লকডাউনের বিয়ে

প্রকাশিত: ১১:৫২ পূর্বাহ্ণ, জুন ১১, ২০২০ 541 views
শেয়ার করুন

কোত্থেকে দৌড়ে আসলো মুতালেব, এসেই তুহিনকে বলল— আপনি এখানে বইসা আছেন ভাই?
তুহিন ঘাড়টা ফিরিয়ে বলল— তো, বসে থাকবো না তো কি নাচব? কই নাচব বলে দে? ফাজিল একটা। যা এখান থেকে।

মুতালেব যায় না। দাঁড়িয়ে রয়। এভাবে পাঁচ মিনিট যায়। তারপর বিড়বিড় করে কি যেন বলে। তুহিন শুনতে পায় মুতালেব কিছু বলছে কিন্তু বোঝা যাচ্ছে না।
তুহিন ধমক দেয়— ওই মুতালেব, কি হইছে তোর? কো তো শুনি? কখন থাইকা বিড়বিড় করতেছোস। কি হইছে?
মুতালেব আটকে যায়। বলতে গিয়ে থেমে যায়। তারপর আবার শুরু করে— ভাই, বিয়ে…
তুহিন ধমক দেয়— কীসের বিয়ে? কি বলতেছোস? ভালো কইরা বল। নইলে বিদায় হো।

মুতালেব একহাত পিছু সরে তারপর— ভাই, দুই তলায় যে ভাবি থাকে, উনার বিয়ে।
তুহিন দু পা এগিয়ে থাপ্পড় কষে মুতালেবের গালে— এই মুতালেব, কি হইছে তোর কো তো? দুই তলার ভাবির বিয়ে মানে কি? বিয়ে হয়েছে ভাইয়ের সাথে তাই তো ভাবি।
মুতালেব গাল হাতায়। কান্নাকাটি করে। বাচ্চাদের মত কাঁদতে থাকে।
কাঁদতে কাঁদতে বলে— ভাই, পাড়ার সামনের দুই তলা বিল্ডিংয়ের যে ভাড়াটিয়া মনির সাহেব।
উনার বড় মেয়ে। যাকে আমরা ভাবি ডাকি। আপনিই তো বলে দিছেন ভাবি ডাকতে।

তুহিন মুতালেবের চোখ মুছে দিয়ে— আচ্ছা, বল। কি হইছে? রিনি। ও তোর রিনি ভাবি। ওর কি হইছে?
মুতালেব আরও দু পা সরে দাঁড়ায়। কতক্ষণ চুপচাপ থাকে তারপর বলে— ভাই, রিনি ভাবির বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। বরপক্ষ একটা কার নিয়ে এসেছে। লকডাউন চলতেছে তো তাই একটা কারেই চারপাঁচজন আসছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ড্রাইভাররে, ভাই আপনারা কেন আসছেন?
ড্রাইভার বলল… হেহে।
তুহিন কাছে আসে। মুতালেবের গাল হাতিয়ে দেয়। আঙুলের দাগ বসে গেছে।
তারপর তুহিন জিজ্ঞেস করে— ড্রাইভার কি বলল, বল?
ড্রাইভার বলল— এটা নাকি লকডাউনের বিয়া।
তুহিন নীরব। কিছু বলে না। মুতালেব আবার বলতে শুরু করে— ভাই, এইটা কোন কথা হইলো? আমরা দেখাশোনা করে রাখলাম এতদিন আর অন্যজন ভাইরাসের অজুহাতে নিয়ে যাচ্ছে নীরবে। কই থাইক্কা একেকটা আসে আর চিলের মত তুইলা নিয়ে যায়। এর আগেও পরি ভাবিরে নিলো। শান্তা ভাবিরেও নিয়ে গেলো। পাঁচতলায় থাকতো, কি যেন নাম…! ওই ভাবিটারেও নিলো। আপনি কিছু বলেন ভাই?
এখনোই বিয়া ভাইঙা দিই?
তুহিন আকাশে তাকায়। পুকুরপাড়ের গাছ গুলির দিকে তাকায়। পুকুরে ফুটে থাকা শ্বেতপদ্মগুলির দিকে তাকায়।
তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস নেয়। মুতালেবকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদে।

ঘণ্টাখানেক পর, তুহিন বলে— চল বিয়ে খেয়ে আসি।
মুতালেব বলে— ঠিক ভাই। কিছুই যখন নাই। বিয়ে খাওয়াটা মিস করা যায় না! চলেন ভাই।