আগুনে ছাই সিএনজি চালক ফুশিয়ার মিয়ার স্বপ্ন

প্রকাশিত: ৯:৩৫ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ১৭, ২০২৫ 37 views
শেয়ার করুন

সিএনজি চালক ফুশিয়ার মিয়া। বয়স এখনো চল্লিশ হয়নি। তিন কন্যা সন্তানের জনক তিনি। সন্তান আর স্ত্রীসহ পাঁচ জনের সুখের সংসার তার। মাসখানেক আগে স্ত্রী’র জটিল রোগের অপারেশসহ চিকিৎসায় ব্যায় করতে হয়েছে লক্ষাধিক টাকা। জমানো সব টাকা শেষ করে সংসার জীবন সাচ্ছন্দ্যে চালিয়ে নিতে রুটিন করে প্রতিদিন ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকেন রাস্তার উপর। সৌখিন মানুষ ফুশিয়ার এবং তার স্ত্রী। ঘর সাজাতে অনেক তৈজসপত্রে ঠেসে রেখেছিলেন। সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো সংগ্রামী এই মানুষের জীবন। কিন্তু এই ভালো আর ভালো থাকেনি। বুধবারের ভোরে লাগা আগুনে তছনছ হয়ে যায় সবকিছু। আগুনে ভষ্মিভুত হয়ে ঘরের আসবাবপত্র, জরুরি কাগজাদি, বইপত্র, নগদ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কারের মতো ছাই হয়ে যায় পরিবারের মানুষদের স্বপ্নও। এখন মাথার উপরে ছাদ নেই ফুমিয়ার মিয়ার, নেই পড়নের একখানা কাপড় কিংবা রান্না করে খাওয়ার মতো একটি হাড়িপাতিল। সব হারিয়ে একেবারে নিঃস্ব তিনি।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের এই ঘটনাটি ঘটেছে শান্তিগঞ্জ উপজেলার পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের পশ্চিমপাড়া পয়েন্ট সংলগ্ন ব্রাহ্মণগাঁও গ্রামে। ক্ষতিগ্রস্ত ফুশিয়ার মিয়া এই গ্রামের মৃত আরমান আলীর ছেলে। তিনি জানান, একটি বিয়ের দাওয়াতে তার স্ত্রী সন্তান বাড়িতে ছিলেন না। প্রতিদিনের মতো তিনি একাই ঘরে ঘুমে ছিলেন। ভোর রাতে সিএনজি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন তিনি। বাজারে আসার পর তার কাছে খবর যায় যে, তার ঘরে আগুন লেগেছে। বাড়িতে আসতে আসতে ভোরের আলো ফুটেছে। ততক্ষণে দাও দাও করে জ্বলতে শুরু করে আগুনের লেলিহান শিখা। ঘর থেকে একটি কাগজের টুকরাও বের করা সম্ভব হয়নি। তিনি ধারণা করেন, ইলেকট্রিক শর্ট সার্কিট থেকে এই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

ফুশিয়ার মিয়া বলেন, আমি শেষ রাতে বাড়ি থেকে যাওয়ার পর ভোরে খবর পাই যে, আগুন লেগেছে। এসে দেখি আগুন নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আমার সব শেষ। প্রায় ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি নিঃস্ব হয়ে গেলাম। জরুরি কাগজপত্রসহ সবকিছু শেষ।

স্থানীয়রা জানান, ভোড় রাতে হঠাৎ চিৎকার শোরগোল শুনে তারা দৌঁড়ে এসে দেখেন আগুন আশাকচুম্বী। নিয়ন্ত্রেণের বাইরে। কিছু ছেলেরা দুঃসাহস দেখিয়েছেন। পাশের বাড়ির ছাদে উঠে ট্যাংকির পানি ব্যবহার করে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেছেন । শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসকে কল দেওয়া হলে তারা দেরিতে এসেছেন। তখন স্থানীয়রা আগুন নিভিয়েছেন এবং সবকিছু পড়ে শেষ হয়েছে। তাছাড়া ফায়ার সার্ভিস আসারপরও তারা কাজ শুরু করতে দেরি করেছেন।

আগুনের নেভানোর কাজে সক্রিয় ছিলেন পাড়ার সবাই। সুনু মিয়া, রুশেল মিয়া, এমরুল হক ও তুষার আব্দুল্লাহসহ বাকী সবাই এগিয়ে না এলে আগুন আরো বেশি ছড়িয়ে পড়তো। তবুও ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে পাশে থাকা দুটি পাকা বাড়ি। একটি হচ্ছে তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক শুকুর আলী ও পরিবহণ শ্রমিক নেতা আবদুল গফুরের বাড়ি। আগুনের তীব্রতায় বাড়িগুলোর দেয়ালের আস্তরণ উঠে গিয়েছে।

শুকুর আলী বলেন, আমার চাচাতো ভাই ফুশিয়ার মিয়া এমনিতেই পরিশ্রমী মানুষ। খুব কষ্ট করে সংসারটাকে টেনে নিচ্ছে। তার জীবনের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেলো।

তিনি তাহিরপুরে ছিলেন জানিয়ে তিনি বলেন, খবর পেয়ে খুব সকালে আমি এসেছি। আমার ঘরে এসে আগুন ঢুকেছে। দেয়াল দেয়াল ফেটে গিয়েছে। আস্তরণ উঠে গেছে। আমার আর আমার অপর ভাই আবদুল গফুরের ঘরের খুব ক্ষতি হয়েছে।

সুনু মিয়া বলেন, আমরা প্রথম থেকেই ছিলাম। ফায়ার সার্ভিসকে কল দেওয়ার পর তারা প্রায় আধাঘন্টা পরে এসেছেন। অথচ শান্তিগঞ্জ থেকে পাগলা ১০ মিনিটের রাস্তা। তারা আসারপরও কাজ শুরু করতে পারেননি। তাদের মেশিন নাকি বিকল ছিলো। অথচ তারা একটু সক্রিয়তা দেখালে ঘরটি রক্ষা পেতে পারতো।

শান্তিগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন ইনচার্জ মো. ফরিদ মিয়া বলেন, আমাদেরকে যখনই জানানো হয়েছে তাৎক্ষণিক আমরা ঘটনাস্থলে হাজির হয়েছি। কোনো দেরি করিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এনছেন স্থানীয়রা। যে পুকুর থেকে দমকল বসানো হয়েছে সেখানে সুবিধাজনক স্থান ছিলো না। আমাদের প্রস্তুতি নিতে যে সময় লেগেছে এই সময়টাকেই তারা বলছেন দেরি হয়েছে। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ দিয়েই উপজেলাবাসীর সেবা করার চেষ্টা করি।