আওয়ামী অনুভুতির মানুষরা ধীরে ধীরে বিলিন হয়ে যাচ্ছেন, এখন শেখ হাসিনার পাশে আলোর মানুষ

সৈয়দ আশরাফুল ইসলামরা আর আসবেন কি? বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে এত দুরে যেত হলো কেন?

প্রকাশিত: ৫:০৪ অপরাহ্ণ, মে ৯, ২০২০ 590 views
শেয়ার করুন

প্রথম অংশ-
.১৯৭৫ সালের ১৫ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছিল এদেশের রাজনীতিকে হত্যা এবং রাজনীতিবিদদের চরিত্রকে নষ্ট করতে এক ধরনের বীজ বপন করা হয়েছিল, বঙ্গবন্ধু হত্যার ৪৫ বছর পর আজ মুজিব বর্ষে এসে বিশ্ব মহামারী করোনার এই ভয়াবহ সংকটের কবলে পড়ে দেশের রাজনীতি এবং রাজনীতিবিদের চরিত্রের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।স্বপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়া এরশাদ নতুন চরিত্রহীন রাজনীতিবিদ জন্মের জন্য যে বীজ বপন করেছিলেন হাইব্রিড পদ্ধতিতে সেই চাষ কৃত বীজ করোনার মত সংক্রামিত হয়ে আওয়ামীলীগের মধ্যেও ডুকে প্রচুর ফলন ধরেছে তা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। জিয়া এরশাদ এমন ধরনের হাইব্রিড রাজনীতি এবং নেতা জন্মের বীজ চাষ করেছিলেন তা এতই দ্রুত আওয়ামীলীগে সংক্রামিত হয়েছে যে, পুরনো এবং বিজ্ঞ আওয়ামীলীগ নেতারা টেরই পান নাই,এমন ধরনে সার তারা প্রয়োগ করেছিলেন, নেতাদের মগজ থেকে প্রগতিশীল চিন্তাকে কীট নাশক ঔষধ দিয়ে মস্তিষ্ক থেকে সরিয়ে ফেলেছে।বঙ্গবন্ধুর আর্দশের যে কয়জন নেতা টের পেয়েছিলেন তাঁরা তখন দাঁত দিয়ে সিনার হাড্ডি কামড়াতে পারতেন না, তাদের কথায় কোন কাজ হবেনা এমন ভাব বুঝে তাঁরাও বঙ্গবন্ধুর আদর্শ থেকে মনে প্রানে সরে না গেলেও শারিরীক ভাবে হাইব্রিড ক্ষমতাশালীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছিলেন। রাজনীতি এখন এমন এক দল প্রতারক ভাটপার আদর্শহীন মানুষের কন্টোলে চলে গেছে। এখান থেকে সুস্থ রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে হলে বা এর থেকে পরিত্রান পেতে হলে বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার শক্ত এবং কঠিন পদক্ষেপের বিকল্প নেই।

ফারুক রশিদের ফ্রিডম পার্টি, জামাতে ইসলামী, জিয়া এবং মুশতাকের অনুসারীরা ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যাকরে একটি বিশেষ রুট ম্যাপ নিয়ে তারা কাজ করেছিল, সেটি ছিল তাদের পরিবারে ২য় প্রজন্মকে পরিকল্পিত ভাবে ছাত্রলীগ যুবলীগ আওয়ামীলীগের রাজনীতিতে অন্তভুক্ত করে অরিজিনিয়েল আওয়ামীলীগের পরিবারের সন্তানদের দুরে সরিয়ে রাখা, তারা এতে সফল হয়েছে। তৃনমুল থেকে শুরু করে কেন্দ্রের প্রগতিশীলরা কথা বলতে গেলে বিরাট বাধা তৈরি করা হতো উর্ধতন মহলে পৌঁছতে পারতো না প্রগতিশীলদের আওয়াজ। একই ভাবে বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে অনুপ্রেবশকারী সুবিধাবাদি অতি উৎসাহি হাইব্রিড অন্য দলের বড় বড় নেতারা তাদের দলের বড় পদ ছেড়ে আওয়ামীলীগের ছোট পদে যোগদানের হিড়িক লেগে যায়। ধীরে ধীরে এইসব ফেইক সৈনিকরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিকদের শত মাইল পিছনে ফেলে তারা তৃনমুল আওয়ামীলীগ কন্টোল করতে গিয়ে আওয়ামীলীগারদের কাছ থেকে আওয়ামীলীগের নেতৃত্ব শূন্য করতে শুরু করে।এমপি মনোনয়ন থেকে শুরু করে সব জায়গায় এমন সব লোকদের তৃনমুল থেকে নাম দেয়া হয়েছে যারা আওয়ামীলীগ করে অতচ বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী আদর্শের কোন চরিত্রবান নেতা নয় এবং দেশপ্রেমিক নয়, যারা রাজনীতিকে ব্যবসা হিসাবে নিয়েছে তারা। বাংলাদেশে এখন যারা রাজনীতি করেন এর মধ্যে ৮০/৯০ শতাংশ নেতা আসলে জনগনের সেবার জন্য রাজনীতি করেন না, তারা রাজনীতি করেন নিজের জন্য, রাজনীতিকে নিজের ব্যবসা মনে করেন এবং ব্যবসার মুনাফার জন্য যা যা করতে হয় তাই তারা করছেন,এখানে রাজনীতি বলতে শুধু রাজনীতি নামক শব্দকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে শক্তি প্রয়োগ করে অর্থ উপার্জন ছাড়া অন্য কিছু নেই।

বর্তমানের মন্ত্রীগন এবং তৃনমুল নেতাদের মধ্যে ১০ ভাগ আছেন যারা প্রধানমন্ত্রীর মত দেশের উন্নয়নের জন্য চিন্তা করেন, আর ৯০ ভাগ শুধু নিজের উন্নয়নে ব্যস্ত এইটাই হচ্ছে রাজনীতি। আমি নিজেকে রাজনৈতিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে এতই ভগ্যবান মনে করি, আমাদের রাজনৈতিক বিদ্যালয়ের তৃনমুলের যে সকল মহান নেতাগন আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষক ছিলেন তাঁদের (Reflection, sacrificing & compromising attitude, dressing sense & speaking style) প্রতিচ্ছবি ত্যাগ ও আপোষমূলক মনোভাব কাপড় ছোপড় পরার এবং কথা বলার ধরন যখন মনে হয় আর বর্তমানের কেন্দ্রীয় যে সকল ডক্টরেট ডিগ্রিধারী নেতা মন্ত্রীদের ভাবভঙ্গি,কথা বলার ধরন টিভিতে বা ময়দানে দেখি, তখন মনে হয়,মাত্র এই ক’বছরে আমরা কি অন্য কোন গ্রহে চলে এলাম? ১৯৭১এর ১৬ই ডিসেম্বরের পর ৭২ আসতেই ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অটো প্রমোশন পেয়ে সপ্তম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়েছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশের জন্ম দেখেছি, সে বয়সটা ছিল একেবারে নিখুত মনে থাকার বয়স। একটি সন্তান তার মার গর্ভে ৯ মাস থাকার পর পৃথিবীতে জন্ম নেয় তেমনি বাংলাদেশ নামক সন্তান তাঁর মায়ের গর্ভে যাওয়া থেকে যে দিন জন্ম নিয়েছিল প্রসব বেদনা থেকে শুরু করে পৃথিবীর মানচিত্রে ভূমিষ্ঠ হয়ে আজ তার ৫০ বছর হয়েছে, সবই আমাদের চোঁখের সামনে,সেই সন্তানের সকল উত্তান পতনের রাজ স্বাক্ষী আমরা। এদেশের জন্মের সাথে যাদের অবদান আজ তাদের বড় মিস করছি।

তৃনমুলের বেশ কয়েকজন নেতার কথা মনে হচ্ছে তাদের মধ্যে আমার জন্মস্থান সিলেটের বিয়ানীবাজারের তৃনমুলের শ্রদ্ধেয় নেতাদের দিয়ে একটি উদাহন দেই-যারা বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ ছিলেন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি সেই সকল রাজনৈতিক শিক্ষক নেত্রীবৃন্দ গনদের, তাদের মধ্যে শ্রদ্ধেয় এম এ আজিজ, আকদ্দস সিরাজুল ইসলাম,খালিক মিয়া, ফৈয়জুর রহমান,আজির উদ্দিন সহ বেশ কয়েক জনের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠছে চোঁখের সামনে, যারা বাংলাদেশের যে কোন মন্ত্রনালয়ে মন্ত্রী হয়ে আজকের মন্ত্রীদের চাইতে হাজার গুন ভাল সরকার এবং দেশ পরিচালনা করতে পারতেন, হাজার গুন বেশী জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন এইসব নেত্রীবৃন্দ, তাঁরা ছিলেন বঙ্গবন্ধু সহযোদ্ধা বঙ্গবন্ধুর দর্শনের রাজনীতিবিদ লোভ লালসা হীন দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক নেতা। বঙ্গবন্ধু বার বার কেন্দ্রে রাজনীতি করার জন্য আহব্বান করলেও তারা তৃনমুলকে বেঁচে নিয়েছিলেন,তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে এতই ঘনিষ্ঠ ছিলেন, এম এ আজিজের সম্পর্ক ছিল মুজিব,আজিজ নামে একে অপরকে ডাকতেন, বঙ্গবন্ধু যখন কলকাতা ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন তখন আকদ্দস সিরাজুল ইসলাম কলকাতা রিপন কলেজের ছাত্র ছিলেন একত্রে রাজনৈতিক আড্ডা দিয়েছেন। আজকের নেতারা ওয়ার্ড কমিটির রাজনীতি করার যোগ্যতা নাই কেন্দ্রীয় নেতা হতে চায়, জেলা কমিটিতে একটি পদের নাম লিখাতে কোটি টাকা খরছ করে,কারন রাজনীতি এখন পুরোমাত্রায় একটি ব্যবসায় পরিনত হয়েছে, আর রাজনীতি যখন ব্যবসায় পরিনত হয় তখন আর আদর্শ কাজ করে না, সত্য ন্যায্য কথা বলতে লোক ভয় পায়, রাজনীতিবিদ জন্মায়না।জন্মায় আজকের মত রিলিপের চাউল চোর যারা কোটি টাকার বিনিময়ে নেতা হয়েছে।
.
১৯৮৬ সালে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে আমরা যখন নিরুপায় হয়ে প্রানে বাঁচতে যুক্তরাজ্যে এসে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে ছিলাম, সেই তখন থেকে আজ পর্যন্ত একদিনও দেশের কথা দেশের ভবিষৎতের চিন্তা মাথা থেকে সরাতে পারিনাই। দেশে যেমন আমাদের রাজনৈতিক শিক্ষকরা ছিলেন আগাগোড়া পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ, লন্ডন এসে পেয়েছিলাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের মত সৎ নিষ্টাবান আদর্শবাদী আপাদমস্তক সঠিক মুক্ত চিন্তার রশিক একজন বাস্তত বাদি রাজনীতিবিদের সাহচর্য। তাই আমরা বদলাইনি, বদলিতে পারিনি কারন শিক্ষা ছিল আদর্শের লোভ লালসার ছিল না, এখনো নেই। ১৯৮৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যখন বিরোধী দলের নেত্রী, মে মাসের আমেরিকা থেকে লন্ডন আসলেন, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নেত্রীর সাথে সার্বক্ষনিক থাকার জন্য আমাকে রেষ্টুরেন্টের কাজ থেকে ছুটি নিতে বললেন, বলেছিলাম কেন তিনি বলেছিলেন শেখ হাসিনা লন্ডন আসছেন তাঁর সঙ্গে আমাদের বিশ্বস্ত লোক থাকতে হবে আপনি আরো একজনকে বাহির করেন আওয়ামী পরিবারের লোক আমাদের মত। আমি বেশ কিছু নেতাদের কথা বলেছিলাম তিনি বলনেন আরে ভাই এরা সব নেতা আপনি নেতা নন আপনি আর নেতাদের মধ্যে পার্থক্য আছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামীলীগের নেতা অধ্যাপক আবুল হাসেম সাহেবের ভাই বজলু আর আমি আজকের প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ১৪/১৫দিন একত্রে একই বাড়িতে দক্ষিন লন্ডনের ৬০ কিং এভিনিউতে ছিলাম।
.
নেত্রী নিজ হাতে পরোটা বানিয়ে আমাদের দিয়েছিলেন আমরা সার্বক্ষনিক ছিলাম তাঁর সাথে।আমরা বানাতে গেলে বলতে তোমরা বানাবে কেন এটা তোমাদের কাজ নয় এটা মা-দের কাজ তোমরা বস আশরাফ ভাইও আসতেন চেয়ার টেবিলে না বসে মাদুরে বসে এক সাথে খেতাম। শেখ হাসিনাকে আমরা ১৯৮৮ সালে যেমন দেখেছিলাম চিন্তা এবং মেধায় তার থেকে শতগুন বেশী রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেছেন বা হয়েছে। অনেক ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে তিনি দেশের জনগনের মন জয় করেছেন,কঠিন সময় পার করেছেন ক্ষমতায় এসে দেশকে এগিয়ে নিতে শত বাধা বিপত্তির মধ্যে থেকেও বেশ কঠিন কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন, বড় বড় হুমড়া চোমড়াদের শায়েস্তা করতে পেরেছেন এতে সন্দেহ নাই, যখন যে যুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন অধিকাংশ যুদ্ধে সফল হয়েছেন তাঁর ডিটারমিনেশন থাকার কারনে। সব কিছু যে মানুষের জীবনে সঠিক হবে তা কারো বেলাই সম্ভব নয়, নিজের সব ভুল নিজের কাছে ধরা পড়েনা তাই প্রয়োজন হয় বিশ্বস্ত মানুষের, শেখ হাসিনার ধারে কাছে এবং সরকারে অনেক চাটুকার আছেন কিন্তু এখন আর একজন সৈয়দ আশারফুল ইসলাম নাই। বিশ্বের এই কঠিন এবং সংকটময়ে বিশ্ব নেতাদের পাশে যে ধরনের লোক আছেন বাংলাদেশে শেখ হাসিনার চারপাশে এ ধরনের লোক নাই আছেন শুধু অন্তঃসারশূন্যরা তারা সাহস করে সংকট মোকাবেলায় সৈয়দ আশরাফের মত শীতল মাথায় বলতে পারেনা ৫ টার মধ্যে ঢাকা শহর না ছাড়লে আর ঢাকা আসতে পারবেন না। দেশপ্রেমিক নেতাদের বড় অভাব আজ। আর যারা আছেন তাদেরকে বিভিন্ন স্বার্থবাদিদের ষড়যন্ত্রের কারনে জননেত্রীর কাছ থেকে দুরে ঠেলে দেয়া হয়েছে।

চলবে—-

——————
লেখক : লন্ডন প্রবাসী রাজনীতিক সাংবাদিক।
লন্ডন ৭ই মার্চ ২০২০
ইমেইল chanchal_math@yahoo.co.uk