
কবি কালাম আজাদ: সিলেটের সাহিত্যভুবনের অভিভাবক
বাংলা সাহিত্যের শক্তিমান কবি, সিলেটের কবিমহলের অভিভাবক অধ্যক্ষ কবি কালাম আজাদ স্যারের সামনে বিশ্বসাহিত্যের শ্রেষ্ঠতম কবিতা ‘বিদ্রোহী’ আবৃত্তি করতে পারা আমার জীবনের অন্যতম কীর্তি।
কবির সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব ও সফলতা হলো, তিনি যা বিশ্বাস করেন, কাব্যে তা প্রকাশ পেয়েছে। কাব্য আঙ্গিকের স্বাতন্ত্র্য ও বক্তব্যের তীব্রতা তাঁর লেখায় নিজস্বতা ও মৌলিকত্ব এনে দিয়েছে। ‘প্রথম প্রেম’ কবিতায় ফেঞ্চুগঞ্জের এক ষোড়শী স্যারকে জিজ্ঞেস করেছিলো, “বুড়ো তোমার প্রেমের কথা বলো?” তিনি উত্তর দিয়েছিলেন-“আজ মন বলছে, ফেঞ্চুগঞ্জের ষোড়শীকে সত্যিটা বলি… যৌবনের উষালগ্নে একটা ভালোবাসা, ভিনদেশী ভালোবাসা জন্মেছিল ঠিক। কপোট্রনিক প্রেম, শুনে শুনে প্রেম, দিবসও রাত্রির প্রেম খুব জমেছিল।” অর্থাৎ তাঁর প্রথম প্রেম ছিলো ক্রিকেট। এক ভিন্ন আঙ্গিকে, বৈচিত্র্যময়ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সেই ভালোবাসা।
কবি আল মাহমুদ আমাদের ছেড়ে গেলেও রেখে গেছেন একজন কালাম আজাদকে। তিনি আল মাহমুদের মতো ধর্মের কথা বলেন, রাসুলের শানে কবিতা লিখেন, কিন্তু রাসুলের শানে বেয়াদবি বরদাশত করতে পারেন না। তাঁর ‘শেষ নিবেদন’ কবিতায় পাওয়া যায়-“হে জালিম, আমি দুর্বল, তুমি আমাকে আঘাত করো, হত্যা করো-কিন্তু তাঁর দিকে তোমার ইতর আঙুল তুলোনা। দেড়শত কোটি মানুষ মুহাম্মদের সূর্য সৈনিক। এদেরকে জাগিও না, খুঁচিও না, ক্ষেপিও না।”
একজন নজরুলপ্রেমী হয়ে নজরুল পরিবারের সাথে নিবিড় সম্পর্ক রাখা কবির জন্য স্বাভাবিক। গুরু নজরুলের মতো তিনিও সারাজীবন সাম্যের কথা বলেছেন ভিন্ন আঙ্গিকে, প্রতিবাদে আন্দোলিত হয়েছেন বারবার। ‘চূর্ণন কথন-০১’ এ তিনি বলেন-“নজরুল প্র্যাক্টিসিং মুসলিম ছিলেন না। হিন্দু মহিলা বিয়ে করেছেন.. অথচ তার ইসলামি সংগীত বাদ দিলে বাঙ্গালী মুসলমান একটি জাতিসত্ত্বা হিসেবে নিজেকে চিনতেই পারতো না।”
সিলেটের কবি সিলেটের ঐতিহ্যকে পরিচিত করতে কবিতা কিংবা চিঠির মাধ্যমে কাজ করেছেন। তাইতো বাংলার দোয়েল কবি শামসুর রাহমানকে লিখেছিলেন-“হাকালুকি হাওরপারের বোবা মানুষের বুকের কথা ও ব্যথায় ভরা একটি শাশ্বত কবিতা।” কবিসভার আহ্বান জানাতে তিনি উল্লেখ করেছেন-“এসো তবে, চাঁদ, সূর্য, তারা হয়ে গ্রাম্য আসরে… কবিতা সাক্ষী রেখে মিটিয়ে নেবো আমাদের সকল বিবাদ।” এই কাঙ্ক্ষিত আসরে সভাপতির আসনে বসাবেন গণমানুষের কবি দিলওয়ারকে, আর আমন্ত্রণ করেছেন হেলাল হাফিজ, নির্মলেন্দু গুণ, সুফিয়া কামাল, শামসুর রাহমান, আল মাহমুদসহ প্রখ্যাত কবিদের।
কালাম আজাদের রয়েছে সুস্পষ্ট জীবনদর্শন। তাঁর কলম কেবল আনন্দের গীত গায় না, একই সাথে গায় জাগরণী সঙ্গীত। তিনি মানুষের ভেতরের ঘুমন্ত মানবতাকে জাগিয়ে তোলেন। শিক্ষক হিসেবে তিনি যেমন সফল, তেমনি সুবক্তাও বটে।
কবি কালাম আজাদ চিরকালীন ও শাশ্বতকালীন স্রষ্টা। তাঁর সাহিত্য-শিল্প ভাস্বরিত হয়েছে বৈশ্বিক অঙ্গনে। তিনি মানুষের কবি, মানবতার কবি। প্রত্যাশা রাখি, তিনি মহাকালে ছুটে বেড়াবেন তাঁর সৃষ্টির গতিময়তায় এবং মানবিক গুণে রবেন মানবের সুন্দরের প্রতীক হয়ে। আল্লাহ তাঁকে দীর্ঘায়ু দান করুন।
তথ্যসূত্রঃ নয়াদিগন্ত ,কবি কালাম আজাদ ফাউন্ডেশন, বয়েসী প্রপঞ্চ, মৃ্ত্তিকার ছাইভস্ম, সম্পাদক সমীপে।
✍️ মোঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
কলামিস্ট ও সমাজকর্মী