সিলেটে আল্ হারামাইন হাসপাতাল : অন্ধকারে আশার আলো

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ১:৫৪ পূর্বাহ্ণ, মে ১৬, ২০২০ 639 views
শেয়ার করুন

করোনা ভাইরাস (কোভিড ১৯) সারাবিশ্বে মহামারী আকার ধারণ করেছে। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দিশেহারা হয়ে পড়েছে পুরোবিশ্ব। ব্যতিক্রম নয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে দিন দিন আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিলও। মহামারী আকার ধারণ করা এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না চিকিৎসক, নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষ। যার কারণে সর্বত্র দেখা দিয়েছে উদ্বেগ ও উৎকন্ঠা। ইতোমধ্যে রাজধানী ঢাকাসহ সিলেটের অনেক চিকিৎসক সেবা প্রদান করাও বন্ধ করে দিয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল/ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারও রয়েছে বন্ধ। যার ফলে অসহায় ও দিশেহারা হয়ে পড়েছেন রোগী সাধারণরা।

এসবের মাঝেও সিলেটবাসীর জন্য আশার প্রদীপ জ্বালিয়েছে সিলেটের স্বনামধন্য চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান “আল্ হারামাইন হাসপাতাল” । মহামারী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের শুরু থেকে সকল বিভাগ কার্যক্রম চালু রেখেছে হাসপাতালটি।

শুধু এপ্রিল মাসেই হাসপাতালটির বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বরত কনসালটেন্টবৃন্দ বহিঃবিভাগে প্রায় ৩০০০ রোগ এবং আন্তঃবিভাগে প্রায় ৫০০ রুগিকে চিকিৎসা সেবা প্রদান করেছেন । এছাড়াও হাসপাতালের রেডিওলোজী, প্যাথলজীসহ বিভিন্ন বিভাগে পরীক্ষা করেছেন কয়েক হাজার মানুষ।

এদিকে আল্ হারামাইনের আন্তঃবিভাগের মধ্যে শুধু গাইনী বিভাগেই এপ্রিল মাসে সিজারিয়ান সেকশন সহ অন্যান্য অপারেশন হয়েছে প্রায় ৮০ টি এবং নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান জন্মদান করেছেন ২৩ জন প্রসুতি। যার তত্বাবধানে ছিলেন গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর ডাঃ শামসুন্নাহার বেগম হেনা, ডাঃ লুবনা ইয়াসমিন ও ডাঃ রাবেয়া নাসরিন।

এছাড়াও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাহাত আমিন চৌধুরী, নিউরো সার্জন ডাঃ খন্দকার আবু তালহা, কিডনি বিশেষজ্ঞ ডাঃ আব্দুল লতিফ রেনু, অর্থোপেডিক্স সার্জন ডাঃ চৌধুরী ফয়জুর রব জুবায়ের, কার্ডিওলজিষ্ট (হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ) ডাঃ অজয় কুমার দত্ত ও ডাঃ সোহেল আল্‌ শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ মসীহ উদ্দিন চৌধুরি,ডাঃ সাহাব উদ্দিন, ডাঃ ফেরদৌস জাহান , মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ বিলকিস সুলতানা, ডাঃ সৌমিত্র রায় ও ডাঃ শাহেদ আহমদের, ডায়বেটিস ও হরমোন রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সোমা সরকার, চর্ম রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইকবাল আহমেদ ,নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ কাইয়ুম আন্সারী, জেনারেল ও লাপারস্কপিক সার্জারি বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডাঃ মুস্তাফিযুর রহমান, ডাঃ রেজা আহমেদ, ডাঃ আজিজুর রাহমান, দন্ত ও মাক্সিলোফেসিয়াল সার্জারি বিশেষজ্ঞ ডাঃ তালাল মামুন, ডাঃ মানযুমা যাকারিয়া এঁর তত্বাবধানে বহিঃ বিভাগ ও আন্তঃবিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। যা বর্তমান মহামারীতে চিকিৎসা সেবায় এক নবদিগন্ত, অন্ধকারে আশার আলো।

নানা উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতংকের মধ্যে হাসপাতালটিতে এসে চিকিৎসা সেবা পেয়ে খুশি রোগী ও তাদের স্বজনরা। এব্যাপারে মাওলানা মুজিবুর রহমান নামের একজন প্রসুতি রোগীর অভিভাবক বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে আজ সবাই আতংকিত। উদ্বেগ-উৎকন্ঠায় ছিলাম স্ত্রীকে নিয়ে সিলেটের কোন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিয়ে যাবো৷ তিনি জানান, “রোববার রাতে স্ত্রী’র প্রসব বেদনা উঠলে প্রথমে তিনি একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেলেও সেখানে চিকিৎসক না পেয়ে আল্ হারামাইন হাসপাতালে চলে আসেন৷ এখানে আসার পরই চিকিৎসকদের সার্বিক তত্বাবধানে ও প্রচেষ্টায় তিনি একজন কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছেন। মা-মেয়ে উভয়েই সুস্থ রয়েছেন। তিনি হাসপাতালের সার্বিক ব্যবস্থাপনা ও সেবায় খুশী বলে জানান”।

  • নিউরো মেডিসিন রোগীর অপর স্বজন-সন্তান কয়েস আহমদ জানান, আব্বা ব্রেইন স্ট্রোক করার পর আমরা বিয়ানীবাজার থেকে তাকে দ্রুত আল্ হারামাইন হাসপাতালে নিয়ে আসি। এখানে আসার পরপরই চিকিৎসা শুরু হয়ে যায় আমার বাবার। নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ রাহাত আমিন ও অন্যান্য চিকিৎসক এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য কর্মীদের আন্তরিক সেবায় বর্তমানে আমার আব্বা অনেকটা সুস্থ। সিলেটে আমরা এরকমই একটি চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান চেয়েছিলাম। অবশেষে আল্ হারামাইন হাসপাতাল সিলেটবাসীর সেই প্রত্যাশা পূরণ করেছে”।

বর্তমানে চলমান করোনা ভাইরাসের (কোভিড ১৯) মধ্যেও সব ডিপার্টমেন্ট চালু রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদানের বিষয়ে হাসপাতালটির সহকারী পরিচালক ডাঃ নাহিয়ান আহমেদ চৌধুরী জানান, ” আল্ হারামাইন হাসপাতাল প্রতিষ্টালগ্ন থেকে উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদানের মাধ্যমে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সিলেটবাসীর মনে জায়গা করে নিয়েছে। তিনি জানান, আমরা করোনা’র ভয়ে থমকে যেতে চাই না। আমরা চাই চিকিৎসা সেবা নিয়ে হতাশ হয়ে পড়া সাধারণ রোগীদের মুখে আশার আলো ফুটাতে। অন্ধকারে আলোর প্রদীপ হয়ে জ্বলতে। এজন্য আমরা সকলের সহযোগীতা চাই”।