বাংলাদেশের প্রবাসি পরিবার মহামারিতে ভোগবে: জাতিসংঘ

লুৎফুর রহমান লুৎফুর রহমান

সম্পাদক ও সিইও, বায়ান্ন টিভি

প্রকাশিত: ৮:৩৯ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৮, ২০২০ 782 views
শেয়ার করুন

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে ব্যবসায়–বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটেছে। এতে চাকরি হারিয়েছে অনেক অভিবাসী শ্রমিক। তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর এর ফলে নিজ দেশে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে গেছে ব্যাপকহারে। এ অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাবাসী আয় নির্ভর দরিদ্র পরিবারগুলো ভুগবে। আর এসব দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ।

 

করোনাভাইরাসের কারণে লকডাউনে ব্যবসায়–বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটেছে। এতে চাকরি হারিয়েছে অনেক অভিবাসী শ্রমিক। তাদের অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। আর এর ফলে নিজ দেশে তাদের পাঠানো রেমিট্যান্সের পরিমাণও কমে গেছে ব্যাপকহারে। এ অবস্থায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রাবাসী আয় নির্ভর দরিদ্র পরিবারগুলো ভুগবে। আর এসব দেশের মধ্যে আছে বাংলাদেশ।

জাতিসংঘের ‘দ্য স্টেট অব ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড নিউট্রেশন ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’ (খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি বিষয়ক) শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল সোমবার বৈশ্বিকভাবে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের আরও যেসব দেশের প্রবাসী শ্রমিকদের দরিদ্র পরিবাগুলো এ মহামারীতে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার মধ্যে আছে ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, কেনিয়া, নেপাল, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া ও তাজাকিস্তান। এর পাশাপাশি আরও অনেক দেশে এর প্রভাব পড়বে বলেও জানানে হয় প্রতিবেদনে। এটি মূলত তৈরি করে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তবে এর সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও), বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফাপি), জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) এবং আন্তর্জঅতিক কৃষি উন্নয়ন তহবিল (ইফাদ) আছে।

এবারের প্রতিবেদনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বিশ্বের ক্ষুদ্র দারিদ্র পরিস্থিতির অবনতির চিত্র তলে ধরা হয় এ প্রতিবেদনে। বলা হয়, করোন ভাইরাস মহামারী বছরের শেষ নাগাদ আরও ১৩ কোটি ২০ লাখ মানুষকে ক্ষুধার দিকে ঠেলে দিতে পারে। দেশের মানুষের জন্য পুষ্টিকর ও স্বাস্থ্যসম্মত খাবারে র ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সরকারকে নীতি গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছর অন্তত ২০০ কোটি মানুষ খাদ্য নিরাপত্তার অভাবে ভুগেছে। এর মধ্যে ৭৪ কোটির বেশি মানুষের খাদ্যাভাব ছিল প্রকট। তবে এখন পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। আর এর ফলে ২০৩০ সালের মধ্যে জাতিসংঘ বিশ্বকে ক্ষুধামুক্ত করতে যে লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল তা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে।
জাতিসংঘের এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বেশির ভাগ দরিদ্র মানুষ পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যকর খাবারের ব্যবস্থা করতে পারবে না।
প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছে যে, বিশ্বে খাদ্যের সংকট নেই। কিন্তু লক্ষ লক্ষ মানুষের এই খাদ্য পাওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকছে। এর কারণ হলো করোনার কারণে বিভিন্ন দেশের সীমান্ত বন্ধ হয়ে গেছে, বাজার বন্ধ হয়ে গেছে, সরবরা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। আবার সেই সঙ্গে ব্যবসায়–বাণিজ্যতেও মন্দা।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, করোনার কারণে সবজি, ফল, মাছ , মাংশ ও ডেয়ারি সামগ্রী নষ্ট হয়েছে অনেক। আবার চলাচল বন্ধ থাকায় শ্রমিকেরও সংকট দেখা দিয়েছে। তাই একদিকে উৎপাদন এবং পাশাপাশি সরবরাহ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
বিভিন্ন দেশের খাদ্য নিরাপত্তার বেশ কিছু সূচক তুলে ধরে এক যুগের বেশি সময়ের ব্যবধানে তুলনামূলক ছকও তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। তবে এসব উপাত্ত সর্বশেষ নেওয়া হয়েছে ২০১৯ সালে। করোনা পরিস্থিতি এক্ষেত্রে বিবেচিত হয়নি। এতে দেখা যায়, ২০১৪ থেকে ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৩ দশমিক ৩ মানুষ চরম খাদ্য নিরাপত্তার সংকটে ভুগত। ২০১৭–১৯ সালে এসে এর পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৬। এই সূচকে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অগ্রগতিই ছিল বেশি।
তবে করোনার অভিঘাত বাংলাদেশের দারিদ্র পরিস্থিতিকে বাড়িয়ে তুলবে বলে দেশের একাধিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সতর্ক করে দিয়েছে।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) এবং ব্রাক ইনস্টিটিউট অব গর্ভনেন্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
(বিআইজিডি) গত মে মাসে এক গবেষণায় বলেছে, করোনার কারণে দরিদ্র মানুষের মধ্যে যাঁরা গ্রামে আছেন, তাঁদের ৬৭ শতাংশের নগদ ও ৭০ শতাংশের খাদ্য সহায়তা দরকার। আর শহরের বস্তিবাসীর ৭০ শতাংশের নগদ ও ৭৮ শতাংশের খাদ্য সহায়তা দরকার।
গবেষণায় আরও বলা হয়েছে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে অতি গরিব, গরিব, গরিব হয়ে যাওয়ার ঝুঁকির মধ্যে থাকা মানুষ এবং গরিব নয় এমন মানুষের আয় দৈনিক আয় ৬৫ থেকে ৭৫ শতাংশ কমেছে।