মানবিক হই পৃথিবীর স্বার্থে

প্রকাশিত: ৩:২৭ অপরাহ্ণ, জুন ১৭, ২০২০ 899 views
শেয়ার করুন

আজ বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস। দিবসটির মূল লক্ষ্য হচ্ছে, বিশ্ববাসীর চোখের সামনে ‘মরুকরণ ও অনাবৃষ্টি’র কুফল সম্পর্কে তুলে ধরা এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এর বিরুদ্ধে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলা। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ১৯৯৪ সালের ঘোষণা অনুযায়ী, ১৯৯৫ সাল থেকে ১৭ জুন বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবস পালন করা হচ্ছে।

জলবায়ু পরিবর্তন এবং মানুষের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের ফলে অবক্ষয় প্রক্রিয়াই হচ্ছে মরুকরণ। শুষ্কভূমি পরিবেশগত দিক থেকে খুবই নাজুক। এমন ভূমিই মরুকরণের শিকার হয়। মরুকরণের ফলে ভূমি হারিয়ে ফেলে উৎপাদন ক্ষমতা আর হয়ে পড়ে অনুর্বর। যার ফলে সৃষ্টি হয় খাদ্য সংকট।
প্রতিনিয়ত পরিবর্তীত হচ্ছে পৃথিবী। এই পরিবর্তনের ধারায় সিডর, সুনামি, ভূমিকম্প, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, বন্যাসহ বিভিন্ন রকমের রোগ-বালাই দেখা দিচ্ছে দুর্যোগ আকারে। মরছে মানুষ, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে মাঠ-ফসল। সাথে-সাথে বাড়ছে খাদ্য সংকট। নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে জলবায়ুর কুপ্রভাবে বিশ্বে মরুকরণ একটি বড় সমস্যারুপে দেখা দিয়েছে।
আজকের পৃথিবীতে পরিবেশের বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মরুকরণ। জাতিসংঘের তথ্যমতে পৃথিবীর প্রায় দেড়শ’ কোটি মানুষ বেঁচে থাকার জন্য ক্ষয়িষ্ণু ভূমির ওপর নির্ভরশীল। আর পৃথিবীর অতিদরিদ্রদের ৪২ ভাগই বাস করে ক্ষয়ে যাওয়া এলাকায়, যারা মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে বাস করছে প্রতিনিয়ত। গত একশ’ বছরের মধ্যে বৈশ্বিক উষ্ণতা ০.৭৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। ধারণা করা হচ্ছে বৈশ্বিক উষ্ণতা এভাবে বাড়তে থাকলে ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবীর তাপমাত্রা ০.৫০ থেকে ১.৭০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে যাবে। জলবায়ু পরিবর্তনের মাত্রা যদি এভাবে বাড়তে থাকে, তাহলে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে দিন দিন আমাদের ফসলি জমি কমে যাচ্ছে নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য। একই সঙ্গে উজাড় হচ্ছে গাছপালা, বন-জঙ্গল। তার চেয়েও বড় বিষয় হলো, আমাদের নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। দিন দিন যেমন আমাদের ফসলি জমি কমছে, তেমনি খরায় উর্বরতা হারাচ্ছে জমি। এ অবস্থায় পরিবেশের প্রতি আমাদের মনোযোগী হওয়া আবশ্যক হয়ে দাঁড়িয়েছে।
১৯৮০ সালের মাঝামাঝি উপসাহারীয় আফ্রিকায় খরার কারণে প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষের মৃত্যু ঘটেছিলো। বর্তমানে বিশ্বের শুষ্ক ভূমির ৭০ শতাংশ ইতোমধ্যেই হয়ে পড়েছে মরুকবলিত। এর পরিমাণ পৃথিবীর মোট ভূমির চার ভাগের এক ভাগ। নিষ্কাষণে অব্যবস্থা ও লবণাক্ততার ফলে সেচের আওতাধীন আবাদি জমির বিশাল অংশও বর্তমানে অবক্ষয়ের সম্মুখীন। সুতরাং মরুকরণ সমস্যাটি বিশাল এক ক্ষতিকর ভৌগোলিক পরিবর্তনের নাম। এজন্য এখনই প্রয়োজন মরুকরণ বিস্তার রোধকল্পে সম্মিলিত প্রচেষ্টা।

আমরা পৃথিবীর কথা ভাবছি না এখনও। গাছপালা নিধন থেকে শুরু করে প্রকৃতির প্রতি চরম ঘৃণ্য আচরণ প্রদর্শনে এখনও অভ্যস্ততা থেকে গেছে আমাদের। এসব থেকে বেরিয়ে অচিরেই প্রকৃতি এবং পৃথিবীর স্বার্থে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় যদি আমরা সম্মিলিতভাবে আত্মনিয়োগ না করি তবে হয়তো করোনার চেয়ে ভয়াবহ ভাইরাস আর দুর্যোগ আচ্ছাদিত করে রাখবে পৃথিবীকে। প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহারে সংযম রক্ষা করাই হোক এবারের বিশ্ব মরুকরণ ও খরা প্রতিরোধ দিবসের অঙ্গীকার।

_______________________________

লেখক: সংবাদ পাঠক ও উপস্থাপক- বায়ান্ন টিভি