নিজের বিবেকটাকে জাগান

ক খ ম রুদকী খান ক খ ম রুদকী খান

অনলাইন এক্টিভিস্ট, ফ্রান্স

প্রকাশিত: ২:০৩ অপরাহ্ণ, নভেম্বর ৫, ২০২০ 544 views
শেয়ার করুন

 

অতিরিক্ত কোন কিছুই দেশের জন্য এবং দেশের জনগনের জন্য কখনওই কল্যাণ নিয়ে আসে না – বাংলাদেশী #মুসলিম ভাই বোনেরা দয়া করে একটু চিন্তা করুন আপনার আমার ইমানের দৌড় কতটুকু ?  কোন প্রেসিডেন্ট এর ব্যক্তিগত মত প্রকাশ করা কিন্তু ঐ দেশের জনগনের প্রতিনিধিত্ব বহন করে না #বাংলাদেশী যে আসলেই হুজুগে মাতাল তার প্রমাণ হচ্ছে সম্প্রতি ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট #ইমানুয়েলম্যাক্রনের বক্তব্যের সামনে পিছনে কি হয়েছে কেন হয়েছে- এগুলো বিচার বিশ্লেষণ না করেই ফ্রান্সকে বয়কট কর , ফ্রান্সকে বর্জন করুন, ফ্রান্সের পন্য ব্যবহার বাদ দিন এই সব বাজে মন্তব্য করে দেশের ভাবমূর্তি এবং দেশের জনগনের এবং সেই সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নে বসবাসকারি #মুসলিম বাংলাদেশীদের জন্য ক্ষতি ডেকে আনতেছে।

#ফ্রান্স পন্য বর্জন করুন – ফ্রান্সের কি কি পন্য বাংলাদেশীরা ব্যবহার করে? কয়জন করে কিংবা করতে পারে? ধরুন, কসমেটিকসের লরিয়েল, গার্নিয়ার শ্যাম্পু ইত্যাদি আরও দামি দামি পন্য আছে যা বাংলাদেশীদের মধ্যে .০০০১% লোক হয়তো ব্যবহার করে, তাও সস্তার পন্য যেটা এখানে ছাড় দিয়ে বিক্রয় করা হয়। ফ্রান্সের প্রচলিত দ্রব্যাদি কেনার সামর্থ্য আপনার আমার নেই যা ফ্রান্স উৎপাদন করে ।
#ফ্রান্স বয়কট করুন – ধরুন করলাম – এতে আমার ক্ষতি – যদি আমি ফ্রান্স ছেড়ে যাই আপনার লাভ কি ? লাভ নেই, কিন্তু দেশের জন্য ক্ষতি । যে সব বক্তারা বলে- তারা শুধু বলতেই জানে করতে জানে না, আমার কি কি ক্ষতি? আমি দেশে গিয়ে কিছু করতে না পারলে আপনারা কি আমার ব্যবস্থা করে দেবেন ? আমার ছেলে মেয়ের ভরণ পোষণ কি এই সব বক্তারা বহন করবে? , করবে না। কারণ, এরা শুধু প্রচার করতেছে – ইউটিউবাররা, নিউজপোর্টালগুলো এবং ভন্ড হজুরেরা, ব্যবসার আশায় – এটা কি আপনি আপনারা বুঝতে পারেন না, তা তো পারবেন না, তালে মাতাল হয়ে- নাচতে ভাল লাগে ।

#we_love_mohammad_ﷺ_challenge আপনি হ্যাস ট্যাগ দিয়ে বুঝাচ্ছেন আপনি আমার আপনার রাসূল (সঃ) কে ভালবাসেন ? আপনি রাসূলকে ভালবাসেন, কতখানি ভালবাসেন ? আপনি রাসূল (সঃ) কে এতটুকুও ভালবাসেন না – তার প্রমাণ আপনি নিজে — আপনি নামাজ পড়েন কি? আপনি হালাল আয় করেন কি ? আপনি কি সত্য বলেন? আপনার পাশের বাড়ীর লোক খেয়েছে না কি না খেয়ে আছে খোঁজ নিয়েছেন কি ? আপনি হকদারের হক আদায় করেছেন কি ? আপনার আচরনে আপনার সংঙ্গীয় বন্ধুবান্ধব খুশি কি ? আপনি আপনার পিতা মাতার খেয়াল রাখেন কি ? আপনার স্ত্রীর হক ও ছেলে মেয়ের হক আদায় করছেন তো ঠিক মতন ?
হ্যা’ আপনার থেকে পাওয়া যাবে না – না এর অর্থ হচ্ছে আপনার —- আমার বলার প্রয়োজন নেই আপনি বলবেন ইসলামে আপনার অবস্খান কতটুকু- এখানেই আপনি দুর্বল – তা হলে আপনি শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রের সংগে যুদ্ধ করবেন কেমন করে ? সত্যি বলতে কী আপনারা একেবারে হুজুগে, আপনারা শুধু বকবক করতে পারেন ।

ঠিক আছে আপনারা প্রমান করুন আপনারা আপনার আমার রাসূলকে ভাল বাসেন – দেখি আন্দোলন করেন, সরকারের পতন ঘটান, দেশে ইসলামিক আইন প্রনঁয়ন করুন, তা হলেই বুঝবো আপনি আপনার ও আমার রাসূলকে ভালবাসেন ও আপনার আমার সৃস্টিকর্তা আল্লাহকেও ভালবাসেন। তা তো কোন দিনই করতে পারবেন না, পারবেন অন্যদেশেরে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি কিংবা লেখক বুদ্ধিজীবী কি বলছে সেটা নিয়ে অযতা বাদর নাচ নাচতে।
বাংলাদেশের অনেকেই ফ্রান্সে অবস্খান করেন। তাদেরকে ফোন দিয়ে মূল বিষয়টি জেনে তারপর মন্তব্য করতে পারতেন আপনি। তা না করে অযতা বাদর নাচ নেচে পরিস্থিতি ঘোলাটে করছেন।
আসুন জেনে নেই ইমানুয়েল ম্যাক্রন কি বলেছে? আমার মতন করে আমি উপস্থাপন করছি – ঘটনার শুরুটা বলে নেই – এবং সামান্য একটা ধারনা বাংলাদেশী ভাইদেরকে আগেই বলে নেই –
১। ফ্রান্সের কোন রাষ্ট্রী কোন ধর্ম নেই।
২। ফ্রান্সে ৭০০০০০০+ মুসলমানের বসবাস
৩। ফ্রান্সে মোট জনসংখ্যা প্রায় ৬৯০০০০০০
যাইহোক বাকিটা উইকিপিডিয়া দেখে নেবেন। আমি লিংক দিলে সেটা ফরাসি ভাষায় যেতে পারে , নিজ দায়িত্বে দেখে নিবেন ।
কিছুদিন আগেই ইমানুয়েল ম্যাক্রন বলেছিল – আমি বোরকা ও পর্দা করা মুসলিম নারীদের সন্মান করি। তখন তো আজকের নাচুনে পাগলেরা একবারের জন্যও হ্যাস ট্যাগ দিয়ে বলেনি – I love ইমানুয়েল ম্যাক্রন , #I_Love_France, , I will purchase France goods, I will use
এখনকার মতো তো এই রকম # ট্যাগ মারেননি , একবারের জন্যও তো একটা হ্যাস ট্যাগ মেরে বলেনি কেউ, ও তখন সমস্যা হয় নাই, তা হলে এখন কি হলো ?
ঘটনার সার সংক্ষেপ : কোন এক স্কুলে ইতিহাসের শিক্ষক কিছু কার্টুন বানিয়ে বলেছিল এটা হযরত মুহাম্মদ। কিন্তু কিছু মুসলিম ছাত্র ছাত্রি বাসায় গিয়ে তাদের মুসলিম পিতা মাতাকে বিষয়টি অবহিত করে, এতে কিছু অভিবাবক স্কুলের প্রধান শিক্ষককে বিষয়টি অবহিত করে। ঐ ইতিহাসের শিক্ষক ঘটনার পূনরাবৃত্তি করায় কোন এক মুসলিম ছাত্রের পিতা ঐ শিক্ষককে হত্যা করে এতে পরবর্তিতে পুলিশ এ ঘাতককেও গুলি করে মেরে ফেলে। এবার বলুন বুকে হাত দিয়ে – এটা কি ঠিক করেছে ? কেন ঠিক করে নাই বিস্তারিত বলতেছি ?
# আমাদের নবী করিম (সঃ) এর কি কোন ছবি আছে ? না, নেই – এবার তা হলে বলুন – আমি যে কোন একটা ছবি একে যদি বলি এটা তোমার পিতা? আপনি কি সেটা মানবেন? মানবেন না। তাহলে, যে কেউ একটা ছবি এঁকে বলে দিলো এটা মুহাম্মদ (সঃ) এর ছবি আর আপনি মেনে নিলেন? শুধু মেনেই নিলেন না, এই জন্য কি কার্টুন অঙ্কনকারীকে হত্যা করে দিলেন? এটা কি ঠিক হয়েছে? এই ঘটনায় দেশের আইন আইন অনু্যায়ি যেটা করা প্রয়োজন ছিল- ফ্রান্স সরকার সেই পদক্ষেপ নিয়েছে।

এবার আলোচনা করা যাক ইমানুয়েল ম্যাক্রনের ঘটনার ভাষ্য : ইমানুয়েল ম্যাক্রন – অনেক দিন থেকেই কিছু ফরাসি কট্টর নাগরিকদের ঘৃনার পাত্র ছিলেন – এবং সেই সঙ্গে ইমানুয়েল ম্যাক্রনের বিপরীত রাজনৈতিক কিছু ব্যক্তি সমালোচনাও করছিলেন যে, ম্যাক্রন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি যা যা করা প্রতিশ্রুতি করেছিলে , তার অধিকাংশ সম্পন্ন করেছে। কিছু কাজ নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অসম্পন্ন ছিল – ইমানুয়েল ম্যাক্রন তাদের দৃষ্টি, ভালবাসার পাওয়ার আশায় বলেছিল – মুসলিমরা সন্ত্রাসবাদী – ফ্রান্স হচ্ছে ধর্ম নিরপেক্ষ দেশ , প্রত্যেকেই তার মতামত প্রকাশকার ক্ষমতা রাখে – তাতে কি হয়েছে ?
বাংলাদেশী মুসলিম মূর্খ ভাইদের বোঝা উচিত যে, “এটা তাদের দেশীয় রাজনৈতিক বিষয় – অভ্যান্তরিন বিষয়।
ফরাসি স্কুল শিক্ষককে হত্যার পর – পরই আবার গির্জার সামনে তিন জন খ্রিস্টান ফরাসিকে এক মুসলিম ছুরিকাহত করে হত্যা করেছে – এই হত্যা কি ইসলাম সমর্থন করে কি? নিরীহ লোকজন হত্যা কী কোরআন হাদিস সমর্থন করে? করেনা। যাদের দেশে (আপনাকে / আমাকে ) মুসলিম ভাইদের আশ্রয় দিয়েছে – সেই মুসলিম ভাইরাই যদি আশ্রয়দাতাদের এইভাবে হত্যা করে তা হলে এই হত্যা কি জিহাদ নাকি বিশ্বাসঘাতকতা করা আপনারাই বলুন। এখানে এই হত্যাকারী মুসলিম ভাইরাই বেঈমান – কারণ, যাদের দেশে এসে আপনি, আমি, আমরা ও অন্যান্য মুসলিম ভাইরা এসে আশ্রয় প্রার্থনা করেন কিংবা করি – আবার ধর্মের ( ধর্ম সম্পর্কে ধারনা নেই ) দোহাই দিয়ে আশ্রয় দাতাদের হত্যা করি এটাকি ইসলাম সমর্থন করে ? না, কখনই করেনা

দেশের ক্ষতি কেমন করে মুসলমান ভাইরা করতেছে –
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো মুসলিম দেশগুলো থেকে গার্মেন্টস বা পোশাক শিল্পের সবচেয়ে বড় আমদানি কারক। এখন আপনাদের অযৌক্তিক লাফালাফির করণে চুক্তি বাতিল করে যদি মুসলিমের উপর অত্যাচারী ভারত বা চীনের সাথে চুক্তি করে তকণ যে ভয়াবহ অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে তার দায় নেবে কে? ইউরোপীয় দেশগুলোর কোন কিছুই হবে না, যা বাঁশ খাওয়ার তা খাবে আমাদের মুসলিম দেশগুলো ? তার দায়ভার কে নেবে?? দয়া করে নিষয়গুলো একটু ভেবে দেখুন।
কোন বিষয় না জেনে বুঝে অযতা আন্দোলনের নামে মুর্খতা প্রকাশ করবেন না। নিজের বিবেকটাকে জাগান, নিজেও জেগে উঠুন।