আমিরাতের সিআইপি শেখ ফরিদ: প্রবাসির পরম বন্ধু

প্রকাশিত: ৯:৪৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২০ 868 views
শেয়ার করুন

 

করোনাকালে প্রবাসীদের যারা দেশে আটকা পড়ে আছেন তাদের হাতে পাতে যা ছিল এই চার পাঁচ মাসে তাও নিঃশেষ হয়ে গেছে। রিটার্ন টিকেট করে তারা দেশে ছুটিতে গেলেও সে টিকেট কাজে আসছে না। সুদে টাকা নিয়ে স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে প্রবাসী ৩৫০০ টাকায় করোনা টেস্ট করছেন। বিমানের টিকেট কিনছেন কিন্তু তার করোনা টেস্টের রিপোর্ট পেতে পেতে বিমান এয়ারপোর্ট ছেড়ে চলে গেছে। করোনা সংকটে চাকরি হারিয়ে অর্থ ও খাদ্য সংকটে থাকা প্রবাসীদের পাশে দাঁড়ানো, ইনভেস্টর (হায়রে আমার ইনভেস্টর রে…!) ভিসায় প্রান্তিক প্রবাসী এসেছেন এ পরবাসে।

ভিসা বন্ধের আট বছরে মরিয়া হয়ে নিজের অবস্থানকে বৈধ রাখার জন্য ভিজিট ভিসায় এসে পঁচিশ-ত্রিশ হাজার দিরহাম খরচ করে ইনভেস্টর ভিসা কিনে প্রবাসী মেসনের কাজ করছেন। ঠিকা মজুরের কাজ করছেন কিংবা ব্যালেন্স বিক্রি করছেন। সে মানুষটি যখন নানা পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে, কর্মহীনতা সহ বিভিন্ন সংকটে আপতিত হয়ে লাশ হলেন তখন কেবল ইনভেস্টর হওয়ার অপরাধে বিমান বিনা খরচে তার লাশ পরিবহন করছে না তখন আপনি আরো কিছু দানশীল প্রবাসীর মত যাকে সবসময় হাতের কাছে পান,তিনি আর কেউ নন সিআইপি শেখ ফরিদ। গ্রীন সিটি আল আইনের গ্রীন মানুষ তিনি।

  • আবুধাবিতে তিনজন এবং আর আল আইনে একজন সহ মোট চারজন ইনভেস্টর এর লাশ দেশে পাঠানোর খরচ এর অভাবে যখন পড়ে থাকে ভিনদেশের মর্গে তেমনি একটি সময় তিনি দূতাবাসে এসে ঘটনাটি জানতে পারেন এবং সাথে সাথেই নিজে একটা লাশ পাঠানোর খরচ বহন করেন এবং তার সফরসঙ্গী হয়ে আল আইন থেকে আসা প্রবাসী সংগঠক মোহাম্মদ আইয়ুব আর আলতাফ হোসেন সহ আরো বন্ধুদের কয়েকজন হতে তাৎক্ষণিক অনুদান সংগ্রহ করে বাকি আরেকটি লাশ সহ দুটি লাশ দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। শেখ ফরিদ বললেন, আমি বিদেশের মাটিতে লাশ হয়ে শুয়ে থাকা প্রবাসী জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে ভেবেছি এই পরিণতি তো আমারও হতে পারতো…! দেশের আত্মীয়-স্বজন হয়তো তখন একদিকে মৃতের জায়গা সম্পত্তি ভাগ বন্টন নিয়ে ব্যস্ত আর অন্যদিকে লাশটা পড়ে আছে ভিনদেশী মর্গে, আমি নিজেকে স্থির রাখতে পারিনি।

একজন প্রবাসীর কৃত্রিম পা লাগানোর জন্য অর্ধলক্ষাধিক টাকা প্রয়োজন আবুধাবিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের মাননীয় শ্রম কাউন্সিলর আব্দুল আলিম মিয়া যোগাযোগ করলেন তার সাথে পাঁচ হাজার দিরহাম এর অনুদান দিলেন তিনি একাই, আরো কিছু করলেন সংগ্রহ এভাবে আরো ক’জন প্রবাসীর সহযোগিতায় তার জন্য কৃত্রিম পায়ের ব্যবস্থা হল অথচ প্রবাসী তখনো জানেন না এরই মধ্যে তার চিকিৎসার সম্পূর্ণ আয়োজন সম্পন্ন হয়ে গেছে দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে। তার চিকিৎসা হলো তিনি ফিরে পেলেন তার কাজ।

মার্চের গোড়ার দিকে চট্টগ্রামে করোনা চিকিৎসার জন্য ডাক্তাররা পিপিই সংকটে ভুগছিলেন তখন শেখ ফরিদ এগিয়ে এলেন পিপিই, সার্জিক্যাল মাস্ক সহ বিভিন্ন মেডিকেল ইকুইপমেন্ট পাঠালেন পঞ্চাশ হাজার টাকার ব্যক্তিগত অনুদানে।

তার থানা রাউজানের এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে বিতরণের জন্য ১০ হাজার সার্জিক্যাল মাস্ক এর ব্যবস্থা করলেন এরপর।
চট্টগ্রাম আইসোলেশন সেন্টার পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয়ে অক্সিজেন সিলিন্ডার গেল প্রায় একই সময়ে তাঁর অনুদানে।

রাউজন আইসোলেশন সেন্টারের জন্য দেড় লক্ষ টাকা ও ১০ হাজার মাস্ক এর ব্যবস্থা করলেন। তার ব্যক্তিগত অনুদানে অনুপ্রাণিত হয়ে দুবাইয়ের রাশেদুর রহমান চৌধুরী এ জন্য এক লক্ষ টাকা এবং পরে জুলাই মাসে আরো দুই লক্ষ টাকা রাউজান আইসোলেশন সেন্টার এর জন্য অনুদান দিলেন।

লকডাউন এর প্রথম ধাক্কায় চট্টগ্রামে তাঁর নিজ গ্রাম রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নে তিনশ মানুষ জন্য এক সপ্তাহর ডাল ভাতের ব্যবস্থা করলেন, এরপর রমজানের সময় পাঁচশ মানুষের মধ্যে এক সপ্তাহের খাবার বিতরণ করলেন।

আবুধাবি প্রবাসী সন্দ্বীপ এর স্টেইনড গ্লাস আর্টিস্ট সদ্যপ্রয়াত নাজিম মাহমুদ এর অসহায় পরিবারের জন্য পাঁচ হাজার দিরহাম এর সমপরিমাণ অর্থানুদান পাঠাতে যাচ্ছেন তিনি।দুবাই ভিত্তিক একটি সামাজিক সংগঠন এর মাধ্যমে তিন থেকে ৪শ প্রবাসীর জন্য রেশনের ব্যবস্থা করলেন শেখ ফরিদ।

স্বদেশে ও প্রবাসে আওয়ামী ঘরানার প্রতিটি আয়োজনে তার নিয়মিত অনুদান পৌঁছে যায়। স্কুল কলেজ মসজিদ মাদ্রাসা ও এতিমখানায় নিয়মিত অনুদান দিয়ে থাকেন বঙ্গবন্ধু পরিষদ আল আইন জেলার মুখ্য পৃষ্ঠপোষক শেখ ফরিদ। আবুধাবিস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের আল আইন ভিত্তিক প্রতিটি কর্মকাণ্ডে নিয়মিত অনুদান ও অংশগ্রহণ থাকে।

শেখ ফরিদ মনে করেন বঙ্গবন্ধু কন্যার ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে স্বদেশে ও প্রবাসে প্রতিটি বাংলাদেশের নাগরিককে দেশের জন্য এভাবে কিছু না কিছু অবদান রেখে যেতে হবে।