পর্যটনে পাঁচ মিশালি

মো. জামিউল আহমেদ মো. জামিউল আহমেদ

লেখক ও পর্যটন ব্যক্তিত্ব

প্রকাশিত: ৯:৪৭ অপরাহ্ণ, অক্টোবর ৪, ২০২৩ 218 views
শেয়ার করুন

নাম পর্যটন। বয়স বায়ান্ন বছর। ঠিকানা বাংলাদেশ। গড়ন হালকা পাতলা। আকৃতি মাঝারি হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এখনো শিশু। কেন? পরিচর্যার অভাব হলে যা হয় তাই আর কি। দেখভালের কি কেউ নেই? অনেকেই আছেন তবে, আন্তরিকতা ও শুশ্রুষা জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব। কেন এমন হলো? মাটির গুণে হয়েছে। তাহলে পর্যটনের কি কোন সম্ভাবনা নেই? না, তাও আছে তবে এই পবিত্র ভুমির মানুষগুলো প্রচন্ড স্বার্থপর এবং অহমিকায় পরিপূর্ণ। তাই সম্ভাবনা থাকার পরও শুধু এদের ব্যর্থতার জন্য বায়ান্ন বছরে্র পর্যটন তেমন একটা সাফল্যের মুখ দেখতে পারেনি।

আসলেই কি তাই? হ্যা, এখানকার মানুষগুলো অন্যের ভালো সহ্য করতে পারেনা বলেই প্রকৃতিগতভাবেই মন্দ পরিবেশের শিকার। এদের সবাইকে কি এক পাল্লায় তোলা যাবে? না, তা অবশ্যই নয়। ভালো-মন্দ মিলেইতো সমাজ। এখানেও এর কোন ব্যতিক্রম নেই। তাহলে এরা কারা? এরা সবাই একই পরিবারের। যার নাম ট্যুরিজম স্টেকহোল্ডার বা পর্যটন দায়ক গোষ্ঠী। এদের কি কোন বিভাজন নেই? আছে এবং তা পরিষ্কারভাবেই আছে।


এই পরিবারে কি অন্য কারো প্রবেশাধিকার নেই? অবশ্যই আছে যেহেতু পর্যটনের পরিচয় হচ্ছে, ট্যুরিজম ইজ এভরিবডিজ বিজনেস। অর্থাৎ পর্যটন সবার এবং সর্বজনীন একটি মাধ্যম। আর এই সুযোগে এখানে অনেক সুযোগসন্ধানী ও দুষ্টু লোকের আগমন প্রকাশ্য। তাহলে কি কোনো বিভাজন আছে? অবশ্যই আছে এবং তা কার্যকলাপ তথা চারিত্রিক বৈশিষ্টের উপর ভিত্তি করে। এটিকে খোলাসা করলে কি দাঁড়াবে? একটা কিছুতো দাঁড়াবেই এবং তা একেবারেই পরিষ্কার।


যেমন? যেমন এখানে নানা কিছিমের মানুষের এক মিশ্রণ রয়েছে। তা কি খুব জঠিল কিছু? না, তা নাহলেও এটিকে শ্রেণী চরিত্রের দিক থেকে অন্তত পাঁচ প্রকারের মানুষের এক মিশেল বলা যায়। যা কিনা পর্যটনকে পাঁচ মিশালি বানিয়েছে। এদের সাথে কি পরিচয় করিয়ে দেয়া যাবে? অবশ্যই যাবে এবং এরা হচ্ছে –
একঃ বেসরকারী খাতের অতিক্ষুদ্র নয় তবে ক্ষুদ্র ও মাঝারি গোছের ব্যবসায়ী, শিক্ষক, লেখক, গণমাধ্যম কর্মী ইত্যাদি যারা কিছু পাওয়ার চেয়ে নিজের পরিচিতির জন্য স্যার স্যার বলে ধর্না দেয়, সান্নিধ্য নেয়, পাশে থেকে কিংবা পর্যটনের পরিচয় দিয়ে নিজেকে পরিচিত করতে চায় তারা প্রয়োজনে তৈলমর্দন এমনকি দালালী করতেও দ্বিধাবোধ করেনা।
দুইঃ বেসরকারি খাতের ব্যবসায়ী, নেতা, শিক্ষক, লেখক, সাংবাদিক, তথাকথিত পর্যটন প্রেমী যারা নিজেদের একটা কিছু হিসেবে পরিচয় দিয়ে সরকারি লোকজনের সান্নিধ্য নেয়, তৈলমর্দন করে এবং তার সাথে নিজেকে তুলে ধরার পাশাপাশি যা কিছু স্বার্থ হাসিল করা যায় তাতেই সন্তোষ্ট থাকে। এতে সরকারি লোকজনও এদেরকে তাদের বিশ্বস্ত ও পক্ষের লোক হিসেবে কাজে লাগাতে পারে।


তিনঃ সরকারি কর্মকর্তা; বেসরকারি ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ; শিক্ষক নেতৃবৃন্দ এবং সাংবাদিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে যারা সরকারি বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়ে নানা অজুহাতে সরকারি কর্মকর্তাদের সান্নিধ্য পেয়ে থাকেন তাদের একটি অংশ মিলেমিশে নিজ নিজ স্বার্থসিদ্ধির জন্য কাজ করেন। এতে অনেকক্ষেত্রে বেসরকারি লোকজন তেমন একটা লাভবান না হলেও তাদের সমর্থন থাকায় সরকারি লোকজনের জন্য কোনকিছু জায়েজ করে নেয়া খুব সহজ হয়ে যায়।
চারঃ সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা; বেসরকারি খাতের বড়মাপের ব্যবসায়ী; রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক আনুকূল্য পাওয়া সুবিধাবাদী ও শীতের পাখি এমন লোকজন যাদের পর্যটনের সাথে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও তারা তাৎক্ষনিক পর্যটন দরদি কিংবা জ্ঞানী সেজে বড় মাপের স্বার্থসিদ্ধি হাসিল করে ফেলতে পারেন। আবার এদের মধ্যে শুধু মাঠের নয়, সাইডলাইনে থাকা বা অবসরে যাওয়া আমলা এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিচিত আছে এমন তেলবাজ ও তদ্বিরবাজরা পর্যটনের মানুষ না হয়েও জ্ঞান দানে সিদ্ধহস্ত এবং তাদের উপস্থিতিও লক্ষণীয়।


পাঁচঃ রাজনৈতিক সরকারের প্রতিনিধি এবং প্রশাসনিক সরকারের প্রতিনিধি যারা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন তাদের নজরদারি ও খবরদারিই পর্যটনের জন্য শেষ কথা। তারা পর্যটনকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করবেন বা ব্যাখ্যা দিবেন তারই আলোকে পর্যটনের ভাগ্য নির্ধারিত হবে। এখানে বেসরকারি খাতের অন্ধ দর্শক হওয়া এবং কারো কারো খয়ের খাঁ সাজা ছাড়া আর কিছু করার নেই এবং থাকেওনা। যদিও বলা হয় সরকারি-বেসরকারি উভয় খাতকে নিয়েই পর্যটন কিংবা বেসরকারি খাতই পর্যটনের মূল শক্তি তবুও বাস্তবে তারা এসবের ধার ধারেন না এবং কোন প্রয়োজনও পড়েনা। কেন না বেসরকারি খাতের মধ্যে কোন ঐক্য না থাকায় কোন বিষয়ে দাবী নিয়ে চাপ সৃষ্টিতো দূরে থাক টু শব্দটি পর্যন্ত করার সংস্কৃতিও এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত।

অথচ পর্যটনের এই পাঁচ মিশালিদের তথা পাঁচ প্রকারের মানুষগুলোর মধ্যে অনেকেই রয়েছেন যাদের শিক্ষা, অভিজ্ঞতা, কর্মদক্ষতা, আন্তরিকতা, সততা, একাগ্রতা কোনকিছুরই অভাব নেই। কিন্তু এই পাঁচ মিশালি দুষ্টচক্র এবং বর্ণচোরাদের জন্য তারা চাইলেও কিছু করতে পারেননা। এজন্য এদের দুঃখের শেষ নেই যেহেতু তারা সইতেও পারছেনা আবার কিছু করতেও পারছেনা। উপরন্তো সবকিছু নীরবে নিভৃতে সয়ে যেতে হচ্ছে।