প্রযুক্তির অপব্যবহারে বাড়ছে সামাজিক দূষণ: হানিফ সংকেত

প্রকাশিত: ৮:১০ অপরাহ্ণ, জুন ৪, ২০২১ 458 views
শেয়ার করুন

 

চীন থেকে আসা অ্যাপ ‘টিকটক’ যেন চীন থেকে আসা করোনার মতোই আমাদের এখানে ‘সমাজদূষণ ভাইরাস ছড়াচ্ছে।

এই অ্যাপটি প্রতিভাবান ও প্রতিভাহীন যে কাউকে কনটেন্টভেদে খুব সহজেই পরিচিত করতে পারে। পেশাদার ক্যামেরা, শব্দযন্ত্র, কারিগরি দক্ষতা, নির্মাণ ব্যয়, সময়ক্ষেপণ, অভিনয়শৈলী কোনো কিছু ছাড়াই ইন্টারনেটে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণের সহজ পথ দেখিয়েছে এই চায়নিজ অ্যাপটি।

প্রয়োজন শুধু একটি স্মার্টফোন ও ইন্টারনেট সংযোগ। টিকটকের একটি তথ্যমতে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০ কোটি মানুষ টিকটক ব্যবহার করছে। ডাউনলোড চার্টের শীর্ষেও রয়েছে এই টিকটক। সহজ বিনোদনের এই মাধ্যমটিতে অনেকেই নিজ ভাষার বদলে হিন্দি ভাষায় ঠোঁট মেলাচ্ছে, অভিনয় করছে।

এখানে অধিকাংশ ভিডিওতেই দেখা যায় অশোভন পোশাকে অশালীন ভঙ্গিতে নৃত্য প্রদর্শন কিংবা কোনো ভাইরাল হওয়া ভিডিও বা গানের সঙ্গে ঠোঁট মেলানো। কিছু দৃষ্টিশোভন, কিছু দৃষ্টিকটু। কিছু সহনীয় কিছু অসহনীয়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই নেই কোনো শিক্ষণীয় বার্তা।

আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে প্রথম টিকটক দেখেছিলাম। ভোট কেন্দ্রের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা নারীদের মুখে ‘খুশিতে, ঠেলায়, ঘোরতে’- এই কথাগুলো। যা অনুকরণ করে বিখ্যাত হয়েছেন অনেকেই। রাজনৈতিক বক্তৃতা ওয়াজ অনুকরণ করেও টিকটক করছেন অনেকেই। জনপ্রিয় হওয়ার আশায় ইদানীং এসবের সঙ্গে কিছু কিছু প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান, টিভি-সিনেমার নায়ক-নায়িকাও টিকটক তারকাদের কাতারে এসে দাঁড়িয়েছেন।

সেক্ষেত্রে টিকটক তারকাদেরই বিজয় বলা যায়। কারণ এদের অনেকের চেয়ে টিকটক শিল্পীদের ফলোয়ার এবং জনপ্রিয়তা বেশি। বলাবাহুল্য, টিভি-সিনেমার এই তারকাদের অনেকেই অন্যের কুরুচিপূর্ণ স্কুল সংলাপেও ঠোঁট মেলাচ্ছেন, নৃত্য করছেন। প্রশ্ন উঠছে, শিল্পীরা এসব করছেন নাটক, সিনেমায় জনপ্রিয়তার ঘাটতি পোষাতে নাকি অর্থ লাভের আশায়? ইদানীং টিকটকে নাকি অর্থও পাওয়া যায়। আবার অনেক প্রযোজক, নির্মাতা কিংবা অভিনয়শিল্পী নিজেই ভিউ বাড়াতে তাঁদের নিজস্ব নাটক থেকে স্কুল ও অশ্লীল সংলাপগুলোকে কাটপিস হিসেবে টিকটকে ছেড়ে দিচ্ছেন।

ধরে নিলাম ভিউ বাড়ে কিন্তু মান কি বাড়ে? শুধু অশোভন পোশাক বা অশ্লীল সংলাপই নয়, ইদানীং টিকটক ব্যবহার করে মাদক বাণিজ্যও হচ্ছে।

আসলে ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম, স্ন্যাপচ্যাট, হোয়াটসঅ্যাপ, টিকটক কোনো মাধ্যমই খারাপ নয়। খারাপ হয় ব্যবহার দোষে। আর প্রযুক্তির এই অপব্যবহারেই বাড়ছে অপরাধ। বাড়ছে ধর্ষণ, নারী পাচার ও কিশোর অপরাধ। ফলে বাড়ছে সামাজিক ও পারিবারিক অস্থিরতা। আর এসব কারণেই বাড়ছে সামাজিক দূষণ।

এ থেকে রক্ষা পেতে হলে অভিভাবকদের পাশাপাশি বোদ্ধা সমাজ ও সরকারি নীতিনির্ধারকদেরও আন্তরিকভাবে এগিয়ে আসতে হবে।