বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ আর শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ৯:৫০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৯, ২০২০ 891 views
শেয়ার করুন

বঙ্গবন্ধুর সেই ঐতিহাসিক ডাকে সাড়া দিয়ে বাঙালী জাতি ৩০ লক্ষ শহীদ আর ২ লক্ষ মা বোনের পবিত্র ইজ্জতের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্ভর পাকিস্থানী হায়েনাদের নিকট থেকে বিজয় ছিনিয়ে এনেছিল এবং পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্টিত হয়েছিলো বাংলাদেশ ৷

কিন্তু কিভাবে বাংলাদেশ নাম হয় এই রাষ্ট্রের এবং কে রাখেন এই নাম ? বাংলাদেশ নামটা আসলো কিভাবে ? ভাষার নামে দেশের নাম।

এত দীর্ঘ বিবর্তন দিয়ে বাংলাদেশের নামকরণ হয়নি ।  সালটা ১৯৬৯ সালের ৫ই ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দির মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এক জনসভাতে জেল থেকে মুক্তি পাওয়া বঙ্গবন্ধু ভাষণের এক পর্যায়ে বলে উঠেন-“একটা সময় ছিল যখন এই মাটি আর মানচিত্র থেকে “বাংলা” শব্দটি মুছে ফেলার সব ধরণের প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল।”বাংলা” শব্দটির অস্তিত্ব শুধু বঙ্গোপসাগর ছাড়া আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যেত না।”এর পরেই তিনি ঘোষণা করেন, আমাদের এই ভূখণ্ডের নাম হবে “বাংলাদেশ’। সংক্ষেপে, অতি সংক্ষেপে একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায়। হাজার বছরের ইতিহাস মাত্র কয়েক বাক্যে শেষ হয়। এই নেতা আগা থেকে গোঁড়া পর্যন্ত একটা দেশ এর জন্ম প্রক্রিয়া ঠিক করে দিয়েছিলেন। একটা দেশের নাম ঠিক হয়ে যায় কয়েক মুহূর্তে, হাজার বছরের প্রক্রিয়া,পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষ হয় এক মুহূর্তে ।

১৯৭১ সালে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করি স্বাধীনতা ৷ সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে , পৃথিবীর কোনো দেশ তার স্বাধীনতা অর্জনের জন্যে এতো ত্যাগ ও রক্ত ক্ষয় করতে হয়নি যা আমরা করেছি ৷
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অষ্টম যদিও আয়তনের হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্বে ৯৪তম; ফলে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর নবম। মাত্র ৫৫হাজার ৫ শত ৯৮ বর্গমাইলের এই ক্ষুদ্রায়তন দেশ আমরা অর্জন করি ৷

যদিও আমরা স্বাধীনতা অর্জন করি তদুপরি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত ও মায়ানমারের সাথে আমাদের স্থল ও জলসীমা নিয়ে বিরোধ অমীমাংসিত থেকে যায় ৷ ১৯৭৪ সালে জাতীর জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভারতের প্রধান মন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্দী সীমান্ত সমস্যা সমাধানে একটি চুক্তি করেন যা ইতিহাসে “মুজিব ইন্দিরা ” চুক্তি বলে খ্যাত ৷

কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট দেশী বিদেশী চক্রন্তে খুনি মুশতাক জিয়া ডালিম চক্র বঙ্গবন্ধু কে স্বপরিবারে হত্যা করলে এ চুক্তি আর বাস্তবায়িত হয়নি তাই সীমান্ত সমস্যা ও আর সমাধান হয়নি ৷

তারপর কখনো সামরিক আবার কখনো বেসামরিক লেপাসে চলতে থাকে সামরিক শাসন এমনি সময়ে নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে মৃত্যুপথে যাত্রা করেন বঙ্গবন্ধুর জীবিত দুই কন্যার একজন শেখ হাসিনা ৷ তাঁর লক্ষ একটাই মা মাটি ও মানুষকে রাহু গ্রাস থেকে মুক্ত করা এবং সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণ করা ৷ লক্ষ পানে অবিচল ছুটে চলা শেখ হাসিনা গ্রেনেড , গুলী , বোমা সবই পেরিয়ে অবশেষে অমীমাংসিত সীমান্ত সমস্যা সমাধান করে বাংলাদেশ কে একটি পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্র, সীমান্ত সমস্যা মুক্ত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্টিত করেন ৷

প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখা সর্ব ক্ষেত্রে শান্তি ও সমৃদ্ধির জন্যে প্রয়োজন তাই জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ সরকার দ্বি পাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সীমান্ত সমস্যা সমাধান করেন ৷
পরবর্তীতে জল সীমার ব্যাপারে দ্বি পাক্ষিক সমযোতা না হওয়ায় বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা করে মায়ানমার ও ভারতের সাথে জলসীমার ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্টা করে ৷

আর এতে ভারত থেকে পাওয়া ২৮,৪৬৭ বর্গ কিমি এবং মায়ানমার এর কাছ থেকে পাওয়া ৭০,০০০ বর্গ কিমি. সমুদ্র সীমার কারণে বাংলদেশের আয়তন এখন ২,৪৬,০৩৭ বর্গ কিমি. এ । ছিটমহল সহ বঙ্গোপসাগর থেকে ভেসে উঠা বিস্তর এলাকা যোগ করলে বাংলাদেশের বর্তমান আয়তন আরো বর্ধিত হবে ৷ স্বাধীনতা অর্জনের পর আমরা যে আয়তনের বাংলাদেশ পেয়েছিলাম বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর যে ২৮ বছর অযৌক্তিক ভাবে সামরিক ও বেসামরিক লেবাসে সামরিক শাসনের সময় ঐ সমান আয়তন ই ছিলো এক কি:মি: ও বাড়েনি কিন্তু বাংলার মানুষের সুখ দুঃখের সারথী দেশরত্ন শেখ হাসিনা আমাদের সকল জল স্থল সীমানা সমস্যা সমাধান করে আজ বাংলাদেশ কে তার সৃষ্টির আয়তনের চেয়ে অনেক গুন বৃদ্ধি করে পূর্ণাঙ্গ রাষ্ট্রে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন ৷

বাংলাদেশ একটি ঘনবসতি পূর্ণ দেশ এ কথা সারা বিশ্বে স্বীকৃত, আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা বেশী তাই এখানে খাদ্য সংকট থাকা স্বাভাবিক তাই স্বাধীনতা অর্জনের পর তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরী কেসিঞ্জার বলেছিলেন “বাংলাদেশ একটি তলাবিহীন ঝুড়ি ৷” কিন্তু আজ দেশ রত্ন শেখ হাসিনার সঠিক নেতৃত্বে এই স্বল্প আয়তনের মধ্যে ও কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে আমরা শুধুই খাদ্যে স্বয়ং সম্পূর্ণতা ই অর্জন করিনি বিদেশে ও খাদ্য রফতানী করে বিস্ময় সৃষ্টি করেছি ৷ আর আজ তাই সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী জন কেরী বলেছেন “বাংলাদেশ উন্নয়নের প্রত্যেকটি সূচকে অভাবনীয় উন্নয়ন করেছে ৷ ”
খাদ্য , বস্ত্র ,শিক্ষা ,চিকিৎসা ও বাসস্থান এই মৌলিক বিষয় গুলোর প্রত্যেকটিতে বাংলাদেশ আজ ঈর্ষণীয় উন্নয়ন করেছে যা সারা বিশ্ববাসীর নিকট স্বীকৃত ও সমাদৃত হচ্ছে ৷ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বস্ত্র রফতানী কারক দেশ হিসেবে আজ বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ৷

সুশাসনের ফলে ইতিমধ্যে আমরা নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে স্বীকৃত, দেশ রত্ন শেখ হাসিনা মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে প্রতিষ্টিত করার লক্ষে দিন রাত কাজ করে লক্ষ পানে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে তাই আসুন আমার সকল ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে সকলেই শেখ হাসিনার এই যাত্রা পথের সহযাত্রী হই গড়ে তুলি সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলা ৷