শূন্য হাতে আমিরাত প্রবাসে এসে আজ একজন সফল উদ্যোক্তা মাসুম চৌধুরী
জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি জাহাঙ্গীর কবীর বাপপি
সাংবাদিক, আবুধাবী

মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নাসিরনগর উপজেলার গোকর্ণ ইউনিয়নের জেঠা গ্রামের বাসিন্দা,আবুধাবি প্রবাসী একজন সফল এসএমই উদ্যোক্তা।
ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় শূন্য হাতে ২০১২ সালের এই অগাস্টেই পাড়ি জমিয়েছিলেন তিনি আমিরাতে। একমাত্র সম্বল ছিল ঢাকার বঙ্গবন্ধু এভেন্যুতে একজন টেইলর মাস্টার হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা। প্রবাসে আসার কিছু দিনের মধ্যেই আমিরাতে বাংলাদেশি সাধারণ কর্মীদের ওয়ার্ক ভিসা বন্ধ হয়ে যায়। এ সময় কাজ নেন আবুধাবি ইলেক্ট্রা স্ট্রীটের ফ্যালকন টেইলার্স এ। ২০১৮ সালে ফ্যালকন এ কাজের পাট চুকিয়ে নিজস্ব ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু ভিসা সংকটের কারণে দেশ থেকে কর্মী আনতে না পারায় এবং পর্যাপ্ত পুঁজির অভাবে ব্যবসা চালু করতে পারলেন না। এদিকে ভিসা বন্ধ থাকায় নিরুপায় হয়ে আরবীর ঘরের গৃহকর্মীর ভিসা নিয়ে সিটির নাজদা স্ট্রিটে পরিচিত এক বন্ধুর সহযোগিতায় একটি বিল্ডিং এর লিফট রুমে বিকট শব্দ দূষণের মধ্যে ক্লান্তিহীন বসে প্রাইভেট ভাবে সেলাই কর্ম চালিয়ে যেতে লাগলেন। ৮/৯ মাস এভাবেই কাজ করার পর একসময় ফ্যালকন টেইলার্স এর মালিক তা জানতে পেরে আরব গৃহকর্মীর ভিসা নিয়ে অবৈধভাবে বাইরে কাজ করার জন্য পুলিশে অভিযোগ করবেন বলে হুমকি দেন। কারণ মাসুমের অনুপস্থিতিতে তার ব্যবসার ক্ষতি হচ্ছিল।
এতে অনেকটা নিরাশ হয়ে মাসুম দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তার প্রাক্তন সহকর্মী ও বন্ধু মোঃ মাহবুব ততদিনে ঢাকার সিদ্দিক বাজারে মারুফ গার্মেন্টস নামে একটি গার্মেন্টস ব্যবসার মালিক হয়ে গেছেন। বন্ধুকে ফোন করে ঢাকায় তার জন্য একটা ভালো কাজ দেখার অনুরোধ জানান তিনি। মাহবুব বললেন,দেশে ফেরার কোন দরকার নাই,আবুধাবিতেই ত্থাকার কোন একটা উপায় বের কর। তিনি জানালেন ইনভেস্টর হয়ে ব্যবসা করলে হয়তো থাকা যাবে। কিন্তু সেজন্য তো অনেক পুঁজির দরকার,সে সামর্থ্য তার নাই। বন্ধুটি তাকে প্রয়োজনীয় পুঁজি দিলেন। এখানেও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে চাইল তার পূর্বের কর্মস্থলের মালিক। শেষমেষ সব বাঁধা অতিক্রম করে আবুধাবি ইলেক্ট্রা স্ট্রীটে এক ভারতীয়র কাছ থেকে তিনি কিনলেন সি রক টেইলর্স।
বন্ধুর পুঁজি আর তার মেধা ও শ্রম এবং সাথে যুক্ত হল ভাগ্যদেব। করোনার ডামাডোলে চারিদিকে মন্দা চললেও এ সময়ে তার ব্যবসা ফুলে ফেঁপে ওঠে। তিনি বিপুল অংকের সরকারি কাজ পান। তাতে মাত্র ২ বছরের মাথায় তিনি তার ব্যবসার জন্য নেয়া সমুদয় কর্জ পরিশোধ করতে সক্ষম হন। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২০২১ সালে আবুধাবির ওমেইর বিন ইউসুফ মসজিদের পাশে সী রক টেইলর্স এন্ড ক্লদস স্টোর এর দ্বিতীয় শাখা এবং ২০২২ সালে ডাউন ডাউন হোটেল সংলগ্ন এলাকায় তৃতীয় শাখা প্রতিষ্ঠা করলেন। করে কিন্তু থেমে থাকলেন না। একের পর এক প্রতিষ্ঠা করলেন গোল্ডেন টাওয়ার টেক্সটাইল, সুজাই বাকালা, দুবাইয়ে সী রক বিল্ডিং মেটারিয়ালস সার্ভিস, হিল রক বিল্ডিং মেটারিয়ালস এন্ড বিল্ডিং কনস্ট্রাকশন কোম্পানি। বর্তমানে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলোয় অর্ধ শতাধিক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান হয়েছে।
সফল প্রবাসী উদ্যোক্তা হয়েও মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী এখনও নিজে টেইলার মাস্টারের কাজ করেন পরিশ্রম ও দক্ষতার সাথে।
তাঁর কাছে জানতে চাইলাম ভবিষ্যৎ স্বপ্ন কি? তিনি কাজ থামিয়ে বললেন,”আমার এতগুলা প্রতিষ্ঠান হবে এই স্বপ্ন কহনো আছিল না। স্বপ্ন আছিল ছোটখাটো একটা দোকান লমু যেন নিজে বইয়া বইয়া কাম করতে পারি। এখন মনে হয় আমি পয়সা কামানোর লাইগা খালি পরদেশে আইছি তা ঠিক না। চলার পথে আমারে যেমন অনেকে সাহায্য করছে আমারও ইচ্ছা কিছু মানুষের উপকারে আসা। তাছাড়া যত বেশি মানুষের কর্মসংস্থান আমারে দিয়া হয় অহন, তত বেশি আনন্দ পাই আমি।”