নি‌র্ভেজাল আ.লীগ প্র‌তিষ্ঠিত হোক সি‌লে‌টে

প্রকাশিত: ২:০১ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২০ 760 views
শেয়ার করুন
  •  হুসাইন আহমদ

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে দেশ স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ক্রান্তিকালে মির্জাফরের উত্তরসুরী কিছু রাজনীতিবিদ হেঁটেছে বাঙালিদের বিপক্ষে। শুধু হাঁটেইনি, নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য গঠন করেছিল রাজাকার, আলবদর, আল শামসের মত বাহিনী। সেইসব রাজনীতিবিদদের বলা হয় বাংলাদেশের ইতিহাসের কলংকিত মানুষ।

সেই ১৯৭১ সালের পর বাঙালি জাতির জন্য আরেক কলংকিত অধ্যায় শুরু হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে খুন করে আওয়ামী লীগে ঘাপটি মেরে থাকা মিরজাফরের বংশধর খন্দকার মোস্তাকরা। বাংলাদেশের ইতিহাসের এই দুই অধ্যায় ব্যাখ্যা করলে পাওয়া যায় এক শ্রেণির সুবিধাবাদী রাজনীতিবীদকে। যারা নিজেদের স্বার্থের জন্য নৃশংস কাণ্ড ঘটিয়েছে। বেইমান-মুনাফিকরা শেখ মুজিবের রক্তের উপর দিয়ে হেঁটে গিয়ে মোস্তাকের সাথে হাত মিলিয়ে কলংকিত করেছেন দেশ তথা আওয়ামী লীগকে। যাদের জাতি কখনাে ক্ষমা করবে না। সেইসব নেতাদের আজ অনেকেই বেঁচে নেই। কিন্তু তার পরিবার আছে, আছে তাদের রক্তের উত্তরাধিকার। তারা আওয়ামী লীগের সাথে মিশে গিয়ে বহাল তবিয়তে দেশে বিদেশে বেশ ভালাে অবস্থানেও আছে। থাকবেই না কেন, যুগে-যুগে তারা ঠিকই মদদ পেয়েছে এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মুখােশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা রাজনীতিবীদদের।

এভাবেই দেশের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মোস্তাকের পেতাত্মা ও রাজাকারের বংশধররা। সিলেটের আওয়ামী রাজনীতি‌তেও এ‌দের পাদুর্ভাব লক্ষণীয়। তাই; সিলেট আওয়ামী রাজনী‌তি থে‌কে মোস্তাক বা‌হিনী ও রাজাকা‌রের বংশধর মুক্ত কর‌তে হলে নি‌ম্নোক্ত ধাপগু‌ণি লক্ষ করা আবশ্যক ব‌লে আ‌মি ব্য‌ক্তিগতভা‌বে ম‌নে ক‌রি। (১) আওয়ামী লীগ, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ এক এবং অ‌ভিন্ন। তাই মুক্তিযুদ্ধকালে যারা রাজাকার, আলবদর, আল শামসের মত বাহিনীতে ছিল বা বা‌হিনী সৃষ্টি করেছিল, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (২) ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যারা খন্দকার মোস্তাকের সাথে সক্ষতা গড়ে তুলেছিল বা তুলতে চেয়েছিল এবং জাসদের সাথে হাত মিলিয়েছিল, তাদেরকে ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৩) ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেশে-বিদেশে পরিশ্রম করেছেন এবং অনেকে সিলেটের রাজপথে মিছিল-মিটিং করতে গিয়ে জেল কেটেছেন।

আজ ষড়যন্ত্র ক‌রে এসব নেতা‌দের নেতৃ‌ত্বের বা‌হি‌রে রাখার চেষ্টা কারা ক‌রছে তা‌দের‌কে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৪) আশির দশকে যারা শেখ হাসিনাকে দেশ ফিরিয়ে আনার বিরোধিতা করেছিলো, তাদেরকে ও তাদের উত্তরসূরীদেরকে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৫) ১৯৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে যাদেরকে দেখা যায়নি, যারা এরশাদের ক্ষমতার রাজনীতি ভোগ করে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৬) ১৯৯১ সালের নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীকে নৌকা তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিল তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৭) ১৯৯৭ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি বিএনপির প্রহসনের নির্বাচনকে যারা সমর্থন দিয়েছিল এবং নির্বাচন প্রতিহত করার সংগ্রামে কোন ভূমিকা রা‌খে‌নি, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (৮) ১৯৯৬ সালের ১২ জুনের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রতীকে নৌকা তথা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে যারা নির্বাচন করেছিল, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে।

(৯) ২০০১ সালের পর বিএনপি-জামাতের অপশাসনের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলনে অংশ নেয়নি, বরং বিএনপির সাথে আতাত করে ক্ষমতার স্বাদ নিয়েছে এবং সম্পদ বানিয়েছে, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (১০) ২০০৪ সালের ১৭ আগস্ট সিরিজ বোমা হামলা ও ২১ আগস্ট শেখ হাসিনার উপর হামলা তথা ২৪ জন নেতা-কর্মীকে হত্যার প্রতিবাদে আয়োজিত মিছিল মিটিং হতে নিজেকে আড়াল রেখেছে যারা, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (১১) ১/১১ এর সময় সংস্কারপন্থীদের সাথে যারা হাত মিলিয়েছিল, তাদের পাশে বসে মিটিং করেছিল, ট্রা‌কের উপর উ‌ঠে মাইনাস টু ফর্মুলার পক্ষে বক্তব্য দি‌য়ে‌ছিল, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (১২) ১/১১ এর সময় ফখর উদ্দিন সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে যারা শেখ হাসিনার মুক্তি দাবি করেছিলেন এবং সে সময় জেলও কে‌টে‌ছি‌লেন, তাদেরকে অবমূল্যায়ন করার পেছ‌নের অপশ‌ক্তি‌কে চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (১৩) ২০১৪ ও ২০১৮ এর নির্বাচন সফল করার পক্ষে কাজ না করে, বিভিন্ন এলাকায় দলীয় প্রার্থীদের মনোনয়ন বঞ্চিত করার ষড়যন্ত্রে যারা লিপ্ত ছিলেন, তারা ও তাদের উত্তরসূরীদের চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। (১৪) দ‌লের নাম ভা‌ঙি‌য়ে সম্প‌দের পাহার যারা গ‌ড়ে‌ছেন, ত্যাগী নেতা-কর্মীরা যা‌দের কা‌ছে অব‌হে‌লিত, যারা নি‌জে এলাকার উন্নয়ন‌ কর‌তে ব্যর্থ, ষড়যন্ত্র আর মিথ্যাচা‌রের রাজনী‌তি যারা ক‌রেন, তা‌দের‌কেও চি‌হ্নিত কর‌তে হ‌বে। এই দুর্বলতাগু‌লি চি‌হ্নিত করার মাধ্য‌মে রাজাকার, বেইমান, মির্জাফর, দালাল, চামচা, দু‌র্নীতিবাজ ও তোষা‌মো‌দিকারী মুক্ত এবং সৎ, ত্যাগী ও‌ বিনয়ী মানু‌ষ যুক্ত নি‌র্ভেজাল আওয়ামী লীগ প্র‌তিষ্ঠিত হোক সি‌লে‌টে এই প্রত্যাশা ক‌রি। ‌

 

লেখক : প্রকাশক, সাপ্তাহিক কুশিয়ারার কূল