সিলেট -৬ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখে নৌকার প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী ।। তৃণমূল আওয়ামী লীগে বিভাজন

প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ণ, ডিসেম্বর ২৬, ২০২৩ 272 views
শেয়ার করুন
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার-গোলাপগঞ্জ) আসনে প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন  হেভিওয়েট ৪ জন প্রার্থী। নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের মিছিল-মিঠিং, গণসংযোগ ও প্রচার-প্রচারণা। এই আসনের দুই উপজেলা শহরসহ গ্রামীণ হাটবাজার ও পাড়া মহল্লার নানা আলোচনা আড্ডায় এখন মুখ্য বিষয় নির্বাচনী হিসাব-নিকাশ। ফলে রাজপথের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর অংশ গ্রহণ ছাড়াই এই আসনে নির্বাচনী লড়াই এখন বেশ জমে উঠছে। তবে এই আসনে নৌকার প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন  দলের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও অন্য দুই  দলের হেভিওয়েট  দুই প্রার্থীর নির্বাচনে শক্ত প্রতিদ্বন্ধিতার জন্য।
সিলেটের প্রবাসী অধুষ্যিত বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত জাতীয় সংসদের ২৩৪ নং সিলেট-৬ আসন। এই আসনে ২০০৮ থেকে টানা ৩ বারসহ মোট ৫বার আওয়ামী লীগ, ২বার বিএনপি, ২বার জাতীয় পার্টি ও ২বার বিএনপি ঘরনার স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আবারো আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও বর্তমান কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা পরিষদের অন্যতম সদস্য এবং টানা ২ বারের সাবেক শিক্ষামন্ত্রী। তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সরওয়ার হোসেন।
এই আসনে জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী হিসেবে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন সাবেক বিরোধী দলীয় হুইপ ও সাবেক এমপি সেলিম উদ্দিন। এদিকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা শমসের মবিন চৌধুরী দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে  নুরুল ইসলাম নাহিদ এখন সভা, গণসংযোগ ও নানা প্রচারনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদেরও নির্বাচনী মাঠে সরব উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে। তবে তৃণমূলের দলের ভিতর সৃষ্ট বিভাজন বেশ প্রকট রূপ ধারণ করেছে। আওয়ামী লীগের ইউনিয়ন পর্যায়ের দায়িত্বশীল নেতারা তৃণমূলের নেতাকর্মীদের কৌশলে এড়িয়ে চলছেন, ফলে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের বড় অংশ এখন দায়িত্বশীলদের অবহেলার জবাব দিতে গিয়ে প্রকাশ্যে এবং গোপনে নৌকার বিপক্ষে মাঠে নামছে।  অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল বেশির ভাগ নেতা লোকদেখানো প্রচার প্রচারনায় ষতোটা সরব ঠিক ততটা উদাস প্রকৃত অর্থে নৌকার ভোট বৃদ্ধির কাজে। এছাড়া বিয়ানীবাজার উপজেলার গ্রামীন ও আঞ্চলিক মহাসড়কের দীর্ঘদিন থেকে বেহাল দশার কারনে ভুক্তভোগী জনসাধারণের মাঝে নৌকার প্রার্থী বর্তমান এমপির উপর জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশও ঘটতে দেখা যাচ্ছে আসন্ন নির্বাচনকে ঘিরে। ফলে এবার নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়া নৌকার প্রার্থীর জন্য কঠিন হয়ে উঠছে বলে বিশ্লেষকদের অভিমত।
এই আসনে দীর্ঘ প্রায় ১৫ বছর থেকে মাঠে তৎপর থাকা আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এবার স্বতন্ত্র নির্বাচন করছেন ঈগল প্রতীক নিয়ে। এখানে স্থানীয় আওয়ামী লীগের মধ্যে বর্তমান এমপি নৌকা প্রতীকের প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদ বিরুধী বড় একটি বলয় এখন স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের ঈগল প্রতীকের পক্ষে কাজ করছে। বিরুধী বলয়ের কর্মী সমর্থকরা প্রকাশ্যে মাঠে নামলেও পদ পদবীদারী নেতারা গোপনে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে কাজ চালাচ্ছেন। ফলে নির্বাচনী বৈতরনী পাড় হতে এবার দলের মধ্যেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন নৌকার প্রার্থী নাহিদ। তাছাড়া আওয়ামী লীগ এন্ট্রি বিভিন্ন দলের সমর্থক ও সাধারন ভোটারদের একটি অংশও এই আসনে পরিবর্তনের লক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থীর পক্ষে ঝুকছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে।
এছাড়া এক সময় জাতীয় পার্টির দুর্ঘ খ্যাত এই আসনটি পূণরুদ্ধারে জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা সেলিম উদ্দিন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন। ক্লিন ইমেইজের রাজনীতিবিদ সেলিম উদ্দিনের ডাকে ঐক্যবদ্ধ দলীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি সাধারন ভোটারদের উলে­খযোগ্য একটি অংশ লাঙ্গলের পক্ষে সক্রিয় কাজ করছে। ফলে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও স্বতন্ত্র দুই প্রার্থীর বিভাজনের সুযোগে এই আসনে এবার জাতীয় পার্টি বাজিমাত করার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যাচ্ছে না।
এদিকে তৃণমূল বিএনপির চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দলীয় প্রতীক সোনালী আঁশ নিয়ে এই আসনের নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। গত সংসদ নির্বাচনেও তিনি এই আসনে বিকল্প ধারা থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তীতে জোটের হিসাবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সমর্থন দিয়ে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাড়ান। এবার নির্বাচনে জয়লাভের বিষয়ে তিনি শতভাগ আশাবাদি, যদিও ভোটের মাঠে তার নিজের কিংবা তৃণমূল বিএনপির উলে­খযোগ্য কোন অবস্থান এখনো নেই। তবে দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে গোলাপগঞ্জ উপজেলার একক প্রার্থী হিসেবে তিনি এবার নির্বাচনী মাঠে লড়ছেন, পক্ষান্তরে ভোট যুদ্ধে অনেকটা সমান্তরাল অবস্থানে থাকা উপরোক্ত ৩ প্রার্থী বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা। এমতাবস্থায় ভৌগলিক সুবিধা নিয়ে শেষ পর্যন্ত যদি আঞ্চলিকতার টানে গোলাপগঞ্জ উপজেলাবাসী দলমতের উর্ধ্বে উঠে শমসের মবিন চৌধুরীর পক্ষে নীরবে অবস্থান নেয়, তবে নির্বাচনী খেলায় চমক জাগানো বিজয় অর্জন করতে পারেন সাবেক এই কুটনৈতিক।
উলে­খ্য, এই আসনে মোট ৬ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধিতা করছেন। তন্মধ্যে উপরোক্ত ৪ প্রার্থী ছাড়া অপর দুই প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী সাদিকুর রহমান। এই আসনে মোট ভোটার ৪,৭০,৫১৯ জন। তন্মধ্যে বিয়ানীবাজার উপজেলায় ২০৩১৫৫ জন এবং গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২৬৭৩৬৪ জন।