ফরিদপুর শহর আলিয়াবাদ ইউনিয়ন রক্ষা বাঁধে ধ্বস

প্রকাশিত: ১২:৫৪ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২০ 365 views
শেয়ার করুন

গত ২৪ ঘণ্টায় ফরিদপুরে পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধির ফলে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এদিকে রোববার (১৯ জুলাই) ফরিদপুর শহর রক্ষা বাধের সাদিপুর এলাকায় ৬০ মিটার ধ্বসে যাওয়ায় শহরতলীর লোকালয়ে তীব্র বেগে ঢুকে পড়েছে পদ্মার পানি।

সাদিপুর এলাকায় শহর রক্ষা বাধ ধ্বসে যাওয়ায় জেলা সদর থেকে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় যাওয়ার সড়কটি ধ্বসে যাওয়ায় এবং প্লাবিত হওয়ায় সরাসরি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসময় পানির তোড়ে বিদ্ধস্ত হয় ৮/১০ টি বসত বাড়ি, উপড়ে পড়ে অসংখ্য গাছ পালা। এর আগে ওই সড়কের বিভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় বন্ধ করে দেওয়া হয় সড়কে ভারী যান চলাচল।

এদিকে জেলার চরভদ্রাসন উপজেলায় বন্যা দূর্গত মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে। দূর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার জানান, জেলা সদর সহ চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলার প্রায় ২০ হাজার পরিবার এখন পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। তাদের জন্য ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে সরকারি খাদ্য সহায়তা বিতরণ। এছাড়া জেলা সদর থেকে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় যাওয়ার প্রধান সড়কটির ৬০ মিটার ধ্বসে গেছে। জরুরীভাবে চলাচলের উপযোগী করতে সড়ক বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

জেলার চরভদ্রাসনে বন্যা দূর্গত মানুষ বসতবাড়ির মালামাল সহ গরু ছাগল নিয়ে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছে। উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি অবনতির ফলে পদ্মা চরের চরঝাউকান্দা ইউনিয়ন, চরহরিরামপুর ও গাজীরটেক ইউনিয়নের প্রায় শতাধিক রাস্তা প্লাবিত হয়ে বন্যার পানির সাথে একাকার হয়ে রয়েছে। উপজেলা সদরের জনগুরুত্বপূর্ন দু’টি পাকা রাস্তা ও দু’টি ইটের রাস্তা পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এরমধ্যে জেলা শহরে যাতায়াতের জন্য এমপি ডাঙ্গী গ্রাম থেকে জাকেরের সুরা ব্রীজ পর্যন্ত পাকা রাস্তায় বালুর বস্তা ফেলে পানির প্রবাহ রোধ করার চেষ্টা চালাচ্ছে প্রশাসন।

এছাড়া উপজেলা সদরে বালিয়া ডাঙ্গী ও ফাজেলখার ডাঙ্গী গ্রামের বেড়িবাঁধ সড়ক ধ্বসের ফলে মেরামত কাজ অব্যাহত রয়েছে। শনিবার উপজেলার গাজীরটেক ইউনিয়নে বন্যা দুর্গত ৫২০ পরিবারের মাঝে সরকারিভাবে সাড়ে ৫ মে.টন. চাল ও ২৬০ কেজি ডাল বিতরণ করা হয়েছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ইউনিয়নের বন্যা দুর্গতদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হবে বলে উপজেলা ত্রাণ অফিস জানিয়েছে।

সরেজমিনে ঘুরে জানা যায়, চরাঞ্চলের ফসলী মাঠের জমিতে ছোন-বন দিয়ে গড়া বসতঘরের প্রায় সবগুলো পরিবার চাল ছুঁই পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে তারা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও উচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। এসব পরিবারের গরু ছাগল ও গৃহপালিত পশু চরাঞ্চলের প্লাবিত রাস্তায় পানির মধ্যে রাখা হয়েছে। তাই বন্যাকবলিত চরাঞ্চলে গত ক’দিন ধরে গো-খাদ্যের অভাব দেখা দিয়েছে।

উপজেলা চরহরিরামপুর ইউনিয়নের হাজারবিঘা নামক পদ্মা চরের হত দরিদ্র্র কৃষক মান্নান শেখ (৫৫) জানান, পদ্মা নদীর ভাঙনে সর্বস্ব বিলীন হওয়ার পর পদ্মার বালু চরে কাশবন দিয়ে বসতি গড়ে বসবাস করে আসছি। এ বছর আগাম বন্যার ফলে ফসলী মাঠের বাদাম তিল ও ধান ঘরে তুলতে পারি নাই এবং বসতঘর পানিতে ডুবে যাওয়ার ফলে আশ্রয়কেন্দ্রে উঠেছি।

সাদারী বিশ্বাসের ডাঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রিত এক গৃহিনী রাজেয়া (৪২) জানান, পদ্মার চরে ছোন বনের কুড়ে ঘরে দিনমজুর স্বামীর সংসারে কোনোমতে দিন কাটাচ্ছিলাম। পদ্মার পানি বাড়তির মধ্যে গত এক সপ্তাহ আগে দিনের বেলায় ঘরের উঠান ও দুয়োর পানিতে ভেসে গেলো। একই দিন সন্ধাকালে হঠাৎ থাকার ঘরের মেঝে ভিজে কালো হয়ে গেলো। কিছুক্ষন পরে ঘরের ডওয়া চুইয়ে পানি আসতে শুরু করলো। ওই রাতের মধ্যেই ঘরের মেঝে হাটু পানিতে ভেসে গেলো। রাতে কয়েকবার প্রবল বৃষ্টিতে কাশবনের ছাওয়া ঘরের চাল চুইয়ে পানিতে কাথা বালিশ ভিজতে লাগল। তাই পরের দিন পরিবারের সবকিছু নিয়ে স্কুলে উঠেছি। এখন স্কুল ভবন ছাড়া আশপাশের সব জায়গায় খালি পানি আর পানি।

চরভদ্রাসন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জেসমিন সুলতানা জানান, উপজেলার চরঝাউকান্দা ইউনিয়নের বন্যার্তদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। অন্যান্য ইউনিয়নের দূর্গতদের মাঝেও ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা হয়েছে।

ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সুলতান মাহমুদ জানান, বর্তমানে পদ্মার পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকায় পানি প্রবেশ করেছে। তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে মধুমতির নদীর আলফাডাঙ্গা ও মধুখালী উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে।

ফরিদপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী কে এম নকিবুল বারী জানান, তীব্র স্রোতে জেলা সদর থেকে চরভদ্রাসন ও সদরপুর উপজেলায় যাওয়ার প্রধান সড়কটির ৬০ মিটার ধ্বসে গেছে। জরুরীভাবে চলাচলের উপযোগী করতে জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এদিকে জেলার সদরপুর উপজেলার ৪টি ইউনিয়নে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় ৮ হাজার পরিবার। পানিতে তলিয়ে গেছে কয়েকশত একর ফসলী জমি। সড়ক যোগাযোগ সম্পুর্ন বন্ধ রয়েছে। নৌকায় চলাচল করছে মানুষ।

সদরপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার পূরবী গোলদার জানান, সরকারিভাবে ২৯ মেট্রিক টন চাল ও ৫০ হাজার টাকা বন্যার্তদের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। তিনি জানান, এ উপজেলার প্রায় ৮ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বেশ কয়েকটি সড়ক পানিতে তলিয়ে গেছে।

নদী ভাঙনের কথা জানিয়ে আলফাডাঙ্গা উপজেলার চেয়ারম্যান একেএম জাহিদ হাসান বলেন, মধুমতি নদীতে এই মুহূর্তে প্রচুর পরিমাণে ভাঙন শুরু হয়েছে। নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ।

তিনি জানান, স্থানীয় এমপির সহায়তায় জরুরিভাবে ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হচ্ছে। তবে এই ভাঙন কবলিত এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করতে হবে।