ঘরে বসে মানুষের পাশে আসমা

নিউজ ডেস্ক নিউজ ডেস্ক

বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ২:৫১ অপরাহ্ণ, মে ৩১, ২০২০ 333 views
শেয়ার করুন
  • মাহফুজ রহমান

 

পাখির মতো মন কাজী আসমা আজমেরীর। এক জায়গায় একটানা বেশিক্ষণ বসে থাকা তাঁর ধাতে নেই। ২০০৮ সাল থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত দুনিয়ার ১১৫টি দেশ ঘুরেছেন। অথচ আড়াই মাসের মতো হয়ে গেল আসমা বসে আছেন খুলনা শহরের রায়পাড়ার পৈতৃক বাড়িতে। তবে আসমা ঠিক বসেও নেই; সঙ্গরোধ মেনে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। রোজ চাল-ডাল-তেল-নুন তুলে দিচ্ছেন লকডাউনে বিপদগ্রস্ত এলাকাবাসীর হাতে। এর শুরু করেছিলেন বৈশাখের পয়লা দিন থেকে।

ফোনে এ নিয়ে কথা হচ্ছিল আসমার সঙ্গে। ছেলেবেলার কথা স্মরণ করে বলছিলেন, ‘মা তো আগে বলতেন, বৈশাখের প্রথম দিনে যা করবে, তা সারা বছরই ঘটবে। তাই পয়লা বৈশাখে ভালো কাজ কোরো।’ আসমা এবার মায়ের কথা রেখেছেন, ‘পয়লা বৈশাখে আমার এলাকার ৩২৩টি পরিবারের মানুষের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দিই। তাতে মোট ১ হাজার ৩৮৬ জনের খাবারের ব্যবস্থা হয়েছিল।’

আসমার দেওয়া উপহারের প্যাকেটে ছিল চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, সাবান, তেল ও আটা। এখনো এগুলোই দিচ্ছেন। তবে স্বাভাবিকভাবেই সংখ্যাটি কমে এসেছে। কারণ, এক মাসের বেশি সময় ধরে রোজ খাদ্যপণ্য দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়াতে হলে যে রাজার ভান্ডারও খালি হয়ে যাবে। এর সমাধান বের করেছেন আসমা। তাঁর ভাষায়, ‘প্রথম দিনের পর থেকে আমরা আরও সাংগঠনিকভাবে কাজ করছি। প্রথমে ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিতদের কাছ থেকে অসহায় মানুষের নাম-ঠিকানা নিই। তা ছাড়া পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও তো অনেকে অসহায়। মোটকথা সত্যিকার অর্থে অসহায় মানুষদের খুঁজে বের করে খাবার বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সংখ্যাটি কম হলেও এলাকার সব অসহায় মানুষ যেন কিছু হলেও পায়, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি।’

  • এ কাজে আসমাকে শ্রম দিয়ে সহযোগিতা করছে একটি কিশোর-তরুণদল। অধিকাংশই আসমাদের বাড়ির বাসিন্দা। তাঁদের নামগুলোও উল্লেখ করা উচিত—সুমন, হৃতিক, উপল, সজীব, জিসান, সুখিমণি ও রফিকুল। এদের বেশির ভাগই নাকি এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ফলের অপেক্ষায় ছিল। তবে আসমা আর্থিকভাবে সহায়তা নিয়েছেন সামান্যই। চাননি কারও কাছে, তবে কেউ যেচে পাশে দাঁড়ালে ‘না’-ও করেননি। আসমা বলছিলেন, ‘আমি আমার জমানো টাকা থেকেই কাজটি করছি। জমানো টাকা ফুরিয়ে আসছে। তাই কেউ পাশে দাঁড়াতে চাইলে খুশিই হব।’

আসমার খুশি হওয়া মানে অসহায় কিছু মানুষেরও মঙ্গল। এ কদিনের অভিজ্ঞতায় আসমা বললেন, ‘সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় আছেন সমস্যার কথা মুখ ফুটে বলতে না-পারা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের মানুষেরা। এমন কিছু মানুষের দেখা আমি পেয়েছি, যাঁরা না পারছেন বলতে, না পারছেন সইতে।’

এই দুঃসময়েও তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছেন আসমা। ঘরবন্দী সময়ে মানুষের জন্য কিছু করতে পেরে দেশ–বিদেশ ঘোরার চেয়ে কম আনন্দ পাননি কাজী আসমা আজমেরী।