“বাবলা চৌধুরী হিরো, কিন্তু দলকানা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রতিবন্ধীরা কি জিরো ?”
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন
লেখক ও আইনজীবী
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন তার ছেলেকে স্কুলে ভর্তি করে শিক্ষকদের উদ্দেশ্যে চিঠি লিখেছিলেন, আমার ছেলেকে প্রকৃত সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে যখন যে শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন নির্ভয়ে আপনারা সে শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলবেন। কেননা এখন থেকে আমার ছেলের প্রকৃত অভিভাবক হচ্ছেন শিক্ষক সমাজ। তাঁর লিখিত চিঠিখানা বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঝুলিয়ে রেখেছেন ঠিকই কিন্তু বাস্তবে কি সে দায়িত্ব শিক্ষক সমাজ পালন করিতেছেন ? না। কিছুতেই না। তখনকার শিক্ষক সমাজ আদর্শবাদীদের পূজারী কিন্তু বর্তমান শিক্ষক সমাজ দলবাজী, চাটুকারী, চামচামী, লুণ্ঠনকারী অবৈধ পথে ক্ষমতার স্বাদ গ্রহণকারী, ধর্ষণকারী, চাঁদাবাজী, অপদার্থের মতো ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য যখন যেখানে যাহা কিছু করা দরকার, যেমন- উপঢৌকন হিসেবে নিজের স্ত্রী বা অন্য সুন্দরীকে ক্ষমতাশীল ব্যক্তিকে দিয়ে মনোঞ্জনের মাধ্যমে ম্যানেজ করা, অর্থ-বিত্ত ইত্যাদি উপহার দেওয়া, নীতি নৈতিকতাকে জলাঞ্জলি দিয়ে ক্ষমতায় বেহায়ার মত টিকে থাকা ব্যক্তিরাই শিক্ষ প্রতিষ্ঠান সমূহে কৌশলে পদ পদবী দখল করে আছে। অন্যদিকে আদর্শ শিক্ষকরা কোনঠাসা হয়ে প্রকৃত শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের শিক্ষা দিতে ব্যাহত হচ্ছেন। সুতরাং আব্রাহাম লিংকনের চিঠি এসব দলকানা শিক্ষকদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝুলিয়ে রেখে চিঠিখানাকে অপমানিত না করাই ভাল।
আমি এম.সি কলেজের একজন নিয়মিত ছাত্র ছিলাম। এই কলেজে ভর্তি হওয়া মানে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনায় গুরুত্বপুর্ণ অবদান রাখার সুযোগ করে দিয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। যেমন- অত্র কলেজের ছাত্র ছিলেন মরহুম হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, মরহুম সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত, মরহুম আব্দুস সামাদ আজাদ, মরহুম সাইফুর রহমান, মরহুম ফরিদ গাজী, সদ্য সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, মরহুম দেওয়ান মোহাম্মদ আজরফ সহ আরো কত গুণী ব্যক্তি এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা নিয়ে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করে প্রতিষ্ঠানের সুনাম বৃদ্ধি করেছেন। কিন্তু আজ এই প্রতিষ্ঠানকে কলংকিত করেছেন মুখুশধারী শিক্ষিত ক্ষমতাধররা। তৎকালীন সময়ের অধ্যক্ষ পেয়েছি জনাব প্রফেসর আব্দুল আজিজ এবং প্রফেসর হাসান ওয়াজেদ। তাঁদের আদর্শিকতার কাছে কোন অছাত্র, পুলিশ, ছাত্র নামধারী ক্যাডার কেহই ক্যাম্পাসে প্রবেশ করার দু:সাহস দেখাতে পারেনি। পরীক্ষা চলাকালীন কোন প্রশাসনিক কর্মকর্তা বা ম্যজিস্ট্রেট বাহিরে থেকে দায়িত্ব পালনে যেতে মানা করা হতো। কারণ হিসেবে বলতেন, আমরা থাকতে কেন বাহিরে থেকে ভাড়াটিয়া এনে নকল প্রতিরোধ করতে হবে। তাহলে আমরা দায়িত্ব পালনে ব্যার্থ এ কথা লিখে পদত্যাগ করা উচিত বলে মনে করতেন। তখনকার সময়ে হোষ্টেলে মেধার ক্রম:অনুসারে সিট বরাদ্দ হতো এবং মেধার ভিত্তিতে হোষ্টেলের প্রিফেক্টর দায়িত্ব দেওয়া হতো। পরীক্ষার রেজাল্ট বাহির হলে দেখা যেত হোষ্টেলের প্রায় সকল ছাত্রই ভাল ফলাফল অর্জন করিত। এটাই ছিল এম.সি কলেজের বাস্তব অভিজ্ঞতা।
আর এখন! বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় মন্ত্রী কতিপয় দুষ্কিৃতিকারী কর্তৃৃক হোষ্টেল পুড়ানোর পর কান্নায় ভেঙে পড়েন। অথচ শত বছরের পুরনো হোষ্টেল পুড়ানো মামলার রায় এখনো হয়নি, হবে কেমনে, এরা তো ক্ষমতাসীন দলের ছত্রছায়ায় লালিত পালিত। হোষ্টেলের সুপার বলেন, অসহায়, অধ্যক্ষ এসব মাস্তানের সহযোগী; পেশাদার সন্ত্রাসী নেপথ্যে থেকে সন্ত্রাসীদের দিয়ে খুন, রাহাজানি, চাঁদাবাজি , ধষর্ণ এসব কার্যক্রম চালিয়ে পবিত্র অঙ্গণকে কুলষিত করে চলেছেন দিনের পর দিন। কিন্তু পাপ বাপকেও ছাড়েনা। যেমন ছাড়েনি গত ২৬/০৯/২০২০ইং তারিখ শুক্রবার রাতে স্বামীকে বেধে রেখে নির্যাতিতা মহিলাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে আধ্যাতিক রাজধানী সিলেটকে কুলষিত করেছে, পবিত্র ছাত্রাবাস তথা ক্যাম্পাসকে অপবিত্র করে, গোটা বাংলাদেশের কাছে বা বিশ্বের কাছে অপমানিত করেছে এবং তাদেরকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যাহারা সহযোগীতা দিয়ে পদ পদবী ঠিক রাখিতেছেন তাদেরকে দিয়ে ৭, ৯, ১১, ১৫, এবং আরো সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করে ধর্ষণকারী কমিটি করা যেতে পারে, বাস্তবতার আলোকে:
যেমন এ কমিটিতে পদাধিকার বলে অধ্যক্ষ, হল সুপার বা প্রভোষ্ট, প্রভাবশালী ধর্ষণকারী যারা আছেন তাদেরকে যাচাই বাছাই করে ধর্ষণের জন্য প্রভাবশালী কমিটি করা যেতে পারে। এসব কমিটিতে প্রয়োজনে প্রভাবশালী ধর্ষকের মা বা বোনদেরকে ও রাখা যেতে পারে। এসব ধর্ষক যাকে ধর্ষণ করিতেছে প্রয়োজনে তার মা বা বোনকে দিয়ে স্থির চিত্র ধারন করিতে পারে। এজন্য কমিটিতে নেওয়ার পূর্বে ধর্ষণের চিত্র কিভাবে ধারণ করিতে হবে তাদের প্রশিক্ষন দিতে হবে। প্রশিক্ষণের দায়িত্ব অধ্যক্ষ বা হল সুপারকে দেওয়া যেতে পারে।
এতসব লিখার কারণ, এসব শিক্ষিত রাষ্ট্রীয় প্রতিবন্ধীরা এখনও এসব ধর্ষকের বিপক্ষে কোন ধরনের প্রতিবাদ বা একটি বিবৃতি দেয়নি, বরঞ্চ তলে তলে শুনিতেছি তাদের পক্ষেরই তদবির করিতেছে। সুতারং এ শ্রেণী বা পেশার শিক্ষকের কাছে আব্রাহাম লিংকনের চিঠি প্রযোজন্য নহে। তাই তাদের কাছে ছাত্র ছাত্রীরা মোটেও নিরাপদ নহে। এধরণের অপকর্মের শিকার কত ছাত্রছাত্রী ধর্ষিত হয়েছে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে পারে বলে আমার বিশ্বাস।
বাবলা চৌধুরীকে স্যালুট জানাই, প্রতিবারের দু:সাহসিকার জন্য। তার হাতে কোন অস্ত্র ছিলনা, ছিল মনোবল এবং সৎ সাহস। সন্ত্রাসী বা ধর্ষণকারীদের হাতে নিশ্চয়ই অস্ত্র ছিল, কিন্তু অস্ত্র ব্যবহারের দু:সাহস হারিয়ে ফেলেছিল। নির্যাতিতদের সহযোগীতা কিভাবে বাবলা চৌধুরী করেছেন গোটা দেশবাসী অবলোকন করেছেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ এবং কানে কানে একে অপরকে বলিতেছে পাড়ায় মহল্লায়, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরণের বাবলা চৌধুরী দরকার। তবেই এসব অন্যায়, অত্যাচার সম্মূলে উৎখাট হবে। ধ্বংস বা বিনষ্ট হবে সকল অপকর্ম। কোন কোন ক্ষেত্রে প্রকৃত ধর্ষণকারীদের লিঙ্গ কেটে তাদের পরিবারের কাছে লিঙ্গ উপহার দেওয়া যেতে পারে বাবলা চৌধুরীর মাধ্যমে। বাবলা চৌধুরীকে ইতিমধ্যে গোটা দেশবাসী অভিনন্দন জানিয়েছে, তার বিবেককে উজ্জিবীত ও প্রাণবন্ত করে রাখার জন্য এবং দেশবাসী আশা করে প্রত্যেক পাড়া মহল্লায় এ ধরণের বাবলাদের পৃষ্টপোষকতা দেবে সমাজ।
সিলেট জেলা আইনজীবি নেতৃবৃন্দ বাবলার কার্যক্রমে সন্তুষ্ট হয়ে আইনজীবি সমাজ বিবেকের তাড়নায় পেশাদারিত্বের উর্ধ্বে উঠে “ধর্ষণ কারীদের” কোন আইনি সহায়তা দিবে না মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ নজির বাংলাদেশে প্রথম। সুতরায় সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি এ.টি.এম ফয়েজ এবং সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সেলিম সহ সকল নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ।
অপরদিকে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সকল কমিশনারবৃন্দ একতাবদ্ধ হয়ে গোটা সিলেটকে ধর্ষণমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। পাড়ায় মহল্লায় ধর্ষণ প্রতিরোধ কমিটি করার ঘোষণা দিয়েছেন। বাবলা চৌধুরী ও তার বিবেককে ধন্যবাদ দিয়েছেন।
প্রশাসনের কাছে বাবলার নিরাপত্তা ও ধর্ষনকারীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করছেন।
এছাড়া সিলেটের সর্বত্র সুশীল সমাজ, বিভিন্ন পেশাজীবি সংগঠণ প্রতিবাদমুখর। তাদের সকলের একই দাবী, ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ায় কথা বলেছেন সুজনের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী, সনাকের পক্ষে কথা বলেছেন সিলেট আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সাবেক সভাপতি এডভোকেট লালা, এডভোকেট মিছবাহ উদ্দিন সিরাজ, রুহুল আনাম চৌধুরী প্রমুখ। তাদের সকলের একই দাবী সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। এদিকে সুশাশনের জন্য নাগরিক বিয়ানীবাজার উপজেলা শাখা ধর্ষকদের কঠিন শাস্তি নিশ্চিতের দাবীতে মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। কর্মসূচীতে উপস্থিত ছিলেন, সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর বিয়ানীবাাজর উপজেলা শাখার সভাপতি এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন, সহ সভাপতি অধ্যক্ষ মুজিবুর রহমান, সম্পাদক খালেদ আহমদ, সহ-সম্পাদক এনাম উদ্দিন, প্রভাষক আব্দুস সামাদ ও হাফিজুর রহমান প্রমুখ। বিচারকদের কাছে দাবী মন্দাতার আমলের বিচার ব্যবস্থায় দেখিলাম, শুনিলাম, তারিখ দিলাম এসব রীতিনীতি বাদ দিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ে বিচার কার্য সম্পূর্ণ করে দেশবাসীকে দেখিয়ে দেন সাহেদ, সাবরিনা, নুসরাত হত্যা, মিন্নি গংরা যেমনি রক্ষা পায়নি, ঠিক তদ্রুপ সিলেটের পবিত্র ভূমি বিনষ্টকারী এম.সাইফুর রহমান, রনি ও তাদের সহযোগীদের সংক্ষিপ্ত সময়ে বিচারকার্য সম্পূর্ণ করে সিলেটবাসীকে শান্ত রাখার সুযোগ নিন, নতুবা বাবলা চৌধুরীর নেতৃত্বে সিলেট এম.সি. কলেজ হোষ্টেল মাঠে প্রকাশ্য দিবালোকে বিচারের মঞ্চ স্থাপন করে এসব দাগী ক্রিমিনালদের বিচারকার্য সম্পূর্ণ করবে এবং বাবলাকে সর্বোচ্চ সহযোগীতা করবে সিলেটবাসী। তখন আর আপনাদের প্রশাসন সাধারণ সিলেটবাসীকে নিয়ন্ত্রণের সর্বোচ্চ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলবেন। সিলেটবাসীকে ধৈর্য হারা হবার সুযোগ দিবেন না। প্রয়োজনে এসব দাগী ক্রিমিনালদের প্রচলিত আইন স্থগিত করে ক্রসফায়ারে হত্যা করলে সিলেটবাসী নিশ্চিত আনন্দিত হবে। ইংরেজীতে একটি প্রবাদ আছে” Necessity knows no law.”
লেখকঃ এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন, সভাপতি সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) ও কলামিষ্ট। বিয়ানীবাজার, সিলেট।


