কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের পদক্ষেপে, মাদকে পাল্টে গেছে দৌলতপুর উপজেলার চিত্র

প্রকাশিত: ২:৫০ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৪, ২০২০ 380 views
শেয়ার করুন

 

কুষ্টিয়া জেলা পুলিশের সময়োপযোগী পদক্ষেপে, মাদকের অভয়ারণ্য হিসেবে খ্যাত কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার চিত্র বদলে গেছে। দৌলতপুর থানা পুলিশের সময়োপযোগী পদক্ষেপ আজ অনেক মাদকমুক্ত ভারত সীমান্ত ঘেঁষা এই উপজেলা। ফলে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে শান্তিতে বসবাস করছেন এই জনপদের মানুষ।

ভারতের সাথে প্রায় ৪০ কিলোমিটারের বেশি সীমান্ত থাকায় দৌলতপুর উপজেলার অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছিল। সেই চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করে বর্তমান পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে ও দিক নির্দেশনা দৌলতপুর থানা পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে সাঁড়াসি অভিযান চালায়। পাশাপাশি সকল ধরনের সামাজিক অপতৎপরতা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ প্রবণ এলাকায় সাধারণ মানুষের সাথে মতবিনিময় করে তাদের সচেতন করার মত বিভিন্ন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। ইতিমধ্যে এর সুফল পাচ্ছেন উপজেলাবাসী। এই পথপাড়ি দিতে পুলিশের সামনে অনেক বাধা এসেছে। সে সকল বাধা অতিক্রম করে সরকারি দায়িত্ব পালনে দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছে পুলিশ সদস্যরা। অনেকে মনে করেন অপরাধের বিরুদ্ধে পুলিশের জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণের ফলে এই উপজেলায় অপরাধ ও অপরাধপ্রবণ লোকের সংখ্যা কমতে শুরু করেছে। গত তিন মাসের দৌলতপুর থানা পুলিশের কর্মকান্ড বিশ্লেষণ করলে যার বাস্তব চিত্র লক্ষ্য করা যাবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এপ্রিল থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত দৌলতপুর থানার বর্তমান ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ১১৩৪ বোতল ভারতীয় ফেনসিডিল, ৭৬৭৪ পিস ইয়াবা, ৩৮ কেজি গাঁজা, ৩৮ বোতল ভারতীয় মদ ও ৮ গ্রাম হেরোইন উদ্ধার করেছে। এসব মাদক উদ্ধারের পাশাপাশি দুটি পিস্তল ও ৭ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে ৭২টি ও অস্ত্র আইনে ৫টি মামলা হয়েছে। এছাড়াও ৩ মাসে দৌলতপুর থানা পুলিশ ১১৪টি মামলায় ১৪৬ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করেছে। এই কিছুদিন আগেও এমন কোন দিন ছিল না যেদিন দৌলতপুর থানায় বিভিন্ন অপরাধে একাধিক মামলা দায়ের হয়নি। আজ সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। দৌলতপুর থানা পুলিশের চৌকস কর্মকর্তাদের দূরদৃষ্টি সম্পন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের কারণে সাধারণ মানুষের কাছেও পুলিশ আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। উপজেলাটি বেশি অপরাধপ্রবণ এলাকা হওয়ায় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিদেরও আলাদা নজর ছিল এই উপজেলার প্রতি । তবে অপরাধ শতভাগ নির্মূল হয়েছে সেটা না, অপরাধ এবং অপরাধীদের ধরতে পারাটা পুলিশের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ ছিল, পুলিশ সেই জায়গা থেকে সততার সাথে পেশাদারিত্বের পরিচয় রেখেছে বলে অনেকে মন্তব্য করছেন। যা অতীতে লক্ষ করা যায়নি। কিছুদিন আগেও যারা বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত ছিলেন, তারা এখন অনেকটাই কোণঠাসা। কেউ পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেউ পুলিশের হাতে আটক হয়ে জেলখানায় অবস্থান করছেন।

দৌলতপুরের সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় এক কলেজ শিক্ষকের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, বর্তমানে পুলিশ সাধারণ মানুষের একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এরপরেও কিছু লোক আছে যারা থানা পুলিশকে ব্যবহার করে পেট চালাতো তাদের গাত্রদাহ আমরা লক্ষ করছি ইদানিং। এদের বিরুদ্ধেও পুলিশের অবস্থান আরো শক্ত করতে হবে। তারা যেন থানা পুলিশকে দেখিয়ে বা ভাঙ্গিয়ে কোন ধরনের স্বার্থ উদ্ধার না করতে পারে। ওই শিক্ষক আরও বলেন, ব্যক্তিগত সুবিধা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে স্থানীয় একটি কলেজের অধ্যক্ষ ও স্থানীয় এক নেতার তোড়জোড় দেখছি কয়েকদিন ধরে। যারা দুজনই বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। তারা নাকি পুলিশকে ম্যানেজ করে স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটাচ্ছে। অথচ এই দুই জনের নামে ডজনখানেক অভিযোগ দৌলতপুরের আকাশে বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। তিনি বলেন, কোন পরিচয় বহন করে কেউ যেন ছাড় না পায় সেই বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে দৌলতপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফুর রহমান দাবি করেন, দৌলতপুর থানা পুলিশকে নিয়ে যারা সংবাদ প্রচার করেছে তারা সম্পন্ন ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধারে মিথ্যা, ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত তথ্য দিয়েছে। তিনি বলেন, ‘ওই সংবাদটি আমার দৃষ্টিগোচর হয়েছে আমি সম্পূর্ণ সংবাদটি কয়েকবার পড়েছি। পুলিশের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, তার একটারও সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ নেই। আমি দায় নিয়ে বলছি, দৌলতপুর থানা পুলিশ আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায়। বিশেষ করে মাদক উদ্ধার ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। কুষ্টিয়ার বর্তমান পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত স্যারের নেতৃত্বে এবং তার দিক নির্দেশনায় দৌলতপুর থানা পুলিশ মাদকসহ সকল আইন বিরোধী কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আমরা যেকোন মূল্যে এই নীতি বাস্তবায়নে আপ্রাণ চেষ্টা করব। পুলিশ কখনও কারো ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে না। আমরা দেশসেবার ব্রত নিয়ে এই প্রেসার এসেছি কারো ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য নয়। সুতরাং মিথ্যাচার করে আমাদেরকে দমিয়ে রাখার চেষ্টা যারা করে কোন লাভ হবে না।’

কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এস এম তানভীর আরাফাত বলেন, ‘ দেশসেবার ব্রত নিয়ে এই পেশায় এসেছি। কুষ্টিয়া জেলা পুলিশ অন্যায় আর অপরাধের বিরুদ্ধে। অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন তার লাগাম টেনে ধরতে আমরা দুইবার ভাববো না। আপনারা দেখেছেন দৌলতপুর উপজেলার অপরাধচিত্র আগের তুলনায় অনেক কমে গেছে। মাদক ব্যবসা, সামাজিক অস্থিরতা, সামাজিক দ্বন্দ্ব বন্ধে পুলিশ সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে। অপরাধ রোধে পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন মতবিনিময় সভা, প্রচারনা চলমান রয়েছে। অপরাধ দমনে আমরা সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি আমি মনে করি এটার মাধ্যমে সমাজ থেকে সকল ধরনের অপরাধ দমনে সঠিক সিধান্ত নিতে পারবো। পাশাপাশি আপনারা গণমাধ্যমকর্মীরা সঠিক তথ্য উপাত্ত দিলে সমাজ থেকে যে কোন প্রকার অপরাধ দমন পুলিশের জন্য আরো সহজ হয়। পুলিশ জনগনের বন্ধু হয়ে তাদের পাশে থেকে কাজ করছে, যে কোন প্রকার অপরাধ দমনে জেলা পুলিশ কুষ্টিয়া কঠোর ভূমিকা পালন করবে।

তবে অনেকে বলছেন দৌলতপুরে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। যত রকমের অপকর্ম, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি এরাই করছে। কেউ তাদের গন্ডির বাইরে গেলেই তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে এবং ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এই চক্রের লাগাম না টেনে ধরলে এরা দৌলতপুরকে তছনছ করে ফেলবে। তাই সাধারণ মানুষের দাবী, পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থাকে এখনই মাঠে নেমে এদের আমলনামা তৈরি করে এদের সকল কর্মকান্ড প্রকাশ্যে আনতে হবে।