হবিগঞ্জে এমপির ত্রাণ বিতরণের সমালোচনা করায় ছাত্রলীগ নেতা গ্রেপ্তার

নুর উদ্দিন সুমন নুর উদ্দিন সুমন

হবিগঞ্জ জেলা সংবাদদাতা

প্রকাশিত: ১:৩২ পূর্বাহ্ণ, মে ৯, ২০২০ 560 views
শেয়ার করুন

হবিগঞ্জ জেলার হবিগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজীর) এমপির ত্রাণ বিতরণ নিয়ে ফেসবুকে সমালোচনা করায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ৭ মে ওই নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গিয়াসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি করেন হবিগঞ্জ এমপির কম্পিউটার অপারেটর অলিউর রহমান ইমরান। এতে আরও আসামি করা হয় জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন ও উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লা রুহেলকে।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে হবিগঞ্জ ও বাহুবল উপজেলার জনগণও নানা সংকটে পড়েছেন। এ অবস্থায় আসনটির এমপি গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ (মিলাদ গাজী) নিজে ফেসবুকে একটি পোস্ট করেন। পোস্টে এমপি লেখেন, ‘নবীগঞ্জ-বাহুবল উপজেলার মধ্যবিত্ত যে সকল পরিবার খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে আছেন, অথচ লোকলজ্জার কারণে কারও কাছে কোনো সহযোগিতা চাইতে পারছেন না-তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, আমার সাথে (এমপি মিলাদ) যোগাযোগ বা ফোন করলে অতি গোপনে আপনার বাসা, বাড়িতে সহযোগিতা পৌঁছে যাবে।

এমপির ফেসবুক পোস্ট দেখে অনেকেই তার দেওয়া নম্বরে কল করে অসহায়ত্বের কথা জানান। ওই নম্বর থেকে সাহায্য কামনাকারীদের বলা হয়, ‘অপেক্ষা করুন, রাতেই বাড়িতে পৌঁছে যাবে ত্রাণ।

এমপি মিলাদ গাজীর পিএস (মিডিয়া) মাহিবুর নিজেও ফোনে বিভিন্নজনকে রাতের মধ্যে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। কিন্তু সকাল হয়ে গেলেও অসহায় জনগণের বাড়িতে ত্রাণ পৌঁছেনি।

গত ১ মে রাত ১০টার দিকে এমপির ফেসবুক থেকে দেওয়া পোস্টটি শেয়ার করে একটি পোস্ট দেন জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘রাতে ত্রাণ নিয়ে রওনা দেওয়ার কথা বলে সকালেও পৌঁছেনি। দয়া করে নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন। কল করুন খাবার পৌঁছে দিব বাড়িতে-এসব ভাওতাবাজি বন্ধ করুন। অসহায় হতদরিদ্রদের নিয়ে আর খেলা করবেন না, দয়া করে এসব বন্ধ করুন। তার পোস্টের কমেন্ট বক্সে জেলা উপজেলার অনেকেই বিভিন্ন মন্তব্য করেন। গত ৩ মে বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকে পোস্ট করেন নবীগঞ্জ উপজেলার ছাত্রলীগ নেতা গিয়াস উদ্দিন মামুন। তার পোস্টের কমেন্টেও নানা ধরনের মন্তব্য করে এলাকার লোকজন।

জাকির ও গিয়াসের পোস্ট দুটি শেয়ার করেন উপজেলা সেচ্ছাসেবক লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুল্লা রুহেল। এতে হবিগঞ্জ-১ আসনের এমপি মিলাদ গাজীকে নিয়ে সমালোচনা শুরু হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার জকির ও গিয়াসের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮’র ২৫(২)/২৯(১)/৩১(২)/৩৫ দ. বি. ধারায় মামলা দায়ের করেন এমপি মিলাদ গাজীর কম্পিউটার অপারেটর অলিউর রহমান ইমরান। সেদিনই গিয়াসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এ বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক জাকির হোসেন বলেন, ‘লোকজন ত্রাণ না পেয়ে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমি এমপির সঙ্গে কথা বলে তার পিএস মাহবুরের সঙ্গে অসহায় লোকদের কথা বলতে বলি। তিনি গভীর রাত পর্যন্ত ওই লোকগুলোকে অপেক্ষা করিয়ে রাখে। সকাল হলেও তাদের ঘরে ত্রাণ পোঁছানি। জনগণ ক্ষোভ প্রকাশ করলে বিষয়টি আমি ফেসবুকে তুলে ধরি।

এ বিষয়ে এমপি মিলাদ গাজী বলেন, ‘আমি শুনেছি একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটা আইনের ব্যাপার। আইনের লোকজন এটা দেখবে। আমি মাঠে কাজ করছি। শরীরের অবস্থা তেমন ভালো না। এই অবস্থায় আমার বিরুদ্ধে কেন এসব রটানো হচ্ছে জানা নেই। তবে ত্রাণ নিয়ে কাজ করছি, সবাই ত্রাণ পাবে।

নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমান জানান, ছাত্রলীগের দুজন ও সেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার বিরুদ্ধে ফেসবুকে মিথ্যা স্ট্যাটাস দেওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গিয়াস নামের ছাত্রলীগের নেতা গ্রেপ্তার হন। বাকী আসামীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।