প্রবাসী প্রসঙ্গ ৩: বিমানবন্দরে পিসিআর মেশিন না বসানোতে অসহায় অসংখ্য প্রবাসি

প্রকাশিত: ১০:৩৪ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১ 1,353 views
শেয়ার করুন

এই মুহুর্তে সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশী প্রবাসীদের জন্য সবচাইতে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বাংলাদেশের বিমানবন্দরে RT-PCR টেস্ট সংক্রান্ত অচলাবস্থা। আটকে পড়া প্রবাসীদের দুর্ভোগ যেনো কাটছেই না। খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপেও বিষয়টির সুরাহা হয়নি এখনো। বাংলাদেশে ২৪ ঘন্টার নোটিশে একটি ফিল্ড হাসপাতাল স্থাপনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সহ দুর্যোগ ব্যবস্হাপনায় নিয়োজিত অনেকেরই সক্ষমতা আছে, RT-PCR SYSTEM কেনাও খুব একটা দুরুহ ব্যাপার না। তাই গত কয়েকমাসে বিমানবন্দরে RT-PCR টেস্ট ব্যবস্থা স্থাপন করতে না পারা এই বিশ্বায়নের যুগে কোনভাবেই গ্রহনযোগ্য হতে পারে না। এই ব্যর্থতায় হাজার হাজার প্রবাসী করুণ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। RT-PCR টেস্টের প্রয়োজনীয়তাও হয়তো কিছুদিন পর থাকবে না, তবে অনেকের জন্যেই সর্বনাশ যা হওয়ার তা হয়ে গেছে এবং তা কাটিয়ে উঠতে যে অবর্ণনীয় কষ্ট যাতনার সম্মুখীন হতে হবে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা।

রেমিট্যান্স আমাদের অর্থনীতির একটি প্রধান খুঁটি। এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত এই খাতের প্রধান উৎসগুলোর একটি। করোনাকালের এই চরম সংকটেও প্রবাসীরা রেমিট্যান্স প্রবাহ সচল রেখে দেশের অর্থনীতিকে দুধে ভাতে রেখেছেন। ভাবতে অবাক লাগে এই রেমিট্যান্স সৈনিকদের জন্য একটি পৃথক মন্ত্রণালয় থাকা সত্ত্বেও কোন ধরণের অগ্রাধিকার পাওয়া যায়নি এবং RT-PCR টেস্টের মতো সহজ কাজটি সময়মতো করা হলোনা। দুর্ভাগ্যজনক ! কিছুদিন আগে আমাদের তাগিদে বোর্ডের অধীনে একটি Emergency Response Team গঠন করা হয়েছে। এই বিপদে উনাদের কোন কার্যক্রমও চোখে পড়েনি।

RT-PCR স্থাপনার জন্য অর্থের অভাব হওয়ার কথা না, কারণ প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের যথেষ্ট পরিমাণের আমানত আছে। কারো কাছে ধর্ণা দেয়ার প্রয়োজন নেই। আমি এখনো বুঝতে পারছিনা RT-PCR স্থাপনে এতোগুলো মন্ত্রণালয়কে কেন জড়াতে হলো, কেনো কল্যাণ বোর্ড উদ্যোগী হয়ে কাজটি করতে পারলো না ! এটি কি প্রবাসীদের কল্যাণের আওতায় আসেনা? এমন একটি সাধারণ প্রকল্পেও মন্ত্রী / প্রধানমন্ত্রীকে জড়াতে হবে? বোর্ডের তহবিল কি বোর্ড খরচ করেন না ? অহরহই দেখছি কল্যাণ বোর্ডের টাকা এমনসব প্রকল্পে বরাদ্দ হচ্ছে যার সুবিধা সরাসরি প্রবাসী শ্রমিক অথবা তাদের পোষ্যরা পাবেন না। অথচ যেখানে হাজার হাজার প্রবাসীর জীবন জীবিকা জড়িত সেখানে প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডের কোন ধরণের তৎপরতাই দেখলাম না।

আমাদেরকে এও দেখতে হলো যে প্রবাসীরা ঢাকা ও চট্টগ্রামে RT-PCR এর জন্য সমাবেশ মানববন্ধন করছেন ! BGMEA -এর মতো বাংলাদেশ সরকারের সাথে নিবন্ধিত একটি সংগঠনের কথা আগেও বহুবার বলেছি, আবারও এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরছি। এমন একটি সংগঠন থাকলে সমাবেশ অথবা মানববন্ধনের প্রয়োজন হতো না। এটা ঠিক এই প্রবাসে বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের প্রবাসীদের শতাধিক বিভিন্ন ধরণের সংগঠন আছে, কয়েকটি এসব দেশের সরকার দ্বারা অনুমোদিতও বটে, তবে বিদ্যমান আইনের আওতায় এগুলো সাধারণ শ্রমিকদের স্বার্থ ও অধিকার আদায়ের জন্য বারগেইনিং এজেন্ট হিসেবে প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না, এবং এগুলো বাংলাদেশ সরকার দ্বারা অনুমোদিতও নয়। তাই BGMEA-এর আদলেই বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদিত একটি সংগঠন প্রয়োজন যা প্রবাসীদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করতে পারবে।
গত পর্বের লেখায় প্রবাসী কল্যাণ বোর্ডে প্রবাসীদের প্রতিনিধিত্বের কথা লিখেছিলাম, বোর্ডে আমাদের তিন জন প্রতিনিধি আছেন। দু’জনকে বার্তা পাঠিয়েছিলাম, একজন উত্তর দিয়েছেন আরেক জন এখনো নীরব।বোর্ডে উনারা কি ভূমিকা রাখছেন তা জানতে পারিনি। এই RT-PCR ক্রাইসিসেও উনাদের কোনরকম সাড়াশব্দ পাইনি। তাই উনাদের নিয়ে খুব একটা আশাবাদী নই। বোর্ডের তহবিল মূলতঃ প্রবাসী শ্রমিকরাই জোগান দিয়ে থাকেন। তাই এই তহবিলের জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে বোর্ডে প্রবাসীদের একটি কার্যকর ভূমিকা চাই। আমাদের প্রবাসী নেতৃত্ব সোচ্চার হলে আমরা অবশ্যই কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সক্ষম হবো।

নওশের আলী: সমাজকর্মী ও প্রকৌশলী। দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত