পটিয়ায় প্রবাসী সহ দুই জনকে ক্রসফায়ারে হত্যা আদালতে মামলা দায়ের         

কাউছার আলম কাউছার আলম

পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২০ 2,369 views
শেয়ার করুন
কক্সবাজারের টেকনাফে মেজর সিনহাকে যেদিন পুলিশের গুলিতে নিহত  হয়েছে সেদিন পটিয়ার এক প্রবাসী ও এক দিনমজুরকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দিয়ে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে চকরিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। 
নিহতর স্বজন ও স্থানীয়দের দাবি তারা কোন অপরাধদের সাথে জড়িত ছিল না, পরিকল্পিতভাবে পুলিশকে দিয়ে হত্যা করা হয়েছে তাদেরকে। ঘর থেকে ধরে নিয়ে ক্রসফায়ার দেয়ার আগে ৫০ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে।
এদিকে  পুলিশের দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় নিরপরাধ দুই যুবককে হত্যা করে ইয়াবা উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছে। তবে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার তিনদিন আগে তাদের গ্রেফতার করা হলেও পুলিশ রহস্যজনক ভাবে তাদেরকে অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রচারনা  চালায় পুলিশ। চকরিয়ার ঘটনায় নিহত তিনজনের কাছ থেকে আরো ১৮ জন মাদক ও ইয়াবা ব্যবসায়ীর তথ্য পেয়েছে বলেও চকরিয়া থানা পুলিশ জানাই। মেজর সিনহার ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি হওয়ার পর নিহতের স্বজনেরা মুখ খোলতে শুরু করেছে।
জানা গেছে, গত ২৮ জুলাই পটিয়া উপজেলার কচুয়াই ইউপির ভাইয়ের দীঘির পাড় তালতলা এলাকার নিজ বাসা থেকে আব্দুল আজিজের পুত্র মোহাম্মদ জাফর ও পটিয়া সদরের পাইক পাড়া এলাকার মৃত আবুল কাশেমের পুত্র মোহাম্মদ হাসান(৩৭) আটক করে চকরিয়া থানা পুলিশ। গত ৩১ জুলাই ভোর রাতে ইয়াবা উদ্ধারের অভিযানে পুলিশের সাথে বন্দুক যুদ্ধে তারা নিহত হয়েছে দাবি করে ৪৪ হাজার ইয়াবা ও ৩০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার এবং এসময় আহত হন চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান, হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম, কনষ্টেবল সাজ্জাদ হোসেন ও মো. সবুজ আহত হয়ে বলে জানানো হয়েছিল। নিহত মোহাম্মদ জাফর ১৮ বছর ধরে প্রবাসে রয়েছে, লক ডাউনের আগে দেশে আসলে করোনা ভাইরাসের কারণে বিদেশ যেতে পারেনি তবে নিহত জাফরের মা ছানোয়ারা বেগমের বিরুদ্ধে মাদকের মামলা রয়েছে। অপরজন মোহাম্মদ হাসান পেশায় রিক্সা চালক, রিক্সা চালিয়ে তার সংসার চালিয়ে আসছিল।
হাসানের আরেক ভাই দীর্ঘদিন ধরে নিখোঁজ রয়েছে। জাফরের স্ত্রী সেলিনা আক্তার জানান, আমার স্বামী কখনো মাদক ইয়াবার সাথে জড়িত ছিল না। তিনি প্রবাসে জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছে। তিনি খারাপ এলাকায় কেউ প্রমান দিতে পারবে না, আমি বিয়ষটি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। পুলিশের বন্দুক যুদ্ধে নিহত হাসানোর বিষয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর শফিউল আলম বলেন, হাসান একজন দিনমজুর রিক্সা চালক সে মাদক ইয়াবার সাথে কখনো জড়িত ছিল না বলে তিনি দাবি করেন। কচুয়াই নিহত জাফরের এলাকার ইউপি সদস্য আনোয়ার হোসেন জানান, জাফর দীর্ঘদিন প্রবাসে রয়েছে তার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা দুরের কথা একটি সাধারণ ডায়েরিও ছিল না, তাকে অন্যায়ভাবে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর চট্টগ্রাম (দক্ষিণ)পরিদর্শক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম বলেন, জাফর ও হাসান নামে যে দুইজনকে ক্রসফায়ার দেয়া হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে মাদক দ্রব্যের কোন মামলা আছে এই ধরণের প্রমান আমাদের হাতে নেই। চকরিয়ায় অভিযানে নেতৃত্ব দেয়া হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের কাছে তিন আগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিরা নিহত হওয়ার পর অজ্ঞাত পরিচয়ে প্রচার করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে অফিসার ইনচার্জ ভাল বলতে পারবেন বলে জানান, জরুরী মিটিং এ রয়েছে বলে লাইন কেটে দিলেও পরে আর ফোনে পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে চকরিয়া থানা অফিসার ইনচার্জ হাবিবুর রহমানের সাথে মোবাইলে কথা বলার চেষ্ঠা করা হলেও ফোন ধরেনি।
এদিকে পুলিশের দাবীকৃত ৫০ লাখ টাকা দিতে না পারায়    প্রবাসীকে ক্রসফায়ারে হত্যার অভিযোগে কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসিসহ দুই পুলিশের বিরুদ্ধে পটিয়া  আদালতে মামলা দায়ের হয়েছে।
আজ রোববার ( ১৬ আগস্ট) পটিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে ভিকটিমের মামা মুক্তিযোদ্ধা আহম্মদ শফি মামলাটি দায়ের করেন।
আদালত মামলাটি  আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। মামলার আসািরা হলেন- চকরিয়া থানার ওসি হাবিবুর রহমান ও হারবাং পুলিশ ফাড়ির ইনচার্জ আমিনুল ইসলাম।
জানা যায়,  চলতি বছরের ১২ মার্চ ওমান প্রবাসী জাফর দেশে আসেন। তার বাড়ি পটিয়া উপজেলার  কচুয়াই ইউনিয়নে। গত ২৯ জুলাই ভোর ৬টায় চকরিয়া থানার পুলিশ সদস্যরা ইয়াবা ব্যবসায়ী আখ্যা দিয়ে জাফরকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যায়। পরে জাফরের পরিবারের সদস্যদের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে ব্যর্থ হলে ৩১ জুলাই ক্রসফায়ার তার মৃত্যু হয়েছে বলে জানানো হয়।