সিলেটে কোয়ারেন্টিনের হোটেলে, বিয়ের আয়োজন প্রবাসীর

মাহবুব জয়নুল মাহবুব জয়নুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ২:০৮ অপরাহ্ণ, মার্চ ২৪, ২০২১ 632 views
শেয়ার করুন

 

যুক্তরাজ্য থেকে ১৮ মার্চ সিলেটে আসেন মা (৪৮) ও ছেলে (২৮)। সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী তাঁদের নগরের লামাবাজার এলাকার ‘লা ভিস্তা হোটেলে’ সাত দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। কিন্তু দুই দিন যেতে না যেতেই হোটেলের হলরুমে করা হয় অস্থায়ী প্যান্ডেল। সেখানে বিয়ে করেন প্রবাসী ওই তরুণ। আর এ অনুষ্ঠানে যোগ দেন প্রায় ৫০ জন অতিথি। বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভূরিভোজও হয় হোটেলের রেস্টুরেন্টে।

 

 

ওই তরুণের বাড়ি সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক উপজেলার জাঙ্গাইল এলাকায়। কনের বাড়ি সিলেট সদর উপজেলায়। হোটেলে কোয়ারেন্টিনে থাকার মধ্যেই বিয়ের অনুষ্ঠানের এই খবর গতকাল সোমবার বিকেলে জানাজানি হয়। এ ঘটনায় আজ মঙ্গলবার হোটেল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করেছেন। তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসনও।

 

 

জানতে চাইলে লা ভিস্তার চেয়ারম্যান ও সিলেট চেম্বারের সভাপতি আবু তাহের মোহাম্মদ শোয়েব প্রথম আলোকে বলেন, ‘তালিকাভুক্ত হোটেলে যাতে প্রবাসীদের কোয়ারেন্টাইন যথাযথভাবে হয়,সে দিকে আমরা সাংগঠনিকভাবে নজরদারি করছি।

 

এ অবস্থায় আমার হোটেলে এ ঘটনা কোনোভাবে মেনে নেওয়ার বিষয় নয়। তাই ব্যবস্থাপককে প্রত্যাহার করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করতে দেওয়া সব কর্মীকে কারণ দর্শানো নোটিশ দেওয়া হয়েছে।’

 

এদিকে প্রবাসীদের কোয়ারেন্টিন নজরদারির দায়িত্বে থাকা জেলা প্রশাসনের একটি দল ঘটনাটি তদন্ত করছে। সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) আ ন ম বদরুদ্দোজা প্রথম আলোকে বলেছেন, ‘প্রবাসীদের সাত দিনের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে থাকার কথা। এর মধ্যে বিয়ের ঘটনাটি জেনে আমরা তদন্ত করছি।’

হোটেল সূত্র জানায়, যুক্তরাজ্য থেকে ১৮ মার্চ সিলেটে আসা যাত্রীদের মধ্যে ১১ জনকে লা ভিস্তা হোটেলে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়। তাঁদের মধ্যে ওই মা–ছেলেও ছিলেন। তাঁরা হোটেলে উঠেই বিয়ের কেনাকাটাও করেন। তাঁরা হোটেল কর্তৃপক্ষকে জানান যে শুধু তাঁদের মধ্য থেকে এই অনুষ্ঠান হবে। বাইরে থেকে কেউ আসবে না। তবে ২০ মার্চ বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার সময় কনেপক্ষসহ আরও ৫০ জন অতিথি যোগ দেন। তবে কনে তাঁর বাড়িতেই ছিলেন। হোটেল থেকে লোক গিয়ে তাঁর স্বাক্ষর নিয়ে আসেন। ঘটনাটি প্রথম জানাজানি হয় বিয়েতে যোগ দেওয়া বাইরের অতিথিদের মাধ্যমে।

 

গতকাল সন্ধ্যার দিকে লা ভিস্তা হোটেলে গেলে কর্তৃপক্ষ বিয়ের তথ্য গোপনের চেষ্টা করেন। হোটেলে অভ্যর্থনার দায়িত্বে থাকা ব্যবস্থাপক তারেক আহমদ পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনাই হয়নি। এমনকি এসব কক্ষে কোনো প্রবাসীও অবস্থান করছেন না।

 

২২ মার্চ পর্যন্ত হোটেলের বুকিং খাতার দুটি তালিকা দেখিয়ে আর কোনো প্রবাসী অবস্থান করছেন না বলে জানান তিনি। পরে অন্য একটি সূত্র থেকে ১৮ মার্চ হোটেলে ১১ জনের তালিকা ও কক্ষ নম্বর নিয়ে দেখা গেছে ৪০১ এবং ৪০৬ নম্বর কক্ষে অবস্থান করা যুক্তরাজ্যপ্রবাসী মা-ছেলে। বিয়ের অনুষ্ঠান তাঁরাই করেছেন বলে অভ্যর্থনা ব্যবস্থাপককে জানালে পরে তিনি বিয়ের আনুষ্ঠানিকতার কথা অস্বীকার করে আকদ (বিবাহ রেজিস্ট্রি) হয়েছে বলে জানান। তাঁর দাবি, ‘মানবিক’ দিক বিবেচনায় সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাঁদের এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে।

 

 

অভ্যর্থনাকক্ষ থেকে এ ব্যাপারে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী বর ও তাঁর মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেও তাঁদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। বিয়েতে যোগ দেওয়া প্রবাসী পরিবারের ঘনিষ্ট একজনের (নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক) কাছে জানতে চাইলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের দিনক্ষণ ধার্য করা ছিল। এ জন্য ওই তারিখে আকদ পড়ানোর ব্যবস্থা করা হয়। আকদ পড়াতে গিয়ে সংক্ষেপে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা করা হয়। খানাপিনাও হয়েছে। কোয়ারেন্টিন শেষ হলে বর কনেকে নিয়ে যাবেন।