সিলেটে রায়হান হত্যার বিচারে কোন অশুভ ছায়ায় শিকারী দুটি হাত 

প্রকাশিত: ৫:১৪ পূর্বাহ্ণ, অক্টোবর ২৬, ২০২০ 700 views
শেয়ার করুন

 

সিলেটে স্বামীকে বেঁধে স্ত্রীকে অমানুষিক ভাবে নির্যাতনের পর একজন মানুষ ছাড়া গোটা সিলেটে আর কারো তেমন একটা মথা ধরেছিলো বলে কোনো ধরণের ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি।কিংবা তা প্রকাশ ও পায়নি কোনো কারণে অকারণে।

সত্যি বলতে কি একেবারেই যে মাথা ধরেনি সেটি বললে হয়তো ভুল হতে পারে।অনেকেরই ধরেছিলো।যাদের ঘরে চোখে পড়ার মতন মেয়ে আছে বোন আছে।যাদের মাকে নিত্য প্রয়োজনে প্রতিনিয়তই বাহিরে যেতে হয়।আরো ধরে ছিলো যাদের ঘরে টুকটুকে লাল বধু আছে তাদের।তবে সবচেয়ে যাদের বেশী ধরেছিল তারা ছিলেন অসহায়,ক্ষমতাহীন মধ্যবিত্ত এবং গরিব মায়েরা।তারা নিরবেই শুধু কেঁদেছেন।
কথায় আছে অবলা জীব আর অবলা নারী।
জীব কথা বলতে পারে না। জীবন আছে বিধায় বেঁচে থাকে।আর অবলা নারী, তাদের অনেক কিছুই বলার থাকে কিন্তু বলতে পারেনা।শুধু প্রাণ আর বোধবুদ্ধি আছে বিধায়ই তারা সমাজে অন্য রখম একটু প্রাধান্য পায়।

তখন অনেকেই শুধু শাহজালালের পূণ্য ভূমি আর ধর্মের দোহাই দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে, বক্তব্য দিয়েই মনে করেছিলেন এটুকুতেই কামাল হয়ে গেছে।

আসলে আমি যে প্রসঙ্গ ধরে পথ পাড়ি দিতে চাইছি তা হচ্ছে পশু,লুটেরা,লাঠিয়াল,শন্ডা (পুলিশ) বাহিনীর হাতে খুন হওয়া রায়হানের বিচার চেয়ে যে আন্দোলন চলছে তার প্রসঙ্গে।

রায়হানের মৃত্যুতে সিলেট জুড়ে গোল্লাছুট খেলাটি শুরু হয়েছে সেদিন থেকে। ঠিক যেদিন রায়হানের প্রাণ কেড়ে নিয়েছিলো হায়েনার দল। হায়নাদের বাঁচাতে, সর্বোপরি নিজেদের বাঁচাতে গিয়ে রাজনৈতিক নেতারা এই খেলা শুরু করেন।

সিলেট তথা সারা বাংলার মানুষের প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অভিমানে পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার পর তার মা ও বোনদের কান্নার শব্দ বাতাসে ভেসেছিলো গোটা বিশ্বাকাশ জুড়ে।তাই দেখে সেদিন অনেকেই অনেক ভাবে কেঁদে উঠে ছিলেন।
সেই বিবেকবান লোকেরা উঠে এসেছিলেন বিধায় আজ নুয়েপড়া পরিবারটির পেছনে অনেক লোকের সমাগম।তবে কষ্ট হয় সেখানে, যখন দেখি দালাল চক্রের উড়ু উড়ু ভাব।

সিলেটে আন্দোলনরত জনতা সহ রায়হানের মা ৭২ ঘন্টার যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন তা শেষ হয়ে গেলে ঐ আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ নতুন করে আরো কর্মসূচী গ্রহণ করেছেন। যদিওবা ৭২ ঘন্টার দেয়া কর্মসূচী কোন কাজে আসেনি।তবোও সাধারণ জনতা এক বুক আশা নিয়ে এখনো পথেই আছেন।
উচ্ছলিত এই জনতার ধৈর্যের বাঁধ ভাঙ্গে, যদি একবার ফুসেুউঠেন, যদি জালাও পোড়াও,মার ধর শুরু করেন তবে কি হবে।কিংবা হতে পারে একবার ভেবে দেখন।

বাংলাদেশে নারী শিশু সহ অসংখ্য লোক কোন না কোন ভাবে প্রতিনিয়তই শত্রুর হাতে প্রাণ হারাচ্ছেন।এমন হাজারো ঘটনা ঘটেছে যা মনে হলে আজো গায়ের লোম শিউরে ওঠে।আজ থেকে প্রায় দুই যোগ আগে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগান এলাকায় এক মহিলাকে হত্যা করে চা বাগান ঘেষা রাস্তার পাশে লাশ ফেলে রাখে দূর্বৃত্তরা। লাশের পাশে একটি জীবিত শিশুকেও ফেলে যায়।শিশুটি ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে মৃত মায়ের বুকে আঁচড়াচ্ছিল দুধ খাবার জন্য।
এইতো ১৫ অক্টোবর ২০।সাতক্ষীরায় মা বাবা ভাই বোন এই ৪ জনকে গলা কেটে হত্যাকরে ঘরের ভেতরে ফেলে রাখে দূর্বৃত্তরা।শুধু মায়ের লাশের পাশে জীবিত পড়ে ছিল ছয় মাস বয়সি মারিয়া সুলতানা। পুলিশ নাকি সে ঘটনার কোনো ক্লো খুজে পাচ্ছেনা।

আলোচিত সাংবাদিক যুগল,সাগর সারওয়ার এবং মেহরুন রুনি হত্যার পর আজ পর্যন্ত মামলার কোনো তদন্ত প্রতিবেদন তৈরী হয়নি।এ নিয়ে মোট ৭৪রে পৌছালো তদন্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার ব্যার্থতা।
এ হত্যাকান্ড সংঘটিত হওয়ার পর বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পরলোকগমিত এডভোকেট সাহারা খাতুন বলেছিলেন ৪৮ ঘন্টার ভেতরে ঐ খুনিদের খুজে বের করবেন।
পরে তিনি আবার সেই বক্তব্য বিন্ন ভাবে দিয়েছিলেন বলে দাবী করেছিলেন।

সাগর রুনি হত্যা কান্ড সম্পর্কে এক বক্তব্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন সরকারের পক্ষে কারো বেডরুম পাহারা দেয়া সম্ভব নয়।এর পরে গণভবনে আরেক বক্তব্যে তিনি বলে ছিলেন আজ সাগর রুনি হত্যার পর সকল সাংবাদিক এক হয়েছেন।খুলনায় পৃথক দুটি বোমা হামলায় নিহত সাংবাদিক মানিক সাহা ও সাংবাদিক হুমায়ুন কবির বালু হত্যার পর কেনো এভাবে এক হলেন না।তখন হলে হয়তো আজ এমনটা ঘটতনা।

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের বিপরীতে একটি কথা বলে রাখা জরুরী। সরকার তার জনগণের সকল প্রকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে এটাই নিয়ম।
একটি দেশের রাজনৈতিক নেতারা সহ সরকারী বেতনভোগী কর্মকর্তা কর্মচারীগণ যে বেতন ভাতা পায়ে থাকেন,গাড়ি বাড়ি সহ নানা রখম সুবিধাদি ভোগ করে থাকেন তা বাংলাদেশ সরকারের বাবার ভান্ডারের সম্পদ নয়।সেসব বাংলাদেশের জনগণের সম্পদ।জনগণের পৈত্রিক সম্পদ।দেশের সম্পদ।দেশে যে সরকারই আসুক না কেন সেই সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী এমপি সহ তাদের ব্যাক্তিগত অফিস সহকারী গাড়ি চালক,বাজার খরচকারী এবং গৃহকর্মীর বেতন ভাতা পর্যন্ত ঐ জনগণের টাকায় চলে।বিদেশে যারা পড়তে যান,সরকারী ভাবে বিদেশে চিকিৎসা করাতে যান তার আর্থিক যোগান নিশ্চিত হয় সেই জনগণের গায়ের চামড়া পুড়ানো শ্রমে অর্জিত টাকায়।
আমার কথা হচ্ছে সেখানে।যদি জনগণ এসবের যোগান দিয়ে থাকেন তবে তো সেই সকল মানুষ গুলো জনগণেরই গোলাম।সে দিক বিবেচনায় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া বক্তব্য ছিলো একটা অবোধ বালিকার বাঁচালিপনার সমান।
প্রধানমন্ত্রী সহ সেই সকলকেই বাংলাদেশের জনগণের শুধু বেডরুমই নয় তাদের সকল কাজ করে দেওয়া বাধ্যতা মূলক।এমনকি তারা যদি বলেন তাদের মুজা ও জুতা পর্যন্ত পরিষ্কার করে দিতে বাধ্য।

পরবর্তীসময়ে,দীর্ঘ ছয় বছর পর সাগর রুনির মৃত্যু বার্ষিকী তে মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাহেবকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেছিলেন তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে।তিনি জবাব দিতে বাধ্য নন।এমন ভাবমূর্তি দেখিয়ে পরে বলেছিলেন, No, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো ব্যার্থতা নেই।হাইকোর্টের দিক নির্দেশনায় রেব বাহিনী ডি এনএ নিয়ে কাজ করছেন। তারা শীঘ্রই একটা ঈ/ই দিতে পারবেন। সাংবাদিকদের আবার প্রশ্ন করা উচিৎ ছিল যে এই ঈ/ই টা আসলে কি?

২০১৬ সালে সাংবাদিকদের উপরে নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মাননীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামছুল হক টুকু বলেছিলেন, সাংবাদিকদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে সাংবাদিকতা করার উচিত।

জামায়াত বিএনপি শাসনামলে ২০০৪ সালের ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলার পর ২০০৫ সালের ১১ জানুয়ারী বেগম খালেদাজিয়া ও তার সরকার জাতিয় সংসদে বলেছিলেন,এই হামলা আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরিন কোন্দলের ফল।তবে চিন্তার কারণ নেই।আমরা ঘটনার মূল আসামি জজ মিয়াকে ধরে এনেছি। জজ মিয়াই কি আসলে সেই কান্ডঘটক ছিল?

খুলনায় জামায়াত বিএনপি আমলে বোমা হামলায় নিহত সাংবাদিক মানিক সাহা ও হুমায়ূন কবির বালুকে হত্যা পরবর্তী দীর্ঘদিন পর মানিক সাহার হত্যা মামলার গোজামিল বিচার হলেও বালু হত্যার বিচারের রায় ছিলো অদ্ভুত।ঐ মামলার ৭ আসামির সকলেই বেকসুর খালাস পেয়ে ছিলো।

এমন অদ্ভুত সরকার প্রধান, এমপি, মন্ত্রী যে দেশের হয়।সে দেশের বিচার ব্যবস্থা ও তেমনি অদ্ভুত হওয়াই স্বাভাবিক।

আমার উল্লেখিত প্রসঙ্গ ছিল সিলেটে রায়হান হত্যার বিচারের দাবিতে ৭২ ঘটনার কর্মসূচি পালন শেষে নতুন করে আরো কর্মসূচি পালনের ডাক কতটা ফলপ্রসূ হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন সাহেব সেদিন সিলেটে এসেছিলেন শুধু রায়হানের মায়ের সাথে দেখা করার জন্য।তিনি তার বক্তব্যে বলেছেন,যদি কেউ আকবরের কোনো তথ্য কিংবা দেখে থাকেন তবে যেনো পুলিশকে খবর দেন।তিনি আরো বলেছেন এই করোনা কালে সবাই একসাথে যেনো জড়ো ন হোন।মোমেন বলেন এই বিচার নিয়ে কারা যেনো ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে চাইছেন।এই আন্দোলনের সবকয়টি মিছিল মিটিংএ আওয়ামীদের ছবিই সামনের সারিতে দেখা গেছে।জনাব মোমেন সাহেবের কথা মতে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারী অশুভ সেই হাতটি কি তাহলে আওয়ামী অশুভদের।
যেখানে ৭২ ঘন্টায় কারো কানে চুলকানি দেয়া সম্ভব হয়নি,সেখানে নতুন করে কর্মসূচির অংশ মসজিদে দোয়া আর মন্দির,গীর্জায় প্রার্থনা প্রেম দেবতার পূজা করার সমান নয় কি?

এ বিচার যে আদৌ হবে তার কি কোনো নিশ্চয়তা আছে।হতে পারে একটি লোক দেখানো অনুষ্টানের আয়োজন।এ বিচার না ওতো হতে পারে।তব সেটা না হওয়ার পাল্লই ভারি।
এ বিচার না হতে পারে বলছি যে কারণে।সে কারণটি হলো আকবর পুলিশের লোক।পুলিশ রাজনৈতিক নেতাদের লোক।নেতারা সরকারের লোক।
রায়হান হত্যায় সিলেটের ডি সি,এসপি,ওসি,এস আই সহ সকল ক্ষমতাবান নেতারা জড়িত।আকবরকে ধরে এনে যদি সঠিক বিচার করা হয় তবে উনারা ফেসে যেতে পারেন।তাই তারা তাদের মত করেই বিচার কাজটা সম্পাদন করবেন।
এ বিচার জনতার আদালতে হতে পারলে ভালো একটি সুফল আসতো।
এমন তেল মারা প্রেম দেবতার পূজা যদি কারো চাপে না হয় তবে এক দফা এক দাবি কর্মসূচি দিয়ে সামনে যেতে হবে। যা বলেছে রায়হানের বোন।খুনের বদলে খুন।আর রক্তের বদলে রক্ত।তবেই হবে জয়।তবেই হবে বিচার।
জয় হোক প্রগতির জয় হোক সিলেটের।।

শামসুর সুমেল
সাংবাদিক।
সাংস্কৃতি কর্মী।
email :shamsursumel@yahoo. com
25/10/20