পটিয়ায় সামাজিক দুরত্ব উপেক্ষা করে মার্কেটে উপচে পড়া ভিড়

কাউছার আলম কাউছার আলম

পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ১২:৫৮ পূর্বাহ্ণ, মে ১২, ২০২০ 477 views
শেয়ার করুন

দক্ষিণ চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া উপজেলায় মহামারী করোনার ভয় উপেক্ষা করে শপিংমল ও দোকান খুলে দেওয়ার প্রথম দিনেই ভিড় দেখা গেছে। প্রায় দুই মাস বন্ধ থাকার পর সরকার দেশের শপিংমল ও দোকান সীমিত আকারে খোলার সুযোগ দেয়। তবে শর্ত ছিল সামাজিক দূরত্বসহ অনান্য স্বাস্যবিধি মেনে চলার। কিন্তু সেগুলোর কিছুই দেখা যায়নি কেনাকাটার প্রথম দিনে।

গত মার্চের মাঝামাঝি থেকে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে সরকার নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছিল। গত রোববার (১০ই মে) দুই মাস পর এসব প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হলেও শর্ত ছিল ক্রেতা বা বিক্রেতারা হাতে গ্লাভস, মুখে মাস্ক এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখবেন। কিন্তু এর কোনোটিই অনেককেই মানতে দেখা যায়নি।

এ ছাড়াও সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকেও দেখা গেছে মানুষের ঢল। পটিয়া সদরে দেখা গেছে স্বাভাবিক সময়ের মতো মানুষের কোলাহল। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে তাদের সচেতনতা কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে দেখা গেছে।

জানা যায়, পটিয়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ঝুঁকির মধ্যে দেড় মাস বন্ধ থাকার পর রবিবার সকালে সব দোকানপাট খুলেছেন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘদিন পর এসব দোকানপাট খোলায় ক্রেতাদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। শহরের রাস্তায় মানুষ আর মানুষ। মানুষের চলাফেরা দেখলে মনে হবে সবকিছু স্বাভাবিক। সামাজিক দূরত্ব না মেনেই এসব দোকানে চলছে বেচাকেনা। অধিকাংশ দোকানের সামনে নেই হাত ধোয়ার ব্যবস্থা। ক্রেতারা দোকানে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে করছেন কেনাকাটা। এতে করোনাভারাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, তারা সরকারের দেওয়া শর্ত মেনে বেচাকেনা করছেন। সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চলছিল কেনাবেচা।

পটিয়া সদরের সবুর রোড, আদালত রোড, স্টেশন রোড সহ ছোট বড় দোকান ও মার্কেট গুলোতে একই চিত্র দেখা গেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা বলেছেন, আমরা সরকার দেয়া শর্ত মেনে দোকান খুলেছি। দোকানে আসা ক্রেতাদের জন্য হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, নিরাপদ দূরত্বে বসার ব্যবস্থাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দোকানদারি করা হচ্ছে। ক্রেতাদের সুরক্ষার জন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তার ছিটেফোঁটা ও চোখে পড়েনি।

পটিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল শর্ত মেনে সকল দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে। দোকান মালিকদের সরকারের দেয়া শর্ত অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। দোকানগুলোতে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা রাখা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বেচাকেনা করা, মুখে মাস্ক, হ্যান্ড গ্লাভস পরে কেনাবেচা করতে হবে। নির্দেশনার অমান্য করলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ জাবেদ বলেন, গত দেড় মাসে পটিয়ায় শিশুসহ চারজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। একজন মারা যান। রবিবার সারা দেশের ন্যায় পটিয়ায় সব ধরনের দোকানপাট খুলে দেয়া হয়েছে। এতে দোকানপাট ও রাস্তায় মানুষের ভিড় বাড়বে। ফলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হচ্ছে। দোকানদার বা ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি মেনে কতটুকু কাজ করতে পারবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন এই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

আইনজীবী এডভোকেট খুরশিদ আলম বলেন, করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে চলতি মাসটা আমাদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির। তাই আমাদের সবার আরও সতর্ক হওয়া জরুরি। এই মাসটা অতিপ্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে কাউকে না আসতে আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

পটিয়া দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম খোকন জানান, আজকে দোকান খুলে দেওয়ার প্রথম দিন ছিল। অনেক দিন পর খোলার কারণে এবং সময় কম থাকায় ভিড় হয়েছে। তবে আমি মনে করি, আরো বেশি মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আগে, আরো বেশি ক্ষয়ক্ষতি যেন না হয় সে জন্য দোকানপাট বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা হয়েছে। আগামীকাল হতে পটিয়ার ঈদ মার্কেট ও বিপনি বিতান গুলো ঈদের সময় পর্যন্ত বন্ধ থাকবে। এতে হয়ত আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হবে, কিন্তু জনস্বাস্থ্যের দিকটিই আগে বিবেচনা করা উচিত বলে আমি মনে করি।

পটিয়া থানার ওসি বোরহান উদ্দিন বলেন, আজকে সরকারি নির্দেশে দোকানপাট খুলে দেওয়া হয়েছে। আমরা সামাজিক দূরত্ব মেনে চলতে সকলকে উদ্ধুদ্ধ করছি। পুরো পটিয়া জুড়ে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে আমরা সবাইকে আহবান জানাচ্ছি।

প্রসঙ্গত, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকারের দেয়া নির্দেশনা মেনে গত ২৬ মার্চ থেকে পটিয়ার দোকান মালিকরা তাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও ওষুধের দোকান খোলা রাখা হয়।