মাস ধরে অস্ত যায় না। বিষয়টা কত আশ্চর্যজনক! সেই উত্তর মেরুর দেশগুলো আজ পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘ এবং বড় দিন পালন করছে সুইডেন নরওয়ে সহ সকল স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো। দীর্ঘ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার গ্রীষ্মকালে সূর্য কখনো একবারে মাসের জন্য অস্ত যায় না। মধ্যরাতের সূর্য কেবল এমন এক ঘটনা যা সূর্য কোনো সময়ের জন্য অস্ত যায় না।

আজ মিড সামার, আজ ১৯ জুন রাত থেকেই শুরু হয়েছে এই দৃশ্যের ঘনঘটা। এটি বছরের দীর্ঘতম দিন – যখন আকাশ কখনো অন্ধকার হয় না।‌
সুইডিশরা আজকের দিনে অনেক ঘটা করে উৎসব পালন করে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতির কারণে সবাই যার যার বাড়ির সামনে ছোট ছোট গ্রুপ করে করে এটি পালন করছে। আজকের দিনে পরিবার ও বন্ধুরা সবাই মিলে একসাথে বসে খাওয়া- দাওয়া করে একই টেবিলে।

আজকের দিনে সবাই বনজঙ্গল থেকে ঘাসফুল, বনফুল সব কুড়িয়ে এনে ফুলের মুকুট তৈরি করে সবাই মাথায় পরে। সারাদিন এই ফুলের মুকুট তারা মাথায় রাখে। সুইডিশসহ সকল স্ক্যান্ডিনেভিয়ানদের এটি একটি ট্রেডিশন। শুধু তাই নয় এখানে একটি প্রচলিত প্রথা রয়েছে, কেউ যদি বালিশের নীচে সাত ধরণের ফুল আজকের দিনে রাখেন তবে তার হবু-স্বামীর এবং স্ত্রী সম্পর্কে সে স্বপ্ন দেখবে।

আর্টিক সার্কেলে এটি গ্রীষ্মের অস্তিত্বের প্রায় বেশিরভাগ সময়কালে দিন- রাত সমান থাকে। এই ব্যাপারটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হলেও আর্টিক শহর ও গ্রামের বাসিন্দাদের জন্য মধ্যরাতের সূর্য জীবনের একটি সাধারণ ঘটনা!

তবে এই অবস্থানগুলির মধ্যে, সময়ের বিভিন্ন মাত্রা রয়েছে। উত্তর নরওয়ের বৃহত্তম শহর ট্রমসোর লোকেরা প্রতি বছর প্রায় দুই মাস ধরে ঘটনাটি অনুভব করে – ২০ মে থেকে ২২ জুলাই পর্যন্ত। উত্তর কেপে মধ্যরাতের সূর্য প্রায় ১৪ মে থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত জন্য দৃশ্যমান হয়।

কিন্তু আশ্চর্যজনক মধ্যরাতের রোদের কারণ কী?
যেহেতু আমি নিশ্চিত যে সবাই জানে পৃথিবী প্রতি ২৪ ঘন্টা পরে একটি সম্পূর্ণ ঘূর্ণন সম্পন্ন করে, যা গ্রহের পৃষ্ঠে আমরা দিন এবং রাত হিসাবে যা বুঝতে পারি। যদি পৃথিবীটি তার অক্ষের জন্য লম্বা থাকে তবে আমরা গ্রহটিতে যেখানেই থাকি না কেন, আমরা সারা বছর ধরে প্রতিদিন- ১২ ঘন্টা দিন এবং ১২ ঘন্টা রাতে থাকতাম।

তবে পৃথিবীটি প্রায় ২৩.৫ ডিগ্রি দ্বারা কাত হয়ে থাকে, সুতরাং গ্রীষ্মের অস্থির সময় এবং উত্তর মেরুতে আর্টিক বৃত্ত অঞ্চলে পুরো ছয় মাসের জন্য সূর্য অস্ত যায় না।

পৃথিবীর বক্রতাগুলির কারণে সূর্যটি একটি গোলক এবং স্থির বিন্দু নয়, এবং আলো যেভাবে আচরণ করে মধ্যরাতের সূর্যটি অবশ্যই তার চেয়ে ১ ডিগ্রি পর্যন্ত কম দেখা যায়।

আবার যখন কয়েক মাস ধরে দেশের বিভিন্ন অংশে সূর্য ওঠে না তখন গ্রীষ্মকালে এই দীর্ঘ সূর্যের আলোর প্রভাব দীর্ঘক্ষন থাকায় শীতকালে মৌসুমী হতাশা কাটিয়ে উঠতে ইতিবাচক চিন্তাভাবনা শেখায় এখানকার মানুষদের।

রাতের বেলা শহরে, পাহাড়ে, কিংবা নদীর ধারে, কিংবা সমুদ্রের পাড়ে হেঁটে বেড়ালে দিনের মতই আলো দেখা যায় এখানে। এ অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য এখানকার অনেক মানুষ কিংবা ট্যুরিস্টরা মধ্যরাতে পাহাড়ে হাইকিং করে, কিংবা এই রাতকে উদযাপন করার জন্য সবাই রাতে ঘুরে বেড়ায়।

🌍লেখক: নাজমুন নাহার, বাংলাদেশের পতাকাবাহী প্রথম বিশ্বজয়ী পর্যটক, (১৪০ দেশ ভ্রমণকারী)