পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ

জামিউল আহমেদ জামিউল আহমেদ

পর্যটন ব্যক্তিত্ব, লেখক

প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ণ, সেপ্টেম্বর ২১, ২০২৩ 389 views
শেয়ার করুন

 

বিনিয়োগ। শব্দটি ছোট হলেও এর অর্থ অনেক ব্যাপক। তবে এক কথায় বিনিয়োগ হচ্ছে লাভের আশায় সঞ্চিত অর্থ বা মূদধনের ব্যবহার। ব্যবসা, বাণিজ্য, শিল্প ইত্যাদি যেখানেই মুনাফা তথা লাভ-লোকসানের ব্যাপার রয়েছে সেখানেই বিনিয়োগ প্রথম এবং প্রধান বিষয়। বিনিয়োগ নানা কারণে শুধু যে অবশ্যাম্ভাবী হয়ে পড়ে তা নয়। বিনিয়োগের যথার্থতা নিরূপনও সময়োপযোগী এবং বাস্তবসম্মত হওয়া চাই। মোদ্দা কথা, এটি মানতেই হবে বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি এর সঠিক ব্যবহারের উপর নির্ভর করে সত্যিকার মুনাফা অর্জনের সফলতা।


এই বিবেচনায় পর্যটনের মত একটি বিশাল, বিস্তৃত ও বহুমাত্রিক শিল্পে বিনিয়োগের স্থান সবকিছুর উপরে। এখানে রয়েছে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র, মাঝারি এবং বৃহৎ সব ধরনের বিনিয়োগ সুবিধা। অন্যদিকে এই শিল্পটি শতভাগ সেবা নির্ভর শিল্প হওয়ায় এটি একটি নাজুক শিল্পও বটে। যেকোন দৈব্য-দুর্বিপাকে সবার আগে ধরাশায়ী হয় এই শিল্পটি; তা হোক জাতীয়, আঞ্চলিক কিংবা আন্তর্জাতিক। অবশ্য অতীত অভিজ্ঞতা বলে, পর্যটন খুব দ্রæত সমস্যা কাটিয়ে স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরেও আসতে পারে। যেমনটি দেখা গিয়েছে পর্যটনের করোনাকালীন বৈশি^ক বিপর্যয়ে।


তবে, ব্যাপারটি যে খুব একটা সহজ ছিল তাও কিন্তু নয়। শতভাগ সেবা নির্ভর এই শিল্পটি এক পর্যায়ে শতভাগই স্থবির হয়ে পড়েছিল। পর্যটনের বিশ^ মুরুব্বী ”জাতিসংঘ বিশ^ পর্যটন সংস্থা” (ইউ এন ডাবলু টি ও) তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করায় পর্যটন আবার ধীরে ধীরে ঘুরে দাঁড়ায়। প্রথমেই অভ্যন্তরীণ পর্যটন দিয়ে শুরু হওয়া নানামূখী কার্যক্রম বেশ ফলপ্রসূ হওয়ার প্রেক্ষাপটে এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক পর্যটন সীমিত আকারে হলেও তার ডানা মেলতে থাকে। এভাবে বৈশি^ক নানামূখী পদক্ষেপকে কাজে লাগিয়ে পর্যটন তার গতি ফিরে পেতে সক্ষম হয়।


২০২৩ সালের প্রথম চার মাসের মধ্যেই একটি মজবুত অবস্থান জানান দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের পর্যটন ২০১৯ সালের সেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে সক্ষম হয়। তার সাথে ইউরোপের যে অগ্রগতি তা যোগ হয়ে আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা করোনা পূর্ববর্তী সময়কার শতকরা ৮০ ভাগে পোঁছায়। যা কিনা ২০১৯ সালের ঐ একই সময়ের চেয়ে শতকরা ২২ ভাগ কম বটে, তবে তুলনামূলকভাবে ২০২২ সালের শতকরা ৬৬ ভাগের সমান। তেমনি গত বছরের একই সময়ের সাথে তুলনায় দেখা যায় ২০২৩ সালের প্রথম চার মাসে আন্তর্জাতিক পর্যটনের অগ্রগতি হয়েছে শতকরা ৮৬ ভাগ। যা কিনা বছরের প্রথম ভাগেই পর্যটনের শক্তিমত্তার ধারাবাহিকতার পরিচায়ক।
এই বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ইউ এন ডাবলু টি ও আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর পালিতব্য “বিশ^ পর্যটন দিবস” এর সার্বিক কর্মকাÐে বিনিয়োগকেই সামনে নিয়ে এসেছে। যেজন্য দিবসটির প্রতিপাদ্য হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে, ”ট্যুরিজম এন্ড গ্রীন ইনভেস্টমেন্ট” বা পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ। অবশ্য ১৯৮০ সাল থেকে প্রতি বছর পালিত হয়ে আসা এই বিশ^ পর্যটন দিবসের জন্য যে প্রতিপাদ্য থাকে তা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও রয়েছে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পর্যটন সম্পৃক্ত এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয়কে বিবেচনায় নেয়া যা সময়োপযোগী এবং বৈশি^কভাবেও অপরিহার্য।


তাই প্রতিপাদ্য নির্বাচনের সাথে সাথে এর যথার্থতা নিয়ে বিষদভাবে ব্যাখ্যাও দেয়া হয়ে থাকে। যাতেকরে বিশ^ পর্যটন দিবস পালনকারী প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলকে প্রতিপাদ্যের সঠিকতা অনুধাবনে এবং সে অনুযায়ী কর্মসূচী প্রণয়নে কোন বিভ্রান্তিতে পড়তে না হয়। যেহেতু এবারের প্রতিপাদ্যের মূল বিষয় হিসেবে নেয়া হয়েছে বিনিয়োগকে সেহেতু যথারীতি এর ব্যাখ্যাও তুলে ধরা হয়েছে ধারণাপত্রের মাধ্যমে। কেন না প্রতিপাদ্য নিয়ে কারো নিজস্ব কোন ধারণা বা মনগড়া কোনকিছু চাপিয়ে দেয়া শুধু যে বিভ্রান্তির জন্ম দেবে তা নয়। উপরন্তু প্রতিপাদ্য নির্বাচনের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জন বিফলে যাবে এবং অংশীজনসহ অন্যান্যদের কাছেও ভুল বার্তা যাবে।


এ বিষয়টি মাথায় রেখে যদি আমরা প্রতিপাদ্য নির্বাচন বিষয়ক ব্যাখ্যা তথা ধারণাপত্রে দৃষ্টি ফিরাই তাহলে কি দেখতে পাই? হ্যা, প্রথমেই লক্ষণীও যে বিনিয়োগের সাথে সবুজকে সম্পৃক্ত করার গুরুত্বটা এখানে প্রাধান্য পেয়েছে। যদ্বারা করোনা পরোবর্তী সময়ে ধ্বংশপ্রাপ্ত পর্যটনকে তার পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নেয়ার কর্মসূচীকে আরো কার্যকর ও বেগবান করার উপর জোর দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এক্ষেত্রে যে তিনটি বিষয়কে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো – মানুষ, গ্রহ এবং সমৃদ্ধি। অর্থাৎ এদের জন্যেই গতানুগতিক হোক আর গতানুগতিকতা ছাড়াই হোক আরো অধিক উন্নত ও যথার্থ বিনিয়োগ একান্ত অপরিহার্য।


তাহলে প্রশ্ন জাগে মানুষ, গ্রহ এবং সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বলতে কি বা কাকে বুঝানো হয়েছে? হ্যা, মানুষের জন্য বিনিয়োগ বলতে শিক্ষা এবং দক্ষতায়; গ্রহের জন্য বিনিয়োগ বলতে টেকসই অবকাঠামো এবং সবুজে রূপান্তরকে ত্বরান্বিত করায়; সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ বলতে উদ্ভাবন, প্রযুক্তি এবং শিল্পোদ্যোগে বিনিয়োগকে বুঝানো হয়েছে। এক্ষেত্রে বিনিয়োগের জন্য বিবেচনায় নেয়া বা নির্বাচিত প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে এটির অতীত এবং বর্তমান অবস্থানকে পরিসংখ্যানসহ তুলে ধরা হয়েছে।

মানুষের জন্য বিনিয়োগ:
গত ২০১৯ সালেই বৈশি^ক মোট কর্মসংস্থানের শতকরা ১০ জনই ছিল পর্যটন থেকে। তাছাড়া গ্রামীণ এলাকায় যে পর্যটন জনশক্তি রয়েছে তার মধ্যেকার শতকরা ৫৪ জনই হচ্ছে নারী। আবার অতিক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র বিনিয়োগ এবং স্ব-কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে পর্যটন হচ্ছে সহজে প্রবেশ করা যায় এমন একটি খাত। তারপরও শক্ত ভিতের পর্যটন গন্তব্যগুলোতে শতকরা ৫০ ভাগ যুবাই কাজ করার সুযোগ পায়না। তার মূলে রয়েছে সুযোগ, সম্পদ এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের ঘাটতি।
তারচেয়েও বড় কথা হলো, বিদ্যমান শিক্ষণ ও প্রশিক্ষণ সুবিধা ভারসাম্যহীন হওয়ার ফলশ্রæতিতে হোটেল ব্যবস্থাপনা ব্যাপকভাবে গুরুত্ব পেয়ে থাকে। অথচ সামনের দিকে তাকালে বৈশি^ক পর্যটনের জন্য এখন থেকে ২০৩০ সাল পর্যন্ত প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ হসপিটালিটি গ্র্যাজুয়েট দরকার। আরো সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে বলা যায় শুধুমাত্র কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রাপ্তদের চাকুরীর সুযোগ রয়েছে অন্তত ৮ লক্ষ জনের। এসব কারণে মানুষ তথা মানব সম্পদ উন্নয়নে বিনিয়োগ অবশ্যই যথার্থ যেহেতু এরাই হচ্ছে পর্যটনের ভিত্তি মূল।

গ্রহের জন্য বিনিয়োগ:
করোনা পরবর্তী সময়ে গতানুগতিক বিনিয়োগে অবদান রাখা হোটেলের ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বছরের পর বছর শতকরা ১.৩৪ হারে হোটেলে বৈশি^ক বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০২১ সালেই তা গিয়ে পৌঁছায় ৬৬.৮ মিলিয়ন আমেরিকান ডলারে। এর মূলে রয়েছে নতুন করে বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে সবুজ ভবনাদি এবং আগে ছিলনা এমন কিছু তৈরীর মত অন্যান্য সুবিধাদি সৃষ্টি হওয়া ইত্যাদি। যেজন্য আগামীর দিকে দৃষ্টি ফেললে নি:স্বরণ কমানোর প্রয়োজনে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সবুজ ভবনাদি নির্মান খাত যেমন হোটেল, রিসোর্ট, রেস্টুরেন্ট ইত্যাদিতে অন্তত ১.৫ ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়াও পর্যটন খাতকে কার্বনমুক্ত করার প্রযুক্তি এবং জলবায়ু সহনশীল অবকাঠামো তৈরীতেও প্রতি বছর ৪ (চার) ট্রিলিয়ন আমেরিকান ডলার বিনিয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হযেছে। তাই পর্যটনে সবুজ স্থানান্তরকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিদ্যমান কাঠামো এবং পন্থাগুলো নিয়ে ভাববার সময় এসেছে। এতেকরে ২০৫০ সালের পূর্বে নেট জিরো বা কার্বন নিউট্রালিটিতে পৌঁছার জন্য ২০৩০ সালের মধ্যে নি:স্বরণকে অর্ধেকে নামিয়ে আনার বৈশি^ক যে দৃঢ়তা তাকে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে কাজে লাগিয়ে সবুজ বিনিয়োগ কাঠামো ও উদ্ভাবনীমূলক আর্থিক উদ্যোগকে উন্নয়নের পথে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।

সমৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ:

পর্যটন শিল্পে চাকুরীরত শতকরা যে ৫৪ জন নারী রয়েছেন তার মধ্যেকার শতকরা ৩৯ জনই বৃহত্তর অর্থনীতির সাথে সম্পৃক্ত। সেই বিবেচনায় নারী শিল্পদ্যোক্তাদেরকে সরাসরি সহায়তা দেয়ার জন্য বিশ^ নেতৃবৃন্দকে এগিয়ে আসতে তাগিদ দেয়া হয়েছে। যাতে নারীরা আরো বেশি চাকুরীর সুযোগ এবং কর্মস্থলে সমান বেতন পেতে সক্ষম হন। পরিসংখ্যান বলছে বৈশি^কভাবে প্রসারিত নারী শিল্পদ্যোগ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং দারিদ্র দূরীকরণে বিশেষ ভুমিকা রাখছে। যেজন্য আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে নারী শিল্পদ্যোগে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে নারী নেতৃত্বে পরিচালিত ব্যবসাকে আরো এগিয়ে নিতে কর্মসূচীও নেয়া হয়েছে। কেন না উদ্ভাবন, প্রতিযোগীতা এবং নতুন মান নির্ধারণে তাদের ভুমিকা অতুলনীয়।
মোদ্দা কথা উদ্ভাবন এবং ডিজিটেলাইজেশনে বিনিয়োগের সাথে এর ক্রস-সেক্টরিয়াল প্রভাবের একটি গুণক সম্ভাবনা রয়েছে। যা শুধু কৌশলগত বৃহৎ বৈশি^ক এবং আঞ্চলিক প্রকল্পগুলোকেই যে শক্তিশালী করে তা নয়; তার সাথে পর্যটন পুনরুদ্ধার ও চাকুরীর নিরাপত্তা বেষ্টনীকে উদ্দীপিত করে। আর তা সম্ভব হয় অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোগকে টিকে থাকা; অর্থনীতির পদ্ধতিগত প্রভাব প্রশমন; কর্মসংস্থান টেকসই করণে সমর্থন দেয়া এবং করোনা পরোবর্তী সময়ে ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলী সৃষ্টির মাধ্যমে। যা কিনা টেকসই পর্যটনের উন্নয়ন এবং বিকাশের জন্য অপরিহার্য।

তাহলে দেখা যাচ্ছে এসব বিষয়কে সামনে রেখেই ইউ এন ডাবলু টি ও এবারের বিশ^ পর্যটন দিবস উপলক্ষে এই খাতের সদস্য দেশগুলো, বিভিন্ন গন্তব্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সমূহ এবং বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সেতু বন্ধনের জন্যই বিনিয়োগকে বিশেষ অগ্রাধিকার হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এতেকরে পর্যটনের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, সরকার, বহুপাক্ষিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, উন্নয়ন অংশিদার এবং বেসরকারী খাতের বিনিয়োগকারীদের একটি নতুন বিনিয়োগ কৌশল সামনে রেখে একযোগে কাজ করা অনেকটা সহজ হবে। অবশ্য অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে বলাই যায় পর্যটনের বিশ^ মুরুব্বীর এই আহবান বিশ^ জুড়ে শুধু যে সাড়া জাগাবে বা ঢেউ তুলবে তা নয়, আশাতীত ফলও নিয়ে আসবে তাতে সন্দেহের অবকাশ নেই।

পরিশেষে একটি প্রশ্নকে সামনে রেখে ফেরা যাক বাংলাদেশ প্রসঙ্গে। বাংলাদেশ কি “ইউ এন ডাবলু টি ও” কর্তৃক নির্বাচিত এই প্রতিপাদ্য তথা “পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ” কর্মসূচী তার রোগাক্রান্ত পর্যটনের জন্য কাজে লাগাতে পারবে? এমন প্রশ্নের উত্তর হ্যা সূচক হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই ক্ষীণ। পঞ্চাশ বছর ধরে অবিরাম পথ চলে এগুতে না পারা অথচ ক্লান্ত এই পর্যটন নিয়ে কোন ইতিবাচক মন্তব্য করা বলতে গেলে সত্যকে আড়াল করার সামিল। কেন না পর্যটন উন্নয়নে যে আন্তরিকতা, স্বচ্ছতা, দৃঢ়তা এবং সঠিক ব্যবস্থাপনা দরকার তার প্রায় সবটাই বাংলাদেশ নামক এই ভূখÐে অনুপস্থিত।

সত্যি বলতে কি এর দায়ভাগ পর্যটন সম্পৃক্ত সকল পক্ষ তথা পর্যটন দায়কগোষ্ঠী বা স্টেকহোল্ডারদের উপরই বর্তায়। কেন না মূল যে তিন পক্ষ অর্থাৎ পর্যটনের অভিভাবক বা সরকার এবং তদীয় প্রশাসন; সেবা প্রদানকারী বা ব্যবসায়ী এবং সেবা গ্রহণকারী ভোক্তা বা পর্যটক তাদের স্ব-স্ব ভুমিকা তথা দায়িত্ব পালনে তারা ব্যর্থ। তারা যার যার অবস্থান থেকে যে অতি চালাক, স্বার্থপর, বর্ণচোরা এবং দায়িত্ব্্জ্ঞানহীন তা তারা অস্বীকার করতে পারেন না। তবে শুধু পরিমাণের দিক থেকে হয়তো কোনো তারতম্য থাকতেই পারে। যেমনটি, পর্যটন শিল্পের অভিভাবক হিসেবে সরকার বাহাদুরের দায়ভাগ অবশ্যই বেশি।

এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্য অন্তত এই সময়ে “পর্যটনে সবুজ বিনিয়োগ” এর মত একটি চমৎকার, আধুনিক ও বিশ^জনীন কর্মসূচীকে নিখুতভাবে নিদেন পক্ষে এক বছরের জন্য চালিয়ে নিয়ে পরবর্তী সময়ের জন্য গতি পাইয়ে দেয়া অবিশ^াস্য না হলেও অবশ্যই দূরূহ এবং এটিই বাস্তবতা। মনে রাখতে হবে, প্রতি বছর যে প্রতিপাদ্য নিয়ে “বিশ^ পর্যটন দিবস” পালিত হয় তা শুধু ঐ একটি দিনের আড়ম্বরতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। উপরন্তু পরবর্তী বিশ^ পর্যটন দিবস পর্যন্ত গোটা বছর ধরে নির্বাচিত প্রতিপাদ্যের বিষয়বস্তুকে বিভিন্ন কর্মকাÐের মাধ্যমে বাস্তবে রূপ দেয়ার মধ্যেই এর আসল উদ্দেশ্য নিহিত।

লেখক: চেয়াম্যান, সেন্টার ফর ট্যুরিজম স্টাডিজ (সিটিএস)।