চট্টগ্রামের পটিয়া হাসপাতালে করোনার উপসর্গ নিয়ে বাড়ছে রোগীর সংখ্যা

কাউছার আলম কাউছার আলম

পটিয়া, দক্ষিণ চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ২:২৫ অপরাহ্ণ, জুন ১১, ২০২০ 848 views
শেয়ার করুন

চট্টগ্রামের পটিয়ায় সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গত ১০ জুন পর্যন্ত ২০৯ জন। এর মধ্যে পৌরসদরে আক্রান্তের সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি।

অবশ্য এখন নমুনাও সংগ্রহ করা হচ্ছে বেশি। বর্তমানে চট্টগ্রামের নির্ধারিত হাসপাতালের পাশাপাশি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতেও কোভিড-১৯ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

পটিয়া হাসপাতালে হাসপাতালেই নমুনা দিতে আসা রোগীদের ভিড় সবচেয়ে বেশি। রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় নমুনা সংগ্রহকারীদেরকে। তবে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় সংক্রমণ ঝুঁকিও বাড়ছে বলে মনে করছেন অনেকে।

সচেতন না হলে হাসপাতালে আগত অন্যরাও নমুনা দিতে আসা রোগীদের সংস্পর্শে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ২ এপ্রিল হতে স্বাস্থ্যকর্মীরা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ি-বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতেন। কিন্তু বৃহৎ আকারে করোনাভাইরাসের বিস্তার ছড়িয়ে পড়ায় এখন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সপ্তাহের প্রতি শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার হাসপাতালের ১১০ নং রুমের ফ্লু কর্ণারে আগত রোগীদের রোগের ধরনের উপর ভিত্তি করে চিকিৎসকদের নির্দেশনায় নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট পর্যায়ক্রমে দায়িত্ব পালন করেন নমুনা সংগ্রহে। ইতোমধ্য একজন টেকনোলজিস্টের শরীরে করোনা পজিটিভ হওয়ায় তিনি হোম আইসোলেশনে আছেন। এ অবস্থায় একজকে দিয়ে নমুনা সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে কোন ধরনের নিদ্রিষ্ট বুথ না থাকাতে হাসপাতালের বাইরের খোলা আকাশের নীচে বিক্ষিপ্ত ভাবে নমুনা সংগ্রহ করতে দেখা গেছে।
তবে গতকার বুধবার আরো একজন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট সাজু বড়ুয়া শারীরিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ায় গতকাল (১০ জুন) একদিন নমুনা সংগ্রহ বন্ধ ছিল।
প্রথম দিকে রোগীদের চাপ কিছুটা কম থাকলেও এখন চাপ বেড়েছে অনেক। প্রতিদিন ২০ জনের নমুনা সংগ্রহের টার্গেট থাকলেও, সংগ্রহ করা হচ্ছে আরও বেশি। ৯ জুন পর্যন্ত পটিয়া হাসপাতালে ৬৩৬ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

তবে পজিটিভ রোগীদের চেয়ে নেগেটিভ রোগীরাই নমুনা দিতে এসে বেশি ভিড় জমাচ্ছেন হাসপাতালে। জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে চলে আসছেন নমুনা দিতে।

সামাজিক দূরত্বের কোনো বালাই নেই নমুনা সংগ্রহের খোলা আকাশের নীচের স্হানে। অনেকটা জটলা বেধেই নমুনা দেওয়ার জন্য অবস্থান করেন রোগীরা। এর ফলে নমুনা দিতে আসা আক্রান্ত রোগীদের সংস্পর্শে এসে সুস্থরাও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। পাশাপাশি হাসপাতালে আগত অন্যরাও করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়েছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নমুনা দিতে আসা কয়েকজন রোগী জানান, করোনার উপসর্গ না থাকলেও অনেকের রিপোর্ট এখন পজিটিভ আসছে। এর ফলে সবার মাঝে এক প্রকার ভয় কাজ করছে। সেজন্য জ্বর-সর্দি হলেই ভয়ে নমুনা দিচ্ছেন তারা। কিন্তু নমুনা দিতে এসে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে জেনেও, সামাজিক দূরত্ব মানছেন না অনেকে।

পটিয়া হাসপাতালের প্যাথলজি বিভাগের টেকনোলজিস্ট দেবাশীষ বড়ুয়া সাজু জানান , নমুনা দেওয়ার জন্য আমরা রোগীদের নির্দিষ্ট সময় বলে দেই- যেন তারা আগে এসে ভিড় না জমান। কিন্তু ভোরে ভোরে রোগীরা হাসপাতালে নমুনা দিতে এসে সামাজিক দূরত্ব না মানায় পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে নেগেটিভ ব্যক্তিরাও পজিটিভ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন। আমরা রোগীদেরকে প্রতিনিয়ত বলছি সামাজিক দূরত্ব মেনে নমুনা দেওয়ার জন্য। কেউ শুনছেন, আবার কেউ শুনছেন না।

এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. রাজিব দে জানান, আমরা রোগীদের প্রতিনিয়ত সচেতন হতে বলছি। নমুনা দিতে এসে রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখেন, সেজন্য আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপসর্গ না থাকলে অযথা কেউ যেন নমুনা দিতে ভিড় না জমান- সেজন্য মাইকিংও করছি। তবুও মানুষ সচেতন হচ্ছে না।

তিনি আরো জানান, প্রতিদিন যে হারে রোগীরা এসে ভীড় করছে নমুনা দেয়ার জন্য সে হারে আমরা নমুনা সংগ্রহ করতে পারছি না। কারন বিআইটিআইডি হতে বলা হয়েছে প্রতিদিন যেন ২০ টির বেশি নমুনা না আনা হয়। গতকাল আমি ৫৫ টি নমুনা সংগ্রহ করে পাঠিয়েছি বিআইটিআইডিতে কিন্ত তারা এত নমুনা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেন, এরপর আমি মৌখিক ভাবে কমিটমেন্ট দিয়ে যাতে এরপর হতে আর বিশটির বেশি নমুনা না পাঠায়।

ডাক্তার রাজিব দে জানান, বিআইটিআইডি হতে নির্দেশনা আছে হাসপাতালে আগত রোগীদের হতে ১৫ টি নমুনা সংগ্রহ করতে। ২০ টির মধ্যে বাকি ৫ টি নমুনা আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি রোগীদের জন্য সংরক্ষিত রাখতে। তার মধ্যে আছে পূর্বের পজিটিভ হওয়া রোগীর নমুনা ও। আবার অনেক রোগীর ২য় ৩য় বার ও পজিটিভ আসে। নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি বুথ তৈরীর কাজ শেষ পর্যায়ে ও বলে জানান তিনি।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. শেখ ফজলে রাব্বি বলেন, আমরা সবাইকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য বলেছি। সবাই যেন স্বাস্থ্য বিধি এবং সামাজিক দূরত্ব মেনে চলেন সেটিও প্রচার করছি। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরাও মানুষকে সচেতন করছে। নমুনা সংগ্রহকারি দায়িত্বরত কর্মীদের নিজেদের নিরাপদ থাকার পাশাপাশি রোগীরা যেন সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে নমুনা দেন সে বিষয়েও সচেতন করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চট্টগ্রামের করোনার ল্যাব গুলোতে নমুনার জট পড়ে গেছে। যার কারনে রির্পোট দিতে সময় ক্ষেপন হচ্ছে। আমরা গতকাল(১০ জুন) ঢাকার বিভিন্ন করোনার পরীক্ষাগারে তিন হাজার নমুনা পাঠানো হচ্ছে। এতে করে চট্টগ্রামে নমুনার জট আর থাকবে না। পাশাপাশি করোনা ভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে রোগীদের ও নমুনা সংগ্রহ করে উপজেলা পর্যায় হতে দ্রুত সময়ের মধ্যে ল্যাব গুলো রির্পোট দিতে পারবেন বলে আশা করছি।