এই পরবাসে একজন ইমাম সাঈদের গল্প

প্রকাশিত: ৮:৩২ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৯, ২০২১ 730 views
শেয়ার করুন

 

আস সাঈদ মোহাম্মদ হাসান বিলাল মিশরের মানসুরিয়া সিটির দাকালিয়ার বাসিন্দা। আবুধবিতে মিনিস্ট্রি অফ ওয়াকাফ এর অধীনে একজন খতিব ও ইমাম।দীর্ঘ প্রায় আড়াই দশক ইমাম হিসেবে দায়িত্বরত রয়েছেন হাফেজ সাঈদ। ক্বারিদের ওস্তাদ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন মুশরিফের শেখ যায়েদ মসজিদ(বর্তমানের মারিয়াম মসজিদ) এর পেশ ইমাম থাকাকালে।ইমামদের পবিত্র কোরআন তালিম দেন তিনি।

গত বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি আমাদের পাড়ার আব্দুল্লাহ বিন মাজউন (রাঃ) মসজিদের পেশ ইমাম। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত আমাদের মসজিদটি আবুধাবির খালিফা স্ট্রীট এর মাশরেক ব্যাংকের পেছনে অবস্থিত এবং এটি সিটির ৪৪ নং মসজিদ। ঠিক যেদিন থেকে ইমামটি আমাদের মসজিদে এলেন সেদিন থেকেই যেন মসজিদটি আরো আলোকিত হয়ে উঠল। কি তার কেরাতের সুললিত ধ্বনি, মধুর বাচন, মানবিক মূল্যবোধ আর বিনয়ী আচরণ! সব আপনায় মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। এসেই খুব সহজে পুরো এলাকার মুসল্লীসহ নানা পেশার ও বয়সের মানুষের মন জয় করেছেন এই ইমাম । আরব প্রাচ্যে একজন ইমাম সম্মানিত জন।

গাম্ভীর্য ও আচরণ সবকিছু দিয়ে তিনি হন সবার কাছে অনুকরণীয় ও বরণীয়। আমাদের সাঈদ ইমাম যথেষ্ট গুরু গম্ভীর প্রকৃতির। একটি প্রখর ব্যক্তিত্ব ধরে রাখেন চেহারায়,চলনে,বলনে। ইমাম সাঈদ যখন বিশুদ্ধ ও সুললিত কন্ঠে কেরাত পড়েন নামাজে কিংবা জুমায় তখন তা নামাজকে করে আরো মহিমান্বিত। করোনা পীড়িত সময়ে নামাজে আসা মুসল্লিদের দেখভালের জন্য উদগ্রীব থাকেন ইমাম সারাক্ষণ।কেউ মাস্ক /জায়নামাজ আনতে ভুলে গেলে তাদের তা এগিয়ে দেয়া,মুসল্লীদের নিয়মিত খোঁজ খবর নেয়া,নামাজ শেষে কুশল বিনিময় করা তাঁর যেন রুটিন কাজ। একজন নুব্জ্যদেহী প্রবীণ আরব দীর্ঘদিন ধরে নিয়মিত এ মসজিদের মুসল্লি। এক সময় দেখা গেল তিনি মসজিদে আর আসছেন না ইমাম মহাফাঁপরে পড়ে গেলেন, কি হল তাঁর। আশেপাশের মুসল্লীদের কাছ থেকে খোঁজ নিয়ে তাঁর বাসায় লোক পাঠালেন।পাঠিয়ে জানতে পারলেন তাঁর ঠান্ডা লেগেছে,মসজিদের এসিতে তাঁর সমস্যা হয়,তাই নামাজের জন্য মসজিদে আসছেন না।

ইমাম জানালেন,আপনি আসুন,মসজিদের এসি চলবে না আজ থেকে।ঠিকই চললো না,আর এভাবেই ইমাম সবার হৃদয় করছেন জয়। আমাদের পাড়ার মসজিদটি সংস্কারের জন্য আমি ওয়াকাফে লিখেছি জেনে যারপরনাই খুশি হলেন ইমাম,বললেন মসজিদটা তো সবার।মসজিদের প্রতি সবার একটা টান থাকতে হবে। দূর্ভাগ্য হলেও সত্য যে আরবী ভালভাবে জানি না।তাই সাঈদ ইমামের কথাগুলো জানতে বন্ধু জমির হোসেনের আশ্রয় নিতে হল।কথা শেষ করে তাঁকে নিয়ে একটু চা খেতে চাইলাম,তিনি সাথে চললেন টি ট্র্যান্ড এ।বিষয়টি আমার কাছে কৌতুহলের ছিল।আমি দেখতে চাইছিলাম উনি আমাদের সাথে টি-শপে বসে চা খান কিনা।কারণ আমার আড়াই দশকের প্রবাস জীবনে একটা বার কোন ইমামকে চা এর দোকানে বসতে দেখিনি।তবে ভাবছিলাম বয়সে তরুণ বলে হয়তো তিনি বসতেও পারেন।

কিন্তু না,তিনি দোকানীকে বললেন, আমাদের চাগুলো মসজিদে যেন পৌঁছে দেয়া হয়।এখানেও মুগ্ধ হলাম। সৌম্য কান্তির হাসিখুশি চেহারার দ্বীনি আমলে সমৃদ্ধ এই মানুষটিকে প্রায়ই দেখবেন মাগরিবের নামাজের পর থেকে এশার আগ পর্যন্ত মসজিদের বাইরে বাঁ কর্ণারে একা বসে হয় কোরআন তেলওয়াত করছেন না হয় দর্শনার্থীদের কাউকে দ্বীনের দীক্ষা দিচ্ছেন।এরপর এশার নামাজ পড়িয়ে তিনি ঘরে ফেরেন।এ সময়ে কি যে মন চায় ভাল লাগার এই আলোকিত মানুষটির কাছে বসি,আলোর ছোঁয়া নিই,কিন্তু আরবি জ্ঞান সীমিত হওয়ায় দুএকটা কথা বলেই বিদেয় নিই।কারণ ইমাম সাঈদ ইংরেজী খুব সামান্যই জানেন।