সোহেল মোল্লা এবং তার আট সহকর্মী প্রতি বছর ঈদের সময় তাদের পরিবারে টাকা পাঠাতেন বাংলাদেশে। পাঠানো টাকা দিয়ে নতুন পোশাক কেনা হত। পরিবারের সাথে ঈদ আনন্দে মেতে উঠতেন। কিন্তু এই বছর, পরিবারে ও তাদের এটি ঘটেনি। কারন মহামারি করোনায় কর্মহীন অবস্থায় কোয়ারেন্টাইনে থেকে বেচেঁ থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন তারা। প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধে চলমান লকডাউনে গত আড়াই মাস ধরে কর্মহীন অবস্থায় নিজের খাওয়ার টাকাই পকেটে নেই। চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে তাদের। সোহেল বলছিলেন, লকডাউনের প্রথম দিকে নিয়োগকর্তা ৫০০ রিঙ্গিত দিয়েছিলেন এবং কিছু খাবার দিয়েছিলেন। তবে পরবর্তীতে এ ৫০০ রিঙ্গিত তাদের বেতন থেকে কেটে নেওয়া হবে। “সাধারণত ঈদে আমরা বিরিয়ানি রান্না করি, তরকারী এবং ঝাল, পোলাও, রোটি রান্না করি এবং আমাদের প্রিয় মিষ্টি শেমাই তৈরি করি … ।
এই বছর এটা হয়ে উঠেনি। সোহেল ও তার বন্ধুরা পেটালিং জায়ার একটি সাবলেটে থাকেন, যা একসময় অফিস ছিল। তিনটি কক্ষেই তারা কয়জন মিলে থাকেন। রয়েছে একটি ছোট রান্নাঘর। বিকেলে, কক্ষগুলি অত্যন্ত গরম হয়, যা রমজানের সময় খুব কষ্টে ছিলেন। এখানে যারা রয়েছেন, বেশিরভাগ লোকই নির্মাণ কাজ করেন। যেহেতু সরকার সমস্ত নির্মাণ প্রকল্প বন্ধ করে দিয়েছে, কখন তারা কাজে ফিরতে পারে তা নিয়ে অনেক অনিশ্চয়তায় দিন পার করতে হচ্ছে। সোহেল বলেছিলেন, এ এলাকায় প্রায় ৫৫ জন অভিবাসী রয়েছেন এবং আরও দশজন বাংলাদেশিসহ অন্য সাবলেটে নিয়ে যান। আব্বাস (৩০) নয় বছর আগে মালয়েশিয়ায় এসেছিলেন। আব্বাসের থাকার জায়গাটি সোহেলের চেয়ে কিছুটা ভাল । “আব্বাস বলেন, মালয়েশিয়া আসার পর কিছুদিন পরে আমার বাবা মারা গেলেন। বড় হিসাবে, পরিবার এবং আমার চার ভাইবোনকে দেখাশোনা করার ভার এখন আমার উপর। “আমি গড়ে ১,৮০০ রিঙ্গিত উপার্জন করি এবং প্রতি মাসে ১,০০০ রিঙ্গিত বাড়ি পাঠাই। ঈদের সময় টাকা পাঠাতে পারিনি। কতইনা কষ্টে রয়েছে দেশে থাকা পরিবার। গত আড়াই মাসে কোনো টাকাই দেশে পাঠাতে পারেননি। এমন পরিস্থিতিতে দেশে থাকা ভাইবোনরা “তারা চায় আমি বাড়ি ফিরে যাই। তবে টিকিটের জন্য আমার কাছে টাকা নেই। নাসিরউদ্দিন সেরেন (২৪) বলেন, প্রতি বছরই ঈদে বন্ধুরা মিলে বেড়াতাম। এবার এই পরিবেশ নেই। কারন নিজেই বাচঁতে পারছিনা। “আমাদের কাছে কোন খাবার কিনার টাকা না থাকলেও ঘর ভাড়া দিতে হবে। “আমরা কয়েক মাস ধরে ভাড়া দিতে পারিনি। জানালেন নাসির উদ্দিন। তারা আমাদের প্রতি জনের কাছে ঘর ভাড়া বাবত ১৫০ রিঙ্গিত চার্জ করছে। একই কথা বলছেন, আহমদ আলী (২৭)। আলী লিংকন ইউনিভার্সিটি কলেজ থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে ডিপ্লিামা গ্রাজুয়েট করেছেন।
আলী ২০১৮ সালে স্নাতক হওয়ার পরে, তিনি কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। পরিবতিতে অফিস ক্লিনার হিসাবে কাজ করছেন। তিনি অন্য ১১ জনের সাথে থাকেন। তাদের মধ্যে চারজন তরুণ শিক্ষার্থী। আহমদ বলেছিলেন, তিনি লকডাউনে থাকা যুবকদের বেচেঁ থাকার লড়াই করতে দেখেছেন। “তাদের কিছু খন্ডকালীন চাকরি ছিল কিন্তু এখন কোনও কাজ, খাবার, অর্থ নেই, তাদের মানসিক অবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ। তাদের অনলাইন ক্লাস করতে হয়। তবে তাদের কছে কোনো টাকা না থাকায় তারা অনলাইন ক্লাশে মনোনিবেশ করতে পারছেন না। পবিত্র মাহে রমজান শেষে মুসলিম উম্মাহর ঘরে ঘরে আসে ঈদ আনন্দ। এই ঈদের আনন্দে ভাটা পড়েছে। চলমান পরিস্থিতিতে ঠিকে থাকার লড়াই করছে সবাই। মালয়েশিযায় বিদেশী কর্মীর সংখ্যা নিয়ে ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সরকারী হিসেব অনুযায়ি প্রায় ১.৮ মিলিয়ন থেকে ৩.৩ মিলিয়ন। অন্য এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশটিতে মোট বিদেশি শ্রমিক রয়েছেন ৩.৪ মিলিয়ন থেকে ৫.৫ মিলিয়ন। ২০১৬ সালে একটি সংসদ আলোচনায় পাঁচজন মালয়েশিয়ার নাগরিকের বিপরিতে দু’জন বিদেশী কর্মী থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে মানবসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ তথ্য থেকে দেখা গেছে, বেশিরভাগ কর্মী ইন্দোনেশিয়া থেকে আসে, তার পরে নেপাল এবং বাংলাদেশ। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতে, তাদের মধ্যে ৮০ শতাংশই পুরুষ। তাদের বেশিরভাগই, সেলংগরে কাজ করছেন, তারপরে জোহর ও সারাওয়াকে।