কনসাল জেনারেল ইকবাল খান জাগিয়েছেন এবং ভালবাসায় কাঁদিয়েছেন মানুষকে

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ৪:২৫ অপরাহ্ণ, জুলাই ২৬, ২০২১ 589 views
শেয়ার করুন

ছোটবেলা থেকে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র, ছায়ানট আর ব্রতচারীতে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সে সুবাধে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যারের মুখে সরাসরি শুনার সুযোগ হয়েছিলো ‘মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়’ কথাটি। আর এর বাস্তব প্রমাণ দেখলাম দুবাইয়ে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খানকে দেখে। আড়াই বছর সময় খুব বেশি একটা সময় নয়। কিন্তু আড়াই বছরে কনসাল জেনারেল হয়ে দুবাই ও উত্তর আমিরাতে তিনি তার স্বপ্নের সমান বড় হয়ে জয় করেছেন কাজ আর মানুষের হৃদয়। জাগিয়েছেন মানুষকে। মন যোগাতে নয় বরং জাগাতে তিনি ছিলেন অগ্রপথিক। তাই বিদায়বেলায় কাঁদিয়েছেন প্রকৌশলী আবু জাফর চৌধুরী, অধ্যাপক আব্দুস সবুরসহ কমিউনিটির বয়োজ্যেষ্ঠদেরও। এ প্রাপ্তি একজন সরকারি কর্মকর্তার জন্য সচরাচর আমাদের চোখে পড়ে না।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মজীবনীতে মনিষীর মতো কিছু কালজয়ী কথা লিখে গেছেন তিনি। রাজনীতির এই বিপ্লবী কবি বঙ্গবন্ধু বাঙালি জাতি নিয়ে পরাশ্রীকাতরতা নিয়ে  লিখেছেন। আসলেই বাঙালিরা আবেগি। বায়ান্ন থেকে একাত্তর হিসেব করলে প্রতিটি আন্দোলনে আবেগই আমাদের সফলতা এনেছে। তবে আমরা মানুষকে বেঁচে থাকতে, কাছে থাকতে মূল্যায়ন করতে সাধারণত দেখি না। বরং হুমায়ূন আহমেদ এর ভাষায় মরে গেলে শোকসভায় লোকদেখানো প্রশংসায় কথার ফুলঝুরি ছুড়ি। অথচ, উন্নত জাতিরা একজন মানুষের মুল্যায়ন তার সামনে করে কাজের গতি বাড়াতে সহায়তা করে। কনসাল জেনারেল মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন খান অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান ইলিয়াসের দেখা সে স্বপ্নের নায়ক। যিনি জাগতে জানেন আবার জাগাতেও জানেন। তিনি জাগিয়েছেন মানুষকে। ৪ দশকের পর উত্তর আমিরাতের বৈধ সামাজিক সংগঠনে জাতির পিতার ছবি স্থান করে দেয়া এবং তাঁর নামে নানা স্থাপনা তৈরী করার অগ্রনায়ক তিনি। বাংলা সিনেমায় অনন্ত জলিলের ‘অসম্ভবকে সম্ভব করা’র মানুষ হয়ে জিতেছেন মানুষের ভালবাসা।

প্রবাসিবান্ধব এ কর্মকর্তা নিজের দায়িত্বের বাইরে গিয়েও রাত বিরাতে ছুটেছেন মানুষের দুয়ারে। অসহায়কে সহায় দেয়া ছিলো তার নেশা। একইভাবে মরুরবুকে লাল সবুজের পতাকা আর মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে অদম্য পথচলায় আড়াই বছরে ২৫ বছরের সমান কাজ করেছেন। তাঁর এসব কাজ দৃষ্টান্ত হবে কমিউনিটি আর অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তার মাঝে। আমি যখন খেলাঘর করতাম কিংবা ব্রতচারী করতে কলকাতায় ছিলাম তখন আমাদের প্রশিক্ষকরা বলতেন–দেশপ্রেমি দাবি করা মানুষের মৌলিক ইতিহাসে দায়বদ্ধ না থাকলে তার প্রেম বৃথা। ঠিক তেমনি ব্যক্তিজীবনেও তা মনে করি আমি। আমি মনে করি দেশ বিদেশে বাস করা সকল সরকারি কর্মকর্তাই দেশ্রেপমিক। তাঁরা শপথ নিয়ে যোগদান করেন তারই। কিন্তু বাস্তব জীবনে সকলে নয় কেউ কেউ তার প্রতিফলন ঘটান। এই সরল সমীকরণে ইকবাল হোসেন খান এখানেও সফল ।

বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র হিসেবে রসায়ন বা জীববিদ্যা মানুষের চলার পথে কতো কাজে লাগে পরতে পরতে বুঝি। ময়মনসিংহ গীতিকা বাংলা সাহিত্যের অন্যতম স্থান জুড়ে আছে। সংস্কৃতিরশহর ময়মনসিংহের পুরুষ ইকবাল হোসেন খান বিদেশের মাটিতেও দেশীয় শিক্ষা সংস্কৃতি বিকাশে রাস আল খাইমার আধমরা স্কুলকে প্রাণ দিয়েছেন নতুন করে। বিশাল এ স্কুলটি বঙ্গবন্ধুর নামেই হচ্ছে। এ জন্য কমিউনিটির নানাজন থেকে অর্থ সংগ্রহ করে মানুষের মাঝে আশার আলো দেখিয়েছেন। তাঁর যাবার বেলা বাণিজ্যিক ও বহুজাতিক সাংস্কৃতিক শহর দুবাইয়ে বাংলাদেশি স্কুল স্থাপনের জন্য নবগঠিত বাংলাদেশ সমিতি দুবাইকে দিয়ে সংগঠিত করেছেন কমিউনিটির মানুষকে। এমনকি স্কুলের জন্য দেশে গিয়েও তিনি সহায়তা করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। একজন দেশপ্রেমি নাগরিক বা সুনাগরিকের দেশের প্রতি মমত্ববোধ আর নিজ কর্তব্য কতো বিশাল হতে পারে ইকবাল হোসেন খানের কাছে তা শেখার আছে।

এছাড়াও অনেক সময় দালালের খপ্পরে পড়ে যেসব বাংলাদেশি মহিলা শ্রমিক আমিরাতে এসে খারাপ কাজ করতে বাধ্য করার পরিস্থিতি হয়েছে খবর পাবার পর রাত ৩/৪টাতেও কমিউনিটির লোকের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করে কনসুলেটে নিয়ে আসেন। আমাকে ফোন করে তাদের কষ্টকথা তুলে ধরে অন্যদের এ পথে নিরুৎসাহিত হবার তাগাদা দিতেন। আমিও সময়ে সময়ে এসব কাজ করে গেছি নিজের নৈতিক দায়িত্ব ভেবে। এরপর এদেরকে দেশে পাঠাতে বাংলাদেশ সমিতি শারজাহ, ফুজিরাহসহ নানাজনের সহায়তায় তা তিনি সমাধা করতেন। বিদায়ের ঘণ্টা বাজতেই নানাজন আন্তরিক স্মৃতি রোমন্থন করছেন। আবুধাবীস্থ দূতাবাসে মিনিস্টার আর দুবাইয়ে কনসাল জেনোরেল হিসেবে কেটে গেছে অর্ধযুগের বেশি সময় তাঁর। রেখে যাচ্ছেন আপন কর্মের দাগ। এবং আমাকে দেখোনো কনসুলেট আঙিনায় নিজের হাতে রোপন করা একটি গাছের চারা। আমরা আশা করি সে চারা ফল দেবার আগেই তিনি আবারো ফিরে আসবেন আমাদের মাঝে। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাই তিনি দুবাই না এসে অন্যকোন শহরে নাবিক হয়ে যান। সেখানেও ঘুমন্ত শহরে আলোর ফেরিঅলা হয়ে জাগাবেন আরো একটি কমিউনিটিকে। নিরন্তর শুভ কামনা হে আলোর ফেরিঅলা!

লেখক: একাত্তর টিভিতে কর্মরত। সম্পাদক-বায়ান্ন টিভি (আমিরাত সরকার অনুমোদিত প্রথম বাংলাদেশি টিভি)