‘‘ক্ষমতা ক্ষনস্থায়ী, কিন্তু চারিত্রিক গুণাবলী চিরস্থায়ী”
এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন
লেখক ও আইনজীবী
প্রবাদ আছে “Health Is lost, something is lost, Money is lost, nothing is lost, character is lost, everything is lost” অসূস্থ হলে সূস্থতা লাভ করা যায়, অর্থকড়ি হারালে কিছ্ইু হয়না, কিন্তু চরিত্র! এক মূহূর্তে সারাটা জীবনের ওজনকে ম্লান করে দিতে পারে। এমনকি ভবিষ্যত বংশধরকেও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয়। সুতরাং অর্জিত কলংকের জন্য সমাজে যাহাতে কোন কোন ক্ষেত্রে প্রভাত পুরুষ হিসাবে চিহ্নিত না হই সে দিকে সকলকে খেয়াল রাখতে হবে।
সকল ধর্মেই অন্যায়, অবিচার, ব্যভিচার, জুলুম নির্যাতন বা পাপাচারকে ঘৃনা করা হয়েছে। যাহারা এসব গুণ লালন এবং পালন করিতেছে তারা জাতি ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলেরর কাছে ঘৃণিত, লাঞ্চিত, অপমানিত। অপরদিকে যাহারা এসবের বিরুদ্ধে নিবেদিত কর্মী হিসাবে সমাজে সোচ্চার তাহারা কিন্তু মরেও অমরত্বের খেতাবে ভুষিত হবেন সেটা কিন্তু নিশ্চিত। যেমন ১৭৫৭ সালে নবাব সিরাজোদ্দৌলা ছিলেন ন্যায়নীতি পরায়ন, সমাজ তাকে বীরের মর্যাদা দিয়ে স্বরণ করে, কিন্তু মীর জাফর আলী খাঁন ১৭৫৭ থেকে ১৭৬৫ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশদের চাটুকারীতা করে ক্ষমতাসীন ছিল, নবাব সিরাজোদ্দৌলার সাথে বেঈমানী করে বা বিশ্বাসঘাতকতা করে মীর জাফর আলী খান ক্ষমতাসীন হয়েছিল। কিন্তু সমাজ তাকে মীর জাফর বা বেঈমান বা বিশ্বাসঘাতক হিসাবে মূল্যায়ন করে থাকে। কিন্তু নবাবকে নবাবের মর্যাদায় সম্মানীয় আসনে মানুষের মনের গভীরে স্থান দিয়ে মূল্যায়ন করে থাকে। সুতরাং সমাজ, দেশ জাতীর কাছে মীর জাফরের চরিত্র ধারন কারী বাঁচার চেয়ে মরাই শ্রেয়।
তাদের জন্য অপমৃত্যুই ভালো। পবিত্র ইসলাম ধর্ম আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছে, যেমন- ঘুষ, দূর্নিতী, সমাজ বিরোধী কাজ, ব্যভিচার, পাপাচার, জুলুম, নির্যাতন, অন্যায়, অবিচার ইত্যাদি ত্যাগ করিয়া চলিতে হইবে। অপরদিকে সমাজকে সুশৃংখল সুন্দর, পরিপাটি জীবন উপহার দেবার জন্য সূস্থ্য মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ প্রতিটি ধর্ম প্রেমিক মানুষকে এসব অন্যায়, অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ঈমানী দায়িত্ব । কেননা, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধ থেকে শিক্ষা পেয়েছি, আল্লাহ জলে, স্থলে, আকাশে, মাটির নিচে অর্থাৎ সর্বত্র বিরাজমান। সুতরাং আমি যেখানে, যেভাবে, যে অবস্থায় থেকেই এসব অনৈতিক কাজের সাথে সম্পৃক্ত হই না কেন, মনে রাখতে হবে আমার আল্লাহ সর্বই দেখিতেছেন। আর এ বিশ্বাসধারী কোন মুমিন বান্দা বা ঈমানদারগণ কোন অন্যায় বা অনৈতিক কাজ করিতে পারিবেনা, যদি তার মধ্যে ঈমানী শক্তি বিদ্যমান থাকে। যখনই সমাজ থেকে সকল অন্যায় অবিচার দুর হয়ে যাবে, তখনই রাষ্ট্র তথা সমাজ শান্তির জনপথে রুপান্তরিত হবে।
-
আপনি ক্ষমতা দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি সম্পদ করলেন কিন্তু ঘরে গিয়ে দেখলেন সন্তান মাদকাসক্ত, স্ত্রী অন্যায় অবিচার করিতেছে, মেয়ে অন্য ছেলের সাথে পরকিয়ায় ব্যস্ত। পরিবারে আপনার কোন কমান্ড নেই। সমাজ আপনার অপকর্ম জানে। সুতরাং সমাজ আপনাকে এড়িয়ে চলিতেছে। নিন্দা করিতেছে অসৎ উপায়ে অর্জিত সম্পদ মসজিদ, মাদ্রাসায় দান করার ইচ্ছা আছে কিন্তু, মসজিদ মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করিতেছে না, ভিক্ষুক যদি জানে আপনি অন্যায়ভাবে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, সেও কিন্তু আপনার দান নিবে না ইত্যাদি প্রমান সহ্য করতে না পেরে বলবেন মনে মনে “ যে বুল তোমারে ভুলে, হীরা ফেলে, কাচ তুলে ভিখারী সেজেছি আমি, আমার যে ভুল প্রভু তুমি ভেঙ্গেঁ দাও………।” কিন্তু যখন এ ভুল বুঝতে পেরেছেন, তখন কিন্তু আপনার সময় শেষ। এখন শুধু অপমানের বুঝা ছাড়া আর কিছু নাই।
-
অসৎ পথে অর্জিত সম্পদ দিয়ে স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়, স্বজন সবাই ভোগ বিলাস করবে, কিন্তু আপনার অপকর্ম বা অন্যায়ের দায় কেহ নিবে না। যেমনটি নিকট অতিথের কিছু উদাহরন দেওয়া যেতে পারে, বনের রাজা ওসমান গণি, সিলেটের অত্যন্ত ক্ষমতাধর, প্রভাবশালী, লুণ্ঠনকারী, ধর্ষণকারী অর্থাৎ নানাবিধ অপকর্মের নায়ক, সিলেট বিভাগের উপ-পুলিশ মহা পরিদর্শক (ডি.আই.জি) মিজানুর রহমান, সিলেট কারা উপ মহাপরিদর্শক পরিমল দাস, চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার বাবুল আক্তার, ফেনির নুসরাত হত্যা মামলার অন্যতম অভিযুক্ত মোয়াজ্জেম আলী, কক্সবাজার টেকনাফের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রদীপসহ পুলিশ প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা কেহ পালিয়ে বেড়াচ্ছে কেহ জেলের মধ্যে কঠিন দিন যাপন করিতেছে। ইতিমধ্যে বিয়ানীবাজার থানায় সিভিল ড্রেসে রাত্রি বেলায় আমেরিকা প্রবাসীর বাড়ীতে গ্রামবাসীর বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য ২০০৯ সালে মোনায়েম খান গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। জানি না হত্যা মামলাটি কোন পর্যায়ে আছে বা তার পরিবার পরিজন কোথায় কিভাবে আছে পুলিশ প্রশাসন খবর রাখিতেছেন কি না ? ২০১৯ সালে বিয়ানীবাজার থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুবের আহমদ নিজের বাসায় ছাদ থেকে পড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে। এসব ঘটনাতো প্রচার মাধ্যমে বাকী তো পারিবারিক সংকট অজানা কাহিনী বিস্তর।
এসব লিখার বা উদাহরন টানার একটি মাত্র কারণ, এসব পেশার লোকজন আপাদমস্তক রাষ্ট্রীয় কোষাগারের টাকায় রাষ্ট্রের জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধানের জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকা বেতন পরিশোধিত হয়ে থাকে। সুতরাং রাষ্ট্রের সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা বিধানের গুরুত্ব অনেক বেশী। এসব নীতি লঙ্ঘন করে পেশাদারিত্বের বাইরে গিয়ে কোন বিশেষ ব্যক্তিদের ইচ্ছার প্রতিফল ঘটালেন, অনৈতিক সুযোগ সুবিধা নিলেন, অন্যের ক্ষতি করলেন কিন্তু আপনার কি লাভ হলো ? রাষ্ট্রীয় পোষাক পরিধান করে নারায়নগঞ্জের দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় নুর হোসেনের প্রতিপক্ষকে দমন করতে গিয়ে র্যাবের অধিনায়ক, তৎকালীন সময়ের প্রভাবশালী মন্ত্রীর জামাতা লেঃ কর্ণেল তারেক ও তার সহযোগীরা ৭জনকে হত্যা করে, আধুনিক রাষ্ট্রীয় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত হয়ে এসব লাশ গোপণ রাখতে পারে নাই, গোপন রাখার জন্য চেষ্টা করেছিল। পারবে কেমনে ? উপরো তো আল্লাহ একজন আছেন। তিনি তো সর্বই দেখেন। বর্তমানে এসব অপকর্মীরা আদালতের সাজা বা পরোয়ানা নিয়ে মৃত্যুর প্রহর গুনছে। কোন ক্ষমতাই রক্ষা করতে পারে নাই, পারবেও না।
যেমনটি প্রশাসনের রন্দ্রে রন্দ্রে বালিশ কান্ড, করোনা জালিয়াতি, খিচুড়ি রন্ধনের প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্যে দূর্নিতী করার ইচ্ছা ইত্যাদির মাধ্যমে ক্ষমতা দেখিয়ে লুন্ঠন করলেন এবং সমাজ আপনাকে মূল্যায়ন করল তুইন চোর, তোর বাপ চোর, তুইন ডাকাত, তোর বাপ ডাকাত ইত্যাদি অপবাদ নিয়ে মরলেন, শিক্ষিত হলেন কিন্তু অসৎ-শিক্ষিত, দূর্নিতী পরায়ন হলেন, অন্যায় ভাবে আমাকে জেল-জুলুম দিলেন, ক্ষমতার চর্চা করলেন , কিন্তু আপনার কি লাভ হল ? কিছুই না। যেমনটি রাষ্ট্রের সংবিধানিং পদে দায়িত্ব পালন করেছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এস.কে. সিনহা। কিন্তু বর্তমানে তো আর সেই ক্ষমতা নেই। বিভিন্ন দেশ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এটাই বাস্তবতা। এসব বাস্তবতা থেকে কি শিক্ষা নেওয়া যায় না ? অবশ্যই নেওয়া যায় তবে ইচ্ছা থাকতে হবে। আর এসব অপকর্ম থেকে বাচার একমাত্র পথ আপনার বিবেককে জিজ্ঞাসা করুন, দৈনন্দিন কার্যক্রমের ভাল-মন্দের হিসাবে করেন। মন্দ কাজের জন্য সর্ব শক্তিমান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চান, আত্মশুদ্ধির চেষ্টা করুন। কেননা, বিবেকই সর্বোচ্চ আদালত।
লেখকঃ এডভোকেট মোঃ আমান উদ্দিন, সভাপতি: সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) বিয়ানীবাজার ও কলামিস্ট।


